বিহার-জয়ে নেপথ্যে তিনিই ছিলেন সেনাপতি। পশ্চিমবঙ্গ স্বাভাবিক ভাবেই এখন তাঁর লক্ষ্য। তবে অঙ্গ আর বঙ্গ যে এক নয়, তা বুঝেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে সংগঠনের দিকে বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে অমিত শাহকে।
সূচি অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত সব এগোলে আজ, সোমবার রাতে কলকাতায় পৌঁছে যাওয়ার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। রাত থেকে শুরু করে বুধবার পর্যন্ত বিজেপির নেতা ও পদাধিকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের কথা রয়েছে তাঁর। এই সফরে শাহকে নিয়ে জনসভা করানোর জন্য তৈরিই ছিল বঙ্গ বিজেপি। সূত্রের খবর, বর্ষশেযের এই সময়ে সংগঠনকে গোছানোর জন্য দলীয় আসরকেই অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছেন শাহ। তাঁদের যুক্তি, অল্প দিন আগেই নদিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা ছিল। জানুয়ারি থেকে বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত লাগাতার প্রকাশ্য কর্মসূচি চলতেই থাকবে। তা ছাড়া, সদ্যসমাপ্ত অধিবেশনে লোকসভায় ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে বিতর্কে লম্বা বক্তৃতা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই। এমতাবস্থায় সাংগঠনিক প্রস্তুতির খোঁজখবর নেওয়ার উপরেই গুরুত্ব দিচ্ছেন শাহ।
কলকাতায় এসে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি রাজ্য থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরিকল্পনা রয়েছে শাহের। যা সচরাচর এখানে দেখা যায়নি। এসআইআর এবং সার্বিক রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পরিস্থি্তি নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মুখোমুখি বসে তথ্য নেওয়া এবং মত বিনিময় চান শাহ। দিল্লিতে ইতিমধ্যেই দলের নেতাদের শাহ বার্তা দিয়ে রেখেছেন, এসআইআর একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া, যা সম্পন্ন করছে নির্বাচন কমিশন। এই নিয়ে বিজেপি নেতারা নানা রকম দাবি ও মন্তব্য করতে থাকলে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের ‘ফাঁদে’ই পা দেওয়া হয়। বিরোধীরা তাতে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, কমিশনের কথা বিজেপি বলছে! তবে পশ্চিমবঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ছাড়া বিজেপি নেতাদের মধ্যে তেমন ‘সংযম’ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না! সূত্রের ইঙ্গিত, এই প্রশ্নে ফের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন শাহ।
তবে এই মুহূর্তে বিজেপির কাছে বড় শিরঃপীড়ার কারণ হয়েছেন মতুয়ারা। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মোদী-শাহ থেকে শুরু করে রাজ্য বিজেপির নেতারা সব সময়েই সরব। কিন্তু মতুয়া-সহ নমঃশূদ্র তথা হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের সমস্যা মেটেনি, উল্টে প্রয়োজনীয় নথির অভাবে তাঁদের অনেকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মতুয়া ঠাকুরবাড়ির দুই ভাই, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ও বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের নানা কার্যকলাপে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে বলে বিজেপির অন্দরেই একাংশের মত। সাংসদ, বিধায়কদের বৈঠকে ঠাকুর-ভাইয়েরা শাহের মুখোমুখি হতে পারবেন। তার পাশাপাশি মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ করিয়ে কোনও আশ্বাসের ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেই চেষ্টাও জারি আছে। তবে বিজেপি নেতাদের একাংশই মানছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) জমা পড়া আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির (ফাস্ট ট্র্যাক) বন্দোবস্ত ছাড়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এখন খুব বেশি কিছু করারও নেই। প্রসঙ্গত, বিধাননগরে বিজেপির নতুন দফতর এবং বিধাননগরেরই একটি অভিজাত হোটেলে শাহের বৈঠকের জন্য দফায় দফায় সময় রাখা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বার থাকতে পারেন নিউ টাউনের অন্য একটি হোটেলে।
বিজেপি সূত্রের ইঙ্গিত, বিহারের মতোই এ রাজ্যের বিধানসভা আসনগুলিকে পাঁচ বা ছয় অঞ্চলে ভাগ করে সাংগঠনিক ‘জ়োন’ তৈরি করে ভোটের প্রস্তুতিতে জোর দেওয়া হতে পারে। নির্বাচনী কৌশলের ক্ষেত্রে শাহের ‘চোখ-কান’ হিসেবে কাজ করবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। যিনি ইতিমধ্যে সব ‘জ়োন’ নিজে ঘুরে ফেলেছেন। ভোটের আগে শাহ আবার ‘জ়োন’ ধরে ধরে আলাদা বৈঠক করতে পারেন, অনেকটা বিহারের কায়দায়। তবে কলকাতার সঙ্গে সংলগ্ন দুই পরগনা ও হাওড়ার বড় অংশে সাংগঠনিক দুর্বলতা দলকে ভাবাচ্ছে বলে বিজেপির একটি সূত্রের খবর। দলের এক শীর্ষ নেতার মত, ‘‘বিহারে আমাদের জমি এবং সংগঠন আগে থেকেই ছিল। এখানে তেমন নয়। তবে গত বছরের লোকসভার কায়দায় ভোট হলে আমাদের পক্ষে অনেকটাই এগোনো সম্ভব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)