Advertisement
E-Paper

২৪ ঘণ্টায় ওড়িশায় আক্রান্ত ৩২ বাঙালি শ্রমিক! বাংলায় ফিরছেন শতাধিক আতঙ্কিত

মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা, লালগোলা, ডোমকল ও জলঙ্গির মতো ব্লক থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ ভুবনেশ্বর, ভদ্রক বা বালেশ্বরে রাজমিস্ত্রি বা ফেরিওয়ালার কাজে যান।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০৭

—প্রতীকী চিত্র।

বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে ওড়িশার মাটি যেন এক বিভীষিকা হয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পড়শি রাজ্যে নতুন করে অন্তত ৩২ জন বাঙালি শ্রমিকের উপরে হামলার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। আক্রান্তদের মধ্যে সিংহভাগই মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা। ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বাঙালিদের উপরে অমানবিক অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ঘরমুখো হচ্ছেন শ্রমিকেরা।

মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা, লালগোলা, ডোমকল ও জলঙ্গির মতো ব্লক থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ ভুবনেশ্বর, ভদ্রক বা বালেশ্বরে রাজমিস্ত্রি বা ফেরিওয়ালার কাজে যান। সাম্প্রতিক ‘হিংসা’র কবলে পড়েছেন ভগবানগোলার কানাপুকুর সংলগ্ন গ্রামগুলির বাসিন্দারা।

অভিযোগ উঠেছে, ভুবনেশ্বরের চন্দ্রশেখরপুর এলাকায় রাতে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে শ্রমিকদের তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এমনকি, গোপনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো নৃশংস অত্যাচারের অভিযোগও উঠে আসছে।

আরও অভিযোগ, বর্তমানে শুধু কাজের জায়গা নয়, ট্রেন ধরার জন্য ভুবনেশ্বর, বালেশ্বর বা ভদ্রক স্টেশনে পৌঁছোতে গিয়েও আক্রান্ত হচ্ছেন শ্রমিকেরা। ওড়িশার গ্রামে-গঞ্জে যাঁরা জামাকাপড় বা তৈজসপত্র ফেরি করতে বেরোচ্ছেন, তাঁদের পথ আটকে পরিচয়পত্র চাওয়া হচ্ছে এবং বাংলা ভাষায় কথা বললেই জুটছে অকথ্য মার। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভদ্রক এলাকায় কাজ করতে গিয়েছিলেন, ডোমকল ও জলঙ্গি ব্লকের এমন অন্তত ২৫ জন শ্রমিকের খোঁজ মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে জেলায় ফিরতে মরিয়া শ্রমিকেরা ওড়িশার বিভিন্ন স্টেশনে কার্যত আত্মগোপন করে আছেন। ভগবানগোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্রমিক আমিনুল ইসলামের কথায়, ‘‘ওরা শুধু আমাদের ভাষাটুকু শুনেই হিংস্র হয়ে উঠছে। পুলিশ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা নীরব দর্শক হয়ে থাকছেন।’’ এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিলেও আতঙ্ক কাটছে না সীমান্ত জেলা মুর্শিদাবাদের কয়েক হাজার পরিবারের।

মুর্শিদাবাদ জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ জীবিকার তাগিদে ওড়িশার বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করেন। ডোমকল ব্লক থেকে প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ মানুষ মূলত রাজমিস্ত্রি ও নির্মাণের কাজ করছেন পড়শি রাজ্যে। জলঙ্গি ব্লক থেকে আনুমানিক প্রায় হাজারখানেক শ্রমিক ওড়িশার পোল্ট্রি ফার্মের কাজে যুক্ত। বিড়িশিল্পের এলাকা হিসাবে পরিচিত শমসেরগঞ্জ ব্লক থেকে প্রায় ২২০০ মানুষ ওড়িশার বিভিন্ন প্লাইউড ফ্যাক্টরিতে ও ঢালাইয়ের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া সুতি-১ ও ২ ব্লক থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৩ হাজার শ্রমিক রাস্তা তৈরি ও সেন্টারিংয়ের কাজে কর্মরত আছেন। এ ছাড়াও গোটা জেলা থেকে হাজার পাঁচেকেরও বেশি মানুষ ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করেন।

ভুবনেশ্বরে একটি বহুতল আবাসন প্রকল্পে প্রধান রাজমিস্ত্রি হিসাবে কাজ করছেন আরমান শেখ। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিমুহূর্তে আতঙ্কে দিন কাটছে। যাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছি, তারাও বাঁকা নজরে দেখছে। এত লোক নিয়ে রাতারাতি পালিয়ে গেলেও সেটা ভাল দেখায় না। কখন যে নতুন করে আক্রমণ হবে সেই ভয়ে আছি।’’ জলঙ্গি ব্লকের মোস্তাফা কামাল কটকের একটি বড় পোল্ট্রি খামারে তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে কাজ করেন। বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরতে এসে বালেশ্বর স্টেশনে আক্রান্ত হয়েছেন তিনিও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মুর্শিদাবাদ আর সংখ্যালঘু এই দু’টি শব্দ একসঙ্গে শুনলেই শত প্রমাণ দেখালেও বাংলাদেশি তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। টাকাপয়সা সব ফেলে দিয়ে ট্রেন ধরে বাড়ি চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। রাত্রিবেলা স্টেশনে ঢুকে ৮-১০ জন লাঠি দিয়ে বেধড়ক মার মেরেছে।’’

শমসেরগঞ্জ থেকে যাওয়া সাহিদুল ইসলাম ঝারসুগুডার একটি প্লাইউড কারখানায় মেশিন অপারেটর হিসাবে নিজের জীবিকা নির্বাহ করছেন। সুতি ব্লকের কবির হোসেন বর্তমানে রৌরকেল্লায় রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে লেবার কনট্রাক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন। এঁদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা প্রায় একই।

Migrant Labours Workers Odisha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy