এক বৃদ্ধা পড়ে রয়েছেন রেল স্টেশনে, কাঁদছেন চরম অসহায়তায়, জানেন না শেষমেশ কোথায় যাবেন— এই ছবিটা আসলে আরও অনেক পুরনো ছবির কথা মনে করিয়ে দিল। এ রকম অজস্র ঘটনা ঘটছে আজকাল। সব থেকে বড় কথা, ব্যক্তিস্বার্থ বড় হয়ে উঠেছে আজকাল। বাবা এবং মা-ও গৌণ হয়ে উঠেছেন। ফলে সুনীতি হালদারের মতো ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
এই ধরনের ঘটনার পিছনে বাবা-মায়ের ভূমিকার কথাও অস্বীকার করা যায় না। তাঁদেরও কিছুটা দায় থাকে। যে ভাবে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা পাওয়ার কথা ছিল তা তারা পায়নি। মূল শিক্ষা তো বাড়ি থেকে হয়। ছোট থেকে মানুষ যে ভাবে বড় হয়, পূর্ণবয়স্ক হলেও সে সেটাই শেখে।
আমাদের কাছে ‘মা’ শব্দটা মন্ত্রের মতো ছিল। কিন্তু এখন মনে হয়, সে শব্দের অর্থটাই পাল্টে গিয়েছে। ‘মা’ শব্দের অর্থ এখন আমাদের কাছে বোঝা।
আরও পড়ুন, ফেলে রেখে গেল ছেলে! বাঘাযতীন স্টেশনে কাঁদছেন বৃদ্ধা মা
আসলে এর সঙ্গে এই শহরকে জোড়াটা ঠিক হবে না। শহরের মানসিকতা আগেও যা ছিল এখনও তা-ই আছে। এ রকম মানসিকতা ছিল আগেও। চট করে কেউ কারও ব্যাপারে মাথা ঘামাতে চায় না নানা ঝামেলার ভয়ে। এ শহর আগেও এ রকমই নির্লিপ্ত থেকেছে। দু’-চার জন ব্যতিক্রম আগেও ছিল, এখনও আছে।
আগে পাড়ার দাদারা ছোটদের অনেক রকম বেচাল দেখলে এগিয়ে এসে শাসন করতেন। কিন্তু সেটা এ শহরের পাড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বাইরে নয়। পাড়ার মধ্যে যে চরিত্র দেখতাম, বাইরে সেটা দেখা যেত না। ফলে, ব্যাপারটা এ রকম নয় যে, এই দাদারাই বাইরের কোনও ঝামেলায় চট করে মাথা গলিয়ে দিতেন।
তবে যাদের দেখে মনে হয়, তারা ‘ভ্রষ্ট’ হয়ে গেছে, সেই ‘ভ্রষ্ট’ ছেলেরাই কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে। ‘ভদ্রলোক’রা এগিয়ে আসে না।
বাঘা যতীন স্টেশনে পড়ে থাকা ওই বৃদ্ধার মতো আরও অনেক ঘটনাই তো দেখলাম। এর আগে প্রবীণ নাগরিকদের পারিবারিক হেনস্থার ঘটেনায় আদালত হস্তক্ষেপ করেছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, সংশ্লিষ্ট বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে পারিবারিক পুনর্বাসনের জন্য। কিন্তু কোর্টের এই নির্দেশ সত্ত্বেও মানসিকতার বদল ঘটানোটা সবচেয়ে বড় জরুরি। তা ছাড়া, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কোর্টে গিয়ে নিজেদের সম্মান আদায় করবেন। তাঁদের সম্মান রক্ষার জন্য সমাজটাকেও উপযোগী করে তুলতে হবে।