Health Services

অসুস্থ তরুণীর ‘কাঠগড়ায়’ স্বাস্থ্য পরিষেবা! 

তরুণীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সল্টলেকের আইবি ব্লকে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মাস ছয়েক আগে ঠিক কী ঘটেছিল তা না জেনে কিছু বলা সম্ভব নয়।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

লেকটাউনের বাসিন্দা অংশিতা রায় বছর তিনেক ধরে কিডনির অসুখের রোগী। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে সময়ে চিকিৎসা না-পাওয়ায় এখন তরুণীর দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। মেয়ের জন্য কিডনির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন বাবা-মা।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত মাস ছয়েক আগে। বেথুন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর বাবা অংশুমান রায় জানান, ‘অবস্ট্রাকটিভ ইউরোপ্যাথি’তে আক্রান্ত তাঁর মেয়ের প্রয়োজন হত বিশেষ ধরনের ক্যাথিটারের। যা মার্চে লকডাউনের সময় শত চেষ্টাতেও জোগাড় করতে পারেননি বাবা। তাঁর কথায়, ‘‘বড়বাজারের মেহতা বিল্ডিং থেকে যে আনব তারও উপায় নেই। সেই সময় করোনা সংক্রমণের জন্য মেহতা বিল্ডিং বন্ধ ছিল।’’ মা রাখী রায় জানান, প্রস্রাব না-হওয়ায় গত ২১ এপ্রিল তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য গাড়ি নিয়ে প্রথমে সল্টলেকের আইবি ব্লকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান তাঁর বাবা-মা।

রাখীদেবী বলেন, ‘‘দেড় ঘণ্টা জরুরি বিভাগে পর্যবেক্ষণে রাখার পরে বলল, বাড়ি নিয়ে যান। হাসপাতালের নেফ্রোলজিস্ট ফোনে কথা বলবেন। বিকালে মেয়ের অবস্থা আরও খারাপ হলে সেই নেফ্রোলজিস্টকে ফোন করি। কিন্তু উনি ফোনই ধরলেন না।’’ সেদিন রাতে বিধাননগর কমিশনারেটের কাছে অবস্থিত সল্টলেকেরই আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে যান অংশিতার বাবা-মা। সেখানে রিসেপশনেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

Advertisement

আরও পড়ুন: তৃণমূল থেকে তিন নেতাকে বহিষ্কার

আরও পড়ুন: ঝড় ঠেলেই সাফল্য নিটে, সব কৃতিত্ব মাকে দিচ্ছেন সৌরদীপ

অংশুমানের কথায়, ‘‘সল্টলেকের হাসপাতাল ফিরিয়ে দেওয়ার পরে একসময় বাইপাসে মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোথায় যাব, কী করব বুঝতে পারছিলাম না। মেয়ে আমার সিকেডি রোগী ছিল ঠিকই। কিন্তু ওই ঘটনার পরে এক ধাক্কায় ক্রনিক কিডনি ডিজ়িজ়ের ৫ নম্বর স্টেজে চলে গেল।’’

তরুণীর বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নেফ্রোলজি এবং ইউরোলজির চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রোগী ওই তরুণীর কিডনি প্রতিস্থাপন ছিল সময়ের অপেক্ষা। তবে লকডাউন এবং কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে রোগীর এ ধরনের হয়রানি মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনা হল, করোনা আবহে অংশিতাদের মতো অনেক রোগীকেই অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। ছ'মাস পরে অংশিতার কথা জানা গেল। অনেকে এখনও আড়ালেই রয়েছেন।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত এক পরিচিতের সাহায্যে ২১ এপ্রিল গভীর রাতে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল অংশিতাকে ভর্তি নিতে রাজি হয় ঠিকই। তবে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত পরদিন দুপুর পর্যন্ত কেউ তরুণীকে স্পর্শ করেননি বলে অভিযোগ। অংশিতার কথায়, ‘‘আমার পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেউ দেখতে আসেনি।’’ ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দ্রুত তরুণীর দু’টি কিডনিই প্রতিস্থাপন করতে হবে।

গত ছ’মাস ধরে সেই প্রস্তুতি নিয়ে চলেছেন অংশিতার বাবা-মা। মেয়েকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দেওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত বাবা। কিন্তু তার জন্য দু’জনের এইচএলএ (হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেনস) মিল হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গদাতার অপেক্ষায় থাকতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। সেই টাকা জোগাড় করা নিয়েও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে তরুণীর পরিবার। মা রাখী বলেন, ‘‘বেথুন কলেজ মেয়ের চিকিৎসার জন্য দেড় লক্ষ টাকা সাহায্য করেছে। কিন্তু আরও তো টাকার প্রয়োজন।’’ অংশিতা বলেন, ‘‘আমার তো কোভিডের উপসর্গ ছিল না। তাহলে কেন ভর্তি নিতে চাইছিল না!’’

তরুণীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সল্টলেকের আইবি ব্লকে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মাস ছয়েক আগে ঠিক কী ঘটেছিল তা না জেনে কিছু বলা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘ভিজিটিং কনসালট্যান্ট রোগী দেখতে না চাইলে হাসপাতালের খুব একটা করণীয় কিছু নেই। হাসপাতালে ক্যাথিটার থাকলে আমরা সাধারণত দিয়ে দিই। সে জন্য ঠিক কেমন শারীরিক অবস্থায় রোগী এসেছিল তা জানা জরুরি।’’ ভর্তির পরে রোগীকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত ফেলে রাখার অভিযোগ প্রসঙ্গে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন