Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘মাকে কথা দিয়েছিলাম, মুখাগ্নি করব, করেছি! ছেলে ছাড়া কে করবে?’

অনিতার বোন অনুভা চক্রবর্তীর মনে পড়ে, দশ বছর আগে মালবাহী জাহাজের নাবিক কৃষ্ণের ফোন এসেছিল তাঁদের বাড়িতে। কৃষ্ণ তাঁকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন।

কৃষ্ণপ্রসাদ মান্নার হাতে পাতানো মা অনিতা চৌধুরীর ছবি। —নিজস্ব চিত্র

কৃষ্ণপ্রসাদ মান্নার হাতে পাতানো মা অনিতা চৌধুরীর ছবি। —নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৭
Share: Save:

কোনও রক্তের সম্পর্ক নেই তাঁদের। এই ছেলেকে গর্ভে ধরেননি মা। নেহাতই ভুল করে চলে আসা ফোনে পরিচয়। তবু সেই ছেলেই ‘মা’ বলতে অজ্ঞান। অসুস্থতার দিনগুলোয় পড়ে থেকে সেবা তো করেছেনই, মা মারা যাওয়ার পরে কাছা জড়িয়ে শেষ কাজটুকুও তিনিই করছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে বাড়ি বছর বত্রিশের কৃষ্ণপ্রসাদ মান্নার। নদিয়ার করিমপুর সেখান থেকে অনেক দূরে। কিন্তু দূরত্ব বাধা হয়নি। করিমপুরের নাটনায় অনিতা চৌধুরীর বোনের বাড়িতে এক দিন নেহাত ভুল করেই ফোন চলে গিয়েছিল কৃষ্ণের।

অনিতার বোন অনুভা চক্রবর্তীর মনে পড়ে, দশ বছর আগে মালবাহী জাহাজের নাবিক কৃষ্ণের ফোন এসেছিল তাঁদের বাড়িতে। কৃষ্ণ তাঁকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন। অনুভা তাঁকে বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে। কিন্তু আমার দিদি অনিতার কোনও সন্তান নেই। ওকেই বরং মা বলে ডেকো।’

আগেই নিজের সংসার ভেঙে গিয়েছে অনিতার। বিয়ে হলেও সন্তান হয়নি। তাঁকেই দায়ী করে সংসার ছেড়েছিলেন স্বামী। তার পর থেকে একাই থাকতেন। কৃষ্ণ তাঁকে একা ছাড়েনি। সবংয়ে তাঁর নিজের বাবা-মা আছেন। কিন্তু তিনি অনুভার কথা রেখেছিলেন। আর কৃষ্ণকে নিজের স্নেহের আঁচলে জড়িয়ে নিয়েছিলেন অনিতা। বাৎসল্য শতধারায় ঝরেছিল পাতানো ছেলের জন্য।

সময় গড়িয়েছে। বিয়ে করেছেন কৃষ্ণ। সবংয়ে অনুষ্ঠানের পর নাটনায় মায়ের কাছে এসে ছোট করে ফের বৌভাত করেছেন। মেয়ের অন্নপ্রাশনও বাদ যায়নি। কিন্তু কয়েক মাস আগে ক্যানসার ধরা পড়ে অনিতার। কৃষ্ণ ছুটি নিয়ে এসে তাঁকে প্রথমে নিয়ে যান রানাঘাটের একটি নার্সিংহোমে। তার পরে এনআরএসে। সেখান থেকে ৩ সেপ্টেম্বর নাটনার বাড়িতে ফেরেন অনিতা। ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রা সাঙ্গ হয়। শেষ দিনটা পর্যন্ত পাশে কৃষ্ণ। কাল, সোমবার শ্রাদ্ধ। অশৌচের কাছা গায়ে তিনি বলেন, ‘‘মাকে কথা দিয়েছিলাম, মুখাগ্নি করব। করেছি। ছেলে ছাড়া কে করবে?’’

দেখে-শুনে অবাক আত্মীয় থেকে পাড়াপড়শি সকলে। যে কালে নিজের বাবা-মায়ের জন্যও সামান্যটুকু করে না বহু ছেলেমেয়ে, সম্পত্তির লোভে মারধর করে, রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে চলে যায়, সেখানে পাতানো মায়ের জন্য এত? অনুভা বলেন, ‘‘এ রকম ছেলে আর ক’টাই বা হয়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Karimpur Death করিমপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE