উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ।
রাজ্যের ছ’টি মেডিক্যাল কলেজে স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠন চালু ও আসন বৃদ্ধি আটকে গেল। ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’-র (এমসিআই) পরামর্শ মেনে দেশের ১৪০টি মেডিক্যাল কলেজে ২০১৮-১৯ বর্ষে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠন চালু ও আসন বৃদ্ধি আটকানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ৬টি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যে চারটিই কলকাতায়।
হাসপাতালগুলি হল, যাদবপুর কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ, বেলেঘাটা বি সি রায় শিশু হাসপাতাল, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন, দুর্গাপুর আই কিউ সিটি, এসএসকেএম, ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে এখনও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে তারা এ খবর জেনেছেন, বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি।
তবে স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতরের কর্তারা নিজেদের ক্ষোভ লুকিয়ে রাখেননি। এমসিআই ও স্বাস্থ্য মন্ত্রক অহেতুক দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘কী জন্য কেন্দ্র অনুমতি দিচ্ছে না তার কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। শুধু একটা তালিকা তৈরি করে ফেলেছে। এটা তো ঠিক নয়। ত্রুটি কোথায় সেটা তো জানাতে হবে।’’
এসএসকেএম হাসপাতালের অধ্যক্ষ অজয় রায় জানিয়েছেন, তাঁরা কমিউনিটি মেডিসিনে এমডি শুরু করার এবং সাইকিয়াট্রিতে এমডি আসন ৪ থেকে বাড়িয়ে ১৪ করার আবেদন জানিয়েছিলেন, যা খারিজ হয়েছে। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের প্যাথোলজি, পেডিয়াট্রিক্স, রেসপিরেটরি মেডিসিনে এমডি চালু করা এবং গাইনি ও সার্জারিতে এমএস পাঠ্যক্রম চালুর আবেদন খারিজ হয়েছে। বি সি রায় হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক্সে এমডি-র আসন ৪টি থেকে বাড়িয়ে ৮টি করা এবং ট্রপিক্যালে রিজেনারেটিভ মেডিসিন ও ট্রান্সলেশন্যাল সায়েন্সে এমডি চালু আটকে দিয়েছে কেন্দ্র।
কয়েক মাস আগেই এমসিআই জানিয়েছিল, দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আকাল মেটাতে তারা নিয়মকানুনের ক্ষেত্রে অনেক নরম হচ্ছে। এমনকী, যে সব বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজগুলি স্নাতকোত্তরে আসন বাড়ানোর বা নতুন পাঠ্যক্রম চালুর আবেদন জানাবে না অনেক ক্ষেত্রে এমসিআই স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও তাদের অনুমতি দিয়ে দেবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে হল উল্টো। স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে ৪টি মেডিক্যাল কলেজের স্নাতকোত্তরে নতুন পাঠ্যক্রম চালু আটকে গেল। অনুমোদন মিললে প্রতি বছর প্রায় ৪০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাশ করে বেরোতেন। রাজ্যের আরও দু’টি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্নাতকোত্তরে নতুন আসনের অনুমোদনই দেওয়া হয়নি।
অন্য দিকে, এমসিআইয়ের এথিক্স কমিটির প্রধান ধ্রুবজ্যোতি বোহরার মন্তব্য, ‘‘এ বছর থেকেই অনুমতির ব্যাপারটা আমরা ‘ইউনিল্যাটারাল’ করেছিলাম। অর্থাৎ কলেজগুলি তাদের বিভিন্ন বিভাগের পরিকাঠামো সম্পর্কে যে তথ্য জানাবে তা খতিয়ে দেখে আমরা নিজে থেকে যেচেও বেশ কিছু স্নাতকোত্তর আসনের অনুমতি দিয়ে দিতে পারি। তার জন্য কলেজগুলির আবেদন করারও দরকার নেই। কিন্তু বহু কলেজ সেই পরিকাঠামোর প্রমাণই দিতে পারল না।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘মূলত শিক্ষক-চিকিৎসকের অভাবের জন্যই আমরা অনুমোদন দিতে পারিনি।’’ প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই চিকিৎসকের অভাবের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন।