Maoist

কলকাতার আরবান নকশালদের মধ্যেই লুকিয়ে পরবর্তী মাওবাদী নেতৃত্ব, দাবি গোয়েন্দাদের

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে অন্তত দশটি সংগঠনকে তাঁরা ‘শহুরে নকশাল’ বা মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে গোয়েন্দাদের দাবি— তার বাইরেও, সংগঠন আকারে নয়, বেশ কিছু যুবক যাঁরা আগে মাওবাদীদের বিভিন্ন প্রকাশ্য বা ‘মুখোশ’ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা এ বার সরাসরি সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:১২
Share:

এ মাসের গোড়াতেই এই শহুরে নকশালদের খুঁজতে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

শহুরে বা আরবান নকশালরাই এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ মোদী-মমতা দু’ই সরকারেরই। কারণ তাঁদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মাওবাদী সংগঠনের পরবর্তী নেতৃত্ব।

Advertisement

এ মাসের গোড়াতেই এই শহুরে নকশালদের খুঁজতে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আর সেই সূত্র ধরেই প্রাথমিক যে তথ্য উঠে আসছে, তাতে স্বস্তি পাচ্ছেন না কেন্দ্র-রাজ্য কোনও সরকারের গোয়েন্দারাই।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে অন্তত দশটি সংগঠনকে তাঁরা ‘শহুরে নকশাল’ বা মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে গোয়েন্দাদের দাবি— তার বাইরেও, সংগঠন আকারে নয়, বেশ কিছু যুবক যাঁরা আগে মাওবাদীদের বিভিন্ন প্রকাশ্য বা ‘মুখোশ’ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা এ বার সরাসরি সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এমনকি তাঁদের অনেকে পর্যায়ক্রমে ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী গেরিলা এলাকাতে গিয়ে ‘ফিল্ড ট্রেনিং’ও সেরে এসেছেন।

Advertisement

এই শিক্ষিত শহুরে যুবকদেরই গেরিলা জোনে জনজাতি ও দলিত মাওবাদী ক্যাডারদের নেতৃত্ব হিসেবে তুলে আনতে চাইছে মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্ব। আর এই গোটা পরিকল্পনার মাথা সিপিআই(মাওবাদী) সংগঠনের সেকন্ড ইন কমান্ড প্রশান্ত বসু ওরফে কিষাণদা। বাহাত্তর বছরের এই মাওবাদী নেতা সংগঠনের পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক ব্যুরোর দায়িত্বে। ওই ব্যুরোর অধীনেই পশ্চিমবঙ্গ। সম্প্রতি কিষানদা মাওবাদীদের পূর্বাঞ্চলীয় মুখপত্র লাল চিঙ্গারিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা শহরের শিক্ষিত, প্রগতিশীল যুবকদের আহ্বান জানিয়েছি তাঁরা যাতে সংগঠনে যোগ দেন। তাঁদেরকেই জল-জঙ্গল-জমিনের অধিকার নিয়ে লড়াই করা জনজাতি ও দলিত মানুষদের পাশে থাকতে হবে। তাঁদের নেতৃত্ব দিতে হবে।”

আরও পড়ুন, ‘মাকে কথা দিয়েছিলাম, মুখাগ্নি করব, করেছি! ছেলে ছাড়া কে করবে?’

ক’মাস আগেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশ এবং বিহার পুলিশের গোয়েন্দারা দাবি করেছিলেন, কিষানদা মারা গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর এই সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার প্রকাশ্যে আসার পর সেই গোয়েন্দারাও সংশয়ে। তবে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা যাঁকে রাজ্যের পক্ষ থেকে নকশাল দমন অভিযানের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি বলেন, “এই মূহূর্তে মাওবাদীদের পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরোর হাল খুব খারাপ। একাধিক প্রথম সারির নেতা হয় ধরা পড়েছেন নয়তো আত্মসমর্পণ করেছেন।”

কিষাণদাও তাঁর সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাঁদের ‘সেট-ব্যাক’ বা বড়সড় সাংগঠনিক ধাক্কা হয়েছে এই ক’বছরে। কিন্তু তাঁর কথায়, সেই ধাক্কা সামলাতেই শহরের শিক্ষিত ছাত্র যুবদের তাঁরা পরবর্তী নেতৃত্ব হিসাবে তুলে আনতে চাইছেন। কিষাণদা সেই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এই ছাত্র-যুবদের এক দিকে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, সঙ্গে তাঁদের গেরিলা এলাকায় কাজ করার জন্য হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” তিনি ওই প্রসঙ্গেই উল্লেখ করেন, “ওই রকম বেশ কয়েকজন নতুন নেতাকে খুব তাড়াতাড়িই সংগঠন পাবে বলে আশা করছি।”

আরও পড়ুন, রেললাইনে বসে ফোনে কথা, ট্রেনের ধাক্কায় নব দম্পতির মৃত্যু!

গোয়েন্দাদের দাবি, এ রকম কয়েক জন যুবকের নাম তাঁরা পাচ্ছেন যাঁরা ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক ‘ফিল্ড ট্রেনিং’ করে এসেছেন। রাজ্যের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, কিষানজি বা কোটেশ্বর রাওয়ের মৃত্যুর পর, কলকাতা বা রাজ্যের অন্যান্য শহরে যে মাওবাদী সংগঠন ছিল তা কার্যত মুছে গিয়েছিল। এক সময় যাদবপুরের প্রাক্তনী অভিষেক মুখোপাধ্যায় কলকাতা সিটি কমিটির দায়িত্বে ছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সেই মুছে যাওয়া সিটি কমিটি আবার সক্রিয় হয়েছে এবং পুনর্গঠিত হচ্ছে। উঠে আসছে নয়া নেতৃত্ব।

এই যুবকদের চিহ্নিত করাই গোয়েন্দাদের বড় চ্যালেঞ্জ। সূত্রের খবর, নানা বিষয়ে রাজ্য-কেন্দ্র টানাপড়েন থাকলেও, শহুরে নকশালদের নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে চাইছেন কেন্দ্র এবং রাজ্যের গোয়েন্দারা। সেই কারণে দু’পক্ষই সোমবার নবান্নে রাজনাথ সিংহের নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে এ বিষয়ে তথ্য আদান প্রদান করবেন।

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন