জেলাশাসক ও মহকুমাশাসকের দফতর চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি হলো ঝাড়গ্রামে। শহরের আবাসিক বিদ্যালয় একলব্য সংলগ্ন রাস্তার ২০০ মিটারের মধ্যেও সোমবার থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আগামী ১৬ অগস্ট পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম শহরের সত্যবানপল্লির এই আবাসিক বিদ্যালয় সম্পর্কে একাংশ অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই এই পদক্ষেপ। অভিভাবকদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রশাসন তদন্ত কমিটি গড়েছে। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি স্কুলের জনা কয়েক ছাত্রী পাঁচিল টপকে বেরিয়ে গিয়েছিল। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের ফিরিয়ে আনেন। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের দুই শিক্ষক হেনস্থা করেছিলেন বলেই তারা পাঁচিল টপকে প্রশাসনিক মহলে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল। এরপর ওই অভিভাবকেরা প্রশাসনে নালিশ জানান। স্কুলের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশেও অভিযোগ জানানো হয়। ওই দুই শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন।
২০০২ সালে চালু হওয়া ঝাড়গ্রামের সরকারি একলব্য স্কুলটি বছর দেড়েক আগেও একেবারে বেহাল ছিল। আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ টাকা যথাযথ খরচ হচ্ছে না বলে প্রায়ই অভিযোগ উঠত। বিদ্যালয়ের পরিবেশও ছিল অস্বাস্থ্যকর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ২০১৬-র জানুয়ারিতে স্কুল পরিচালনায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়। তারপর গত এক বছরে স্কুলের পরিকাঠামোয় প্রচুর উন্নতি হয়েছে। ক্লাসঘর থেকে হস্টেল, সর্বত্র আধুনিক সুযোগসুবিধা মিলছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফলও করছে ছাত্রছাত্রীরা। কয়েকজন প্রাক্তনী নরেন্দ্রপুর ও বেলুড়ের কলেজে স্নাতকস্তরে পড়ছেন। ‘জগদীশ বসু ন্যাশন্যাল সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চ’-এর নোডাল স্কুলের মর্যাদাও পেয়েছে ঝাড়গ্রামের একলব্য। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, অনিয়মে দাঁড়ি টেনে স্কুলের মানোন্নয়নের ফলে যাঁদের স্বার্থক্ষুণ্ণ হয়েছে, তাঁরাই স্কুলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সম্প্রতি কয়েকজন পড়ুয়ার অসংযত আচরণ দেখে ধমকেছিলেন এক শিক্ষক। তারপরই ওই ছাত্রীরা আচমকা পাঁচিল টপকে বেরিয়ে যায়। সেই থেকে স্কুলের সামনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু করেছেন একাংশ অভিভাবক।
ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক জলঘোলাও শুরু হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র টুইট করে একলব্য স্কুলের অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। প্রশ্ন উঠছে বাম আমলে ধুঁকতে থাকা স্কুলটির যেখানে এত উন্নয়ন হচ্ছে, সেখানে কেন সিপিএম স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব? সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক ডহরেশ্বর সেনের জবাব, ‘‘নিজে চোখে স্কুলের ভোলবদল দেখিনি। তবে শুনেছি, প্রশাসনিক রাশ আঁটোসাঁটো হয়েছে। আর আমরা তো স্কুলের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না।’’