‘অশালীন’ ছবি ছড়ানোয় শো-কজ দুই ডাক্তারকে

অন্য জন সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন। তিনি ষাটোর্ধ্ব সন্দীপন গুপ্ত। অভিযোগ, প্রায় বছর খানেক আগে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব প্লাস্টিক সার্জন অব ইন্ডিয়া’র অধীনস্থ চিকিৎসকদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক মহিলা ও এক যুবকের নগ্ন ছবি পোস্ট করেছিলেন তাঁরা।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৩
Share:

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে চিঠি দিয়ে জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে কলকাতারই দুই প্লাস্টিক সার্জনের কাছ থেকে। অভিযোগ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাঁরা অশালীন ছবি পোস্ট করেছেন।

Advertisement

অভিযোগটি এসেছে মুম্বই থেকে। করেছেন সেখানকার আর এক প্লাস্টিক সার্জন। অভিযুক্ত দুই চিকিৎসকের মধ্যে এক জন সন্দীপ বসু এখন এসএসকেএম হাসপাতালে কর্মরত। বয়স প্রায় ৫০। অন্য জন সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন। তিনি ষাটোর্ধ্ব সন্দীপন গুপ্ত। অভিযোগ, প্রায় বছর খানেক আগে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব প্লাস্টিক সার্জন অব ইন্ডিয়া’র অধীনস্থ চিকিৎসকদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক মহিলা ও এক যুবকের নগ্ন ছবি পোস্ট করেছিলেন তাঁরা।

কতটা অশালীন এই ছবি? কেনই বা ওই ছবি পোস্ট করলেন দুই চিকিৎসক? সন্দীপনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, এক জন মহিলা রোগীর ক্যানসার হওয়ার পরে তাঁর স্তন পুনর্গঠন করেন তাঁর এক ছাত্রী। ধান ঝাড়াই মেশিনে প্রত্যন্ত গ্রামের এক যুবকের যৌনাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরে তা পুনর্গঠন করেন এক ছাত্র। ছাত্রছাত্রীর ভাল কাজের নির্দশন স্বরূপ এই দু’টি ছবি তিনি ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন।

Advertisement

যিনি অভিযোগ করেছেন, মুম্বইয়ের সেই প্লাস্টিক সার্জন অশোক গুপ্তও ওই গ্রুপের সদস্য। ওই ছবি দু’টি দেখে তিনিই অশালীনতার অভিযোগ করেন মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে। এই অভিযোগ তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-কেও করেছেন। সন্দীপনবাবু বলেন, ‘‘আমরা এই ধরনের ভাল কাজের কথা ও ছবি বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নালেও প্রকাশ করি। ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করার জন্যই সেটা করা হয়েছিল। সেগুলো কী করে অশালীন হয়!’’

রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিলও বা কী করে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দুই চিকিৎসকের কাছে জবাবদিহি চাইল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে চিকিৎসক মহল। আইনজীবী প্রবীর বসু বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোন চিকিৎসক কী পোস্ট করবেন, তা নিয়ে খবরদারি করার কথা মেডিক্যাল কাউন্সিলের রয়েছে বলে আমার জানা নেই। তা ছাড়া, যে দু’জনের ছবি দেওয়া হয়েছে তাঁদের মুখের ছবি নেই। ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ছবিগুলো পোস্ট করা হয়েছে। তা হলে কেন এত কড়া মনোভাব নিচ্ছে মেডিক্যাল কাউন্সিল?’’

মে়ডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা তো দুই চিকিৎসককে তাঁদের বক্তব্য জানানোর সুযোগ দিয়েছি। ওঁরা আগে জানান। তারপর দেখা হবে বিষয়টি মেডিক্যাল এথিক্সের আওতাধীন কি না।’’ কিন্তু, ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠানো ছবির উপরে এমন জবাবদিহি চাওয়ার এক্তিয়ার রয়েছে কাউন্সিলের? মানসবাবুর দাবি, ‘‘কোথাও তো একটা সীমা টানাও দরকার!’’

অভিযুক্ত দ্বিতীয় চিকিৎসক সন্দীপ বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘১৩ জুলাই চিঠি পেয়ে আমি তো আকাশ থেকে পড়েছি। আমি তো ওই গ্রুপেই নেই! তা হলেও কেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ! শুনেছি আমার নাম সন্দীপনবাবুর নামের কাছাকাছি বলেই নাকি ওই চিকিৎসক আমার নামটাও জুড়ে দিয়েছেন!’’

অভিযোগকারী মুম্বইয়ের ওই চিকিৎসক অশোক গুপ্তর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, তিনি বিদেশে রয়েছেন। ফোন বা ই-মেল করে তাঁর জবাব পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন