বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকে সাংগঠনিক বিষয়ের পাশাপাশি ভোট-প্রস্তুতিতে জোর দিচ্ছে রাজ্য বিজেপি। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ২৯৪টি আসনে প্রার্থী হতে চেয়ে হাজারের বেশি জীবনপঞ্জি দলের কাছে জমা পড়েছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ভূপেন্দ্র যাদব এবং তাঁর সহকারী বিপ্লব দেব রাজ্য-নেতৃত্বের সঙ্গে প্রার্থী বাছাই সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করছেন। সেই সূত্রেই প্রার্থী বদল, প্রার্থী বাছাইয়ের কৌশল নিয়ে চর্চা রয়েছে বিজেপির অন্দরে।
সূত্রের খবর, গত বারের মতো এ বার নেতাদের হাতে নয়, বরং রাজ্য বিজেপি দফতরে অফিস সম্পাদকের কাছে হাজারের বেশি জীবনপঞ্জি জমা পড়েছে। অমিত শাহ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পরে বিভিন্ন পেশাদার সমীক্ষক সংস্থার থেকে বাস্তব পরিস্থিতি সংক্রান্ত রিপোর্ট নেওয়ার চল হয়েছে। শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরে নজর রাখা হয় বিভিন্ন এজেন্সির রিপোর্টেও। তার ভিত্তিতে নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া চলছে। বিধানসভা-ভিত্তিক সম্ভাব্য অন্তত তিন জন প্রার্থীর নাম সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে পাঠাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সমীক্ষক সংস্থা। নজর রাখা হচ্ছে দলের জেলা ও রাজ্য স্তরের রিপোর্টেও। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, প্রার্থী তালিকায় অন্য দল থেকে আসা এবং তারকা মুখ যথা সম্ভব কম রাখা হবে। পুরনো, পরিচিত ও বিতর্কহীন মুখকে গুরুত্ব দিচ্ছে সঙ্ঘ।
সূত্রের দাবি, জনপ্রতিনিধিদের কাজকর্ম-সহ নানা বিষয়ে সমীক্ষক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিধায়কদের অনেকেরই বাদ যাওয়া, আসন বদলের সম্ভাবনা আছে। বাদের তালিকায় উত্তরবঙ্গে নাটাবাড়ি, কোচবিহার দক্ষিণ, শীতলকুচি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, গাজল, ইংরেজবাজার, কালিয়াগঞ্জের বিধায়কেরা থাকতে পারেন। বহরমপুরের আসন থেকে বিধায়ক সুব্রত মৈত্রের বদলে প্রার্থী হতে পারেন এক চিকিৎসক অথবা চলচ্চিত্র জগতের এক পরিচিত মুখ। বাদ-তালিকায় থাকতে পারেন কল্যাণী, পূর্ব মেদিনীপুরে খেজুরি এবং কাঁথি উত্তরের বিধায়কেরাও। পাশাপাশি, বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদারের আসন বদলে এ বার হাবড়া হওয়া নিয়ে জল্পনা রয়েছে। এই আবহে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অবশ্য বক্তব্য, “প্রতীক দেখে ভোট হবে। প্রার্থী দেখে নয়। নেতা এক জনই, নরেন্দ্র মোদী।”
বিজেপির একাংশের দাবি, খড়্গপুরে লড়তে চেয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু বর্তমান বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে সরানো হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে দলের অন্দরে। বাগদায় রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর প্রাক্তন আপ্তসহায়ক গোপাল গয়ালি, হলদিয়ায় রাজ্য বিজেপির তথ্য-প্রযুক্তি শাখার ইনচার্জ জয় মল্লিকদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে জল্পনা আছে।
গত বার হেরে যাওয়া জগদ্দল, শান্তিপুরেও আসতে পারে নতুন মুখ। সূত্রের খবর, ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিংহের জায়গায় তাঁর বাবা অর্জুন সিংহ প্রার্থী হতে পারেন। তেমন হলে পবনকে সরে যেতে হবে শিল্পাঞ্চলের অন্য কোনও আসনে। উত্তর কলকাতার কোনও কেন্দ্রে তাপস রায়, বরানগরে সজল ঘোষ, ব্যারাকপুরে কৌস্তভ বাগচীদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে চর্চা রয়েছে। হুগলির প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও ফের বিধানসভায় প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, তবে ওই লোকসভা এলাকার বাইরের কোনও আসন থেকে। প্রথা ভেঙে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ উত্তরবঙ্গের একটি ‘নিরাপদ আসন’ থেকে লড়তে পারেন বলে চর্চা রয়েছে। তবে ওই আসনের বর্তমান বিধায়ক শুভেন্দু এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ।
রাজ্য বিজেপির এক নেতা অবশ্য বলেছেন, “২০২১-এর তুলনায় এ বার পরিস্থিতি কঠিন। নির্দিষ্ট সমীক্ষার ভিত্তিতে সময় অনুযায়ী, পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা হচ্ছে। এসআইআর-এর সুফল আমরা পাব।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)