স্কুলের পথে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র
পিঠের ব্যাগের ভারে খুদে পড়ুয়াদের শিরদাঁড়ার ক্ষতি হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে সর্বস্তরে। এই পরিস্থিতিতে স্কুলপড়ুয়াদের ব্যাগের ভার কমাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর। বিজ্ঞপ্তি জারি করে তারা জানিয়ে দিয়েছে, বই আনতে হবে দিনের রুটিন অনুযায়ী। দিনের রুটিনের বাইরে অন্য কোনও বই স্কুলব্যাগে রাখা যাবে না।
কোন শ্রেণিতে কত কিলোগ্রাম ওজনের বেশি বইয়ের ব্যাগ আনা যাবে না, তার তালিকা দেওয়া হয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে। ব্যাগের ভার কমানোর জন্য কিছু নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘সরকারি ও সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত সব স্কুলে দ্রুত এই নিয়মবিধি চালু করা হবে।’’
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনও পড়ুয়া বাড়িতে বই নিয়ে যাবে না। তাদের বই থাকবে স্কুলেই। বই রাখার জন্য স্কুলগুলিতে উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। ওই দুই শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কোনও ‘হোমওয়ার্ক’ বা বাড়ির কাজ দেওয়া যাবে না। অন্যান্য শ্রেণির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কোনও বই স্কুলব্যাগে রাখা যাবে না।
কোন শ্রেণিতে কত
শ্রেণি ওজন
প্রথম-দ্বিতীয় দেড় কেজির বেশি নয়
তৃতীয় থেকে পঞ্চম ৩ কেজির বেশি নয়
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম ৪.৫ কেজি পর্যন্ত
নবম থেকে দশম ৫ কেজি পর্যন্ত
সূত্র: স্কুলশিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তি
প্রশ্ন উঠছে, অনেক সময়েই পাঠ্যবই ছাড়াও পড়ুয়ারা রেফারেন্স বা সহায়ক বই পড়ে। সেই সব বইও সঙ্গে রাখে অনেকে। অভীকবাবু জানান, প্রতিটি শ্রেণির রেফারেন্স বই স্কুলের গ্রন্থাগারেই রাখতে হবে। পড়ুয়ারা সেখানে গিয়ে সেগুলো পড়বে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্কুলের শিক্ষকদের প্রতিটি শ্রেণিতে এমন ভাবে রুটিন করতে হবে, যাতে বইয়ের ব্যাগ ভারী না-হয়। খাতার সংখ্যা কমানোর জন্য আলাদা আলাদা বিষয়ের রাফ নোটবইয়ের বদলে একটি নোটবই রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুলশিক্ষা আধিকারিকদের মতে, ক্লাসে ক্লাসে পড়ুয়াদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনাচক্রের আয়োজন করতে হবে। নানা বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে পড়ুয়াদের নিয়ে। এর ফলে শুধু বইয়ের উপরে নির্ভরতা কমবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।
স্কুলব্যাগ যাতে পড়ুয়াবান্ধব হয়, সে-দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়েছে, এক কাঁধে বহনযোগ্য ঝোলা ব্যাগ চলবে না। কেননা তাতে এক কাঁধের উপরে চাপ পড়ে। দু’কাঁধে নেওয়া যায়, এমন ধরনের স্ট্র্যাপ বা পোক্ত ফিতে লাগানো ব্যাগ দিতে হবে পড়ুয়াদের। অভীকবাবু বলেন, ‘‘হঠাৎ হঠাৎ ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা করতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অতিরিক্ত বই বা খাতা যাতে ব্যাগের ভার কোনও ভাবেই বাড়িয়ে না-দেয়, সেই বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন ও সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।’’