সংবিধান দেশের সব নাগরিককে নিজের নিজের ধর্ম পালনের সমানাধিকার দিয়েছে। সেই ধর্মাচার পালনের ক্ষেত্রে কোনও শিক্ষককে সংবিধান-স্বীকৃত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় কি না, বুধবার সেই প্রশ্ন উঠল কলকাতা হাইকোর্টে।
হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পাণ্ডুয়ার বাসিন্দা ইকবাল হালদার চণ্ডীতলার মোনবেড় বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক। বছর চারেক আগে তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির কাছে আবেদন জানান, প্রতি শুক্রবার জুম্মার নমাজ পড়তে যাওয়ার জন্য বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত তাঁকে ছুটি দেওয়া হোক। তার জন্য তিনি বাড়তি ক্লাস নিতেও রাজি। পরিচালন সমিতি ২০১৪-য় ওই শিক্ষককে জানায়, এই আর্জি মঞ্জুর সম্ভব নয়।
তার পরে ওই শিক্ষক জেলা স্কুল পরিদর্শক, শিক্ষা দফতরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, শিক্ষাসচিবের দ্বারস্থ হন। তাতেও কাজ না-হওয়ায় হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। রাজ্য সরকার এবং স্কুল পরিচালন সমিতিকেও এই মামলায় যুক্ত করেন ওই শিক্ষক।
এ দিনের শুনানিতে ওই শিক্ষকের আইনজীবী এক্রামুল বারি জানান, সংবিধানের ২৫ ও ২৬ নম্বর ধারায় প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন ভাবে ধর্মপালনের অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার থেকে কোনও শিক্ষককে বঞ্চিত করা যায় কি? এক্রামুল জানান, তাঁর মক্কেল পড়ুয়াদের পঠনপাঠনে অবহেলা করে প্রতিদিন নমাজে যোগ দিতে চাইছেন না। শুক্রবার জুম্মার নমাজ পড়ানো হয় স্কুল থেকে কিছুটা দূরের একটি মসজিদে। সেই জন্যই তিনি এক ঘণ্টা কাজে ছাড় চাইছেন। রমজান মাসে রাজ্যের সব স্কুলে বিকেল ৪টের পরে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত শিক্ষকদের ছুটি মঞ্জুর করে রাজ্য সরকার অনেক দিন আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
ইকবালের কৌঁসুলি একই সঙ্গে জানান, ১৯২৫ সালের ‘গাইড টু ল অ্যান্ড অর্ডার এনফোর্স ইন বেঙ্গল’ আইনে শুক্রবার জুম্মার নমাজ পড়তে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে মুসলিম কর্মচারীদের। রাজ্য সরকার বা কোনও স্কুলের পরিচালন সমিতি তা অগ্রাহ্য করতে পারে না।
এ দিন স্কুল পরিচালন সমিতির পক্ষে কোনও কৌঁসুলি আদালতে ছিলেন না। রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী ভাস্কর বৈশ্য জানান, ওই শিক্ষকের আবেদন মঞ্জুর করা সম্ভব নয়। তাতে পঠনপাঠনের অসুবিধা হবে। এক্রামুল বিচারপতিকে অনুরোধ করেন, রাজ্য সরকারের আপত্তি যেন নথিভুক্ত করা হয়। বিচারপতি সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান, তাঁর বক্তব্য নথিভুক্ত করা হবে কি না। সরকারি কৌঁসুলি রাজি না-হওয়ায় বিচারপতি তাঁকে নির্দেশ দেন, অবিলম্বে রাজ্যের বক্তব্য জেনে আদালতকে জানাতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।