হাসিন জাহান। ছবি: সংগৃহীত।
নিজেকে আড়াল করতে একের পর এক মিথ্যে বলে চলেছেন। মহম্মদ শামির বিরুদ্ধে আরও একবার, এ ভাবেই প্রকাশ্যে মুখ খুললেন তাঁর স্ত্রী। রবিবার নিজের আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে ফের সাংবাদিক সম্মেলন করেন হাসিন জাহান। হাসিনের মতে, সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন শামি।
অবৈধ সম্পর্ক এবং স্ত্রী নির্যাতনে অভিযুক্ত তারকা ক্রিকেটার নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছেন সংবাদ মাধ্যমে। শামির সেই সব বক্তব্য নিয়েই এ দিন পাল্টা অভিযোগ আনেন হাসিন। বলেন, “এই সব গোপন কাণ্ডকারখানা নিয়ে কেউ যখন অভিযুক্ত হয়, তখন নিজেকে আড়াল করতে মিথ্যে বলা ছাড়া আর উপায় থাকে না। শামি সেটাই করে চলেছে।” তাঁর দাবি, আরও তদন্ত এগোলেই প্রমাণ হবে যে শামির বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলি সঠিক।
তবে অন্যায় স্বীকার করে নিজেকে শুধরে নিলে শামির সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে তিনি যে এখনও আগ্রহী, তাও এ দিন বললেন হাসিন। হাসিনের কথায়— “আগে এই সব অভিযোগগুলো উঠলেই তা এড়িয়ে যেত। আমি যেই স্ক্রিন শটগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলাম, তার পর ওর টনক নড়ল। শামি যদি সত্যিই নিজেকে শোধরাতে চায়, এবং সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী হয়, তবে আমি ভেবে দেখব।”
আরও পড়ুন: হাসিনের সামনে ফের লড়াই: প্রাক্তন স্বামী
আরও পড়ুন: ফরেন্সিক পরীক্ষা চাইলেন শামিও
সংবাদমাধ্যকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে শামি দাবি করেছেন, ভুল বোঝাবুঝি কাটিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখার চেষ্টা তিনিই বার বার করে গিয়েছেন। এই দাবিকেই মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হাসিন। তাঁর পাল্টা দাবি, “চার-পাঁচ মাস ধরে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা আমিই করছি। সংসার বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছি। আজও করছি। কিন্তু শামি কোনও সহযোগিতাই করছে না।”
টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনকে ফোনে না পাওয়ার যে যুক্তি শামি দিয়েছেন তা-ও উড়িয়ে দেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমার ফোন সব সময়ই খোলা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করার পর থেকে শামির কোনও ফোন আমি পাইনি। এমনকী আমার আইনজীবী ফোন করলেও তা ধরেনি।”
সংবাদ মাধ্যম কেন নিজে থেকে তাঁর তোলা অভিযোগগুলি নিয়ে তদন্ত করছে না, এ দিন সেই প্রশ্নও তুলেছেন হাসিন। “(দুবাইয়ের) হোটেলের নম্বর থেকে ঠিকানা, মিডিয়াকে আমি সব বিস্তারিত ভাবে দিয়েছি। আপনারা কেন নিজেরা তদন্ত না করে আমাকেই বার বার প্রশ্ন করে যাচ্ছেন...”— প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ক’দিন আগেই শামির বিরুদ্ধে যৌনকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ তুলেছিলেন স্ত্রী হাসিন জাহান। যাদবপুর থানায় মামলা হলেও ঘটনার তদন্ত করছে গোয়েন্দা বিভাগ। বৃহস্পতিবার হাসিন লালবাজারে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে শামি, তাঁর মা, বৌদি, বোনের বিরুদ্ধে ৪৯৮এ (বধূ নির্যাতন), ৩২৩ (মারধর), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ৫০৬ (হুমকি)এবং ৩২৮ (বিষ জাতীয় জিনিস খাইয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা) ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
শামির দাদা হাসিম আহমেদের বিরুদ্ধে ৩৭৬ ধারায় মামলা হয়েছে হাসিনকে ধর্ষণের অভিযোগে। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শামিদের উত্তরপ্রদেশের বাড়িতেও গোয়েন্দারা যেতে পারেন। শামির বাড়ি থেকে নেওয়া অডিও ক্লিপিংসগুলির ফরেন্সিক পরীক্ষা হবে বলে খবর। শামি নিজেও এ দিন ফরেন্সিক পরীক্ষার দাবি তুলেছেন। হাসিন পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট। তাঁর আইনজীবী জাকির হোসেন জানান,তদন্তকারীরা সমস্ত সাহায্য করছেন।
হাসিনের দাবি, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরার সময়ে লন্ডনবাসী জনৈক ‘মহম্মদ ভাই’ শামির মাধ্যমে দুবাইয়ে পাক নাগরিক আলিশবার কাছে বিশেষ কোনও জিনিস পাঠান। এই দাবির নেপথ্যে শামির বিরুদ্ধে দেশবিরোধী কাজে জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে বলে অনেকের মত। শামির দাবি, তিনি দেশবিরোধী কোনও কাজ করেননি। তাঁর দুবাইয়ের ভিসা ছিল না। হাসিন হিরের গয়না চেয়েছিলেন। তাই দুবাইয়ে নেমে ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা নেন। সেটা হাসিনকে জানানো হয়নি।