বিজয়া দশমীর মাহাত্ম্য

দশেরা অর্থাৎ নবরাত্রি, এর প্রথম নয় দিন মা দুর্গাকে পুজো করা হয় নানা ভাবে। শক্তির আরাধনা চলতে থাকে। অতঃপর দশম দিনে মাকে বিশেষ ভাবে সম্মান জানানো হয়। তার পর মাকে বিসর্জন দেওয়া হয়।

Advertisement

জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:০০
Share:

আবার এসো মা..

বিজয়া দশমী আর দশেরা সম অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কেউ বলে দশেরা, কেউ দশহারা, কেউ বা বলে নবরাত্রি দুর্গোৎসব। দুর্গোৎসব হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রাচীন উৎসব। ভারতবর্ষে এই উৎসব আশ্বিন মাসে অর্থাৎ ইংরেজি মাসের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আয়োজিত হয়। শুক্ল পক্ষের প্রতিপদে শুরু হয়ে এই পুজো চলে দশমী পর্যন্ত। শুধুমাত্র ভারতেই নয়, বিদেশেও এই উৎসব পালিত হয়। নেপালে এই উৎসবটি জাতীয় উৎসব।

Advertisement

দশেরা অর্থাৎ নবরাত্রি, এর প্রথম নয় দিন মা দুর্গাকে পুজো করা হয় নানা ভাবে। শক্তির আরাধনা চলতে থাকে। অতঃপর দশম দিনে মাকে বিশেষ ভাবে সম্মান জানানো হয়। তার পর মাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। আসছে বছর আবার এসো, এই বলে তাঁকে আবাহন জানানো হয়। শুরু হয় সকল বিভেদ ভুলে একে অপরের সঙ্গে আলিঙ্গন করে মিষ্টিমুখ করা। দশমীর এই আনন্দ চলতে থাকে লক্ষীপুজো পর্যন্ত। সকলেই এই উপলক্ষে একতার মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়।

উপনিষদে আছ ‘মাতৃদেব ভব’। অর্থাৎ নারীই পরিবারের অভিভাবক। মাতৃজাতি তথা নারী জাতিকে সম্মান করা অবশ্য কর্তব্য। যখনই সংসারে কোনও সমস্যা আসে, নারী তার সকল শক্তি দিয়ে রক্ষা করে। মানবিকতা, ন্যায় বিচার, ভালবাসা, সেবা দিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করে। মা দুর্গার পুজোতে নারী জাতিও উদ্বুদ্ধ হয়। মা যেমন পরিবারকে সঙ্গে আনেন এবং শত্রু বিনাশ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন, তারাও তেমনই তাদের পরিবারকে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ রেখে সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।

Advertisement

নবগ্রহের যেমন নয়টি গ্রহ যথা রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু, ঠিক একই ভাবে মানুষের শরীরেও নবদ্বার আছে। যেমন দুই চক্ষু, দুই কর্ণ, দুই নাসিকা, মুখ, মলদ্বার, প্রস্রাব দ্বার। এই নবদ্বার যদি ঠিকঠাক চলে, তবেই মানুষ সুস্থ থাকবে।

নবরাত্রি মানে নয়টি রাত্রি, যা নয়টি গ্রহের পরিচালনায় ঠিক মতো চালিত করতে পারে। শুধুমাত্র দুর্গাপুজোর বাহ্যিক আড়ম্বরই নয়, মনের অন্তর থেকে দেবীকে পুজো করে প্রতিটা গ্রহের প্রভাবে যেন ঠিক ভাবে শরীর চালিত হয়, সেই প্রার্থনা করা।

ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে এই দুর্গোৎসব পালিত হয় বিভিন্ন ভাবে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, মহারাষ্ট্রের কয়েকটি জায়গায় নবরাত্রিতে রামের পুজো হয়। রামায়ণকে কেন্দ্র করে নাচ, গান, নাটক চলতে থাকে ন’দিন। অবশেষে দশেরার দিন রাবণের কুশপুত্তলিকা জ্বালানো হয়। সমস্ত ধ্বংসকারীর বিনাশ স্বরূপ এই পুত্তলিকা জ্বালানো হয়। বাংলা, অসম, ওড়িশায় দুর্গা আসেন সপরিবারে। দশমী দিন তিনি বিদায় নেন। আর মর্ত্যবাসী বলে, আবার এসো মা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement