ইদের শুভেচ্ছা-বার্তায় ভাঙছে ভুল ধারণা

ইদের শুভেচ্ছা-বার্তায় এ বার যোগ হল এই কথাটাও। মানে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পটভূমিতেই কথাগুলো ফের দাগিয়ে দেওয়া হল। চিরকেলে ‘ইদ মুবারক’-বার্তার বাইরে তা-ই স্মার্টফোনে ঘুরছে চিলতে ভাষ্য বা ‘অডিয়ো-ক্লিপ’।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০৪:৫৫
Share:

ইদ মুবারক’-বার্তায় স্মার্টফোনে ঘুরছে চিলতে ভাষ্য বা ‘অডিয়ো-ক্লিপ’।

পড়শিদের সংস্কৃতির ফারাক থাকে। কিন্তু পরস্পরকে বিশ্বাস করে যুগ যুগ ধরে পাশে থাকার জোরটাই শেষ কথা বলে।

Advertisement

ইদের শুভেচ্ছা-বার্তায় এ বার যোগ হল এই কথাটাও। মানে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পটভূমিতেই কথাগুলো ফের দাগিয়ে দেওয়া হল। চিরকেলে ‘ইদ মুবারক’-বার্তার বাইরে তা-ই স্মার্টফোনে ঘুরছে চিলতে ভাষ্য বা ‘অডিয়ো-ক্লিপ’। হয়তো বা ছোট্ট নাটিকা বা ‘স্কিট’-এর আদলে শুনিয়ে দেওয়া হচ্ছে জরুরি কথা। পারস্পরিক সৌহার্দ্যের বার্তা ছড়াতে এককাট্টা কলকাতার কিছু বন্ধু এই অভিনব ‘মেসেজ’কে হাতিয়ার করছেন।

কয়েক দিন আগেই বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষ ছড়াতে ইদের ছুটি নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তির আদলে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতে তোলপাড় হয় পুলিশ-প্রশাসন। এ বার ভিন্‌ধর্মীদের পারস্পরিক ভুল ধারণার দেওয়াল ভাঙতে সরব হল ইদের-ই শুভেচ্ছা-বার্তা। একটি ‘মেসেজ’ যেমন, দুই হিন্দু বন্ধুর সংলাপে আর এক মুসলিম বন্ধুর বাড়ি ইদের নেমন্তন্ন খেতে যাওয়ার গল্প বলছে। এক বন্ধু খানিক দ্বিধায়, যাওয়া ঠিক হবে তো! আর এক বন্ধু উৎসবের টানে অধীর। দু’জনের সংলাপে পিছু হটছে নানা ভুল ধারণা। ‘‘সত্যিই আমাদের হিন্দু-মুসলিমের পরস্পরের সংস্কৃতি জানায় এখনও খামতি আছে। উৎসবের ‘মেসেজ’ তা দূর করার চেষ্টা করলে তো ভালই!’’— বলছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ময়মনসিংহ বা বদরপুরে সাবেক পুববঙ্গে তাঁর ছোটবেলায় কয়েক জন মুসলিম বন্ধুর স্মৃতি আছে, যাঁরা সরস্বতী পুজোর আগে কুল না-খেয়ে উৎসবের
জন্য অপেক্ষা করতেন। প্যান্ডেল বাঁধা বা প্রসাদ খেতে ওই অহিন্দুদের উৎসাহও কিছু কম ছিল না, শনিবার শোনালেন শীর্ষেন্দু।

Advertisement

বিভিন্ন বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া ইদের একটি ‘মেসেজ’ এ বার সাহিত্যিক-সমাজকর্মী জয়া মিত্রকেও ভাবাচ্ছে। তিনি বলছেন, ‘‘এই তো সে দিন ইফতারের একটা নেমন্তন্নে যাচ্ছি শুনে আমার এক উচ্চ শিক্ষিত বন্ধুই কত অদ্ভুত প্রশ্ন করলেন! এগুলো শুধরোন দরকার।’’ গ্রামবাংলার মুসলিমেরা যে উর্দু বোঝেন না, বাংলাই বলেন— তা-ও অনেকে জানেন না! সেটাও মনে করিয়ে দিচ্ছে শুভেচ্ছা-বার্তাটি।

জয়ার কাছে আসা ওই ‘মেসেজ’ বলছে, অমুক ধর্মের লোকেরা খালি নিষিদ্ধ মাংস খায় বা অমুকদের জনসংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে গোছের ধারণাগুলো ঘেন্না ছড়াতেই রটানো হয়। অথচ বাস্তবে, এ দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ২১০০ সালেও কোনও ভাবে ১৭-২১ শতাংশের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ইদানীং দূর বিদেশের হিংসা-মারমারির ছবি হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকে ছড়িয়েও এ দেশে অশান্তি বাধাতে সক্রিয় কয়েকটি মহল। ওই ধরনের সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়েই ইদে সদর্থক ‘মেসেজ’ও ছড়ানো হচ্ছে। এই উদ্যোগের শরিক সমাজকর্মী সাবির আহমেদ বলছিলেন, ‘‘উৎসবের মেসেজেও সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে। আমরা নানা উপলক্ষে মুসলিম বা হিন্দু সকলকেই পড়শিদের প্রতি সংবেদনশীল করে তুলতে চাইছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন