Rabindranath Tagore

Jalpaiguri: মৃতার খাতার পাতায় পাতায় রবি-গানের প্রাণ

একটি খাতার পৃষ্ঠায় লেখা কবে কোন বিষয় কতক্ষণ পড়বে তার সূচি। কতক্ষণ মোবাইলে গান শুনবে, কখন পড়তে বসবে তাও লেখা রয়েছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০৮
Share:

ছাত্রীটির খাতার পাতায় লেখা রবীন্দ্রনাথের সেই গান। নিজস্ব চিত্র।

যে নাবালিকা দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে জানতে চেয়েছিল, সে আর আদৌ বাঁচবে কিনা, সেই মেয়েটিই স্কুলের ইংরেজি খাতা একদিন লিখেছিল, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে/ মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ।’ মৃত্যুর আগের রাত পর্যন্তও এই আকূতিই ছিল মেয়েটির গলায়। সোমবার ভোরে সব শেষ। সন্ধেয় তার প্রাণহীন দেহ শোয়ানো ছিল বাড়ির উঠোনে, ঠিক তার পড়ার ঘরের পাশেই।

তদন্তের স্বার্থে নাবালিকাটিকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের তরফে মঙ্গলবার মূল অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে জেলা আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। জেলা আদালত তিন দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। নাবালিকার বাবা বলেছেন, “মেয়ের বিচারের জন্য আইনে ভরসা রাখছি।” নাবালিকার বাবা আরও জানান, মেয়ের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য কিছু দিনের মধ্যেই আবেদন করবেন তিনি। যদিও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল সূত্রের খবর, দু’একদিনের মধ্যে রিপোর্ট পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

এ দিন ছাত্রটির পড়ার ঘরে বসেই তার মা চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, “মেয়েটা দিনের বেশির ভাগ সময়টাই বইপত্র নিয়েই থাকত।” পরম যত্নে মেয়ের সেইসব বই-খাতা প্রশ্ন উত্তরের মাঝে হঠাৎ বেরিয়ে এল একটি খাতা, যেখানে হাতে লেখা ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’ নীচে লেখা পুরো গানটি। স্কুল থেকে দেওয়া অন্য একটি খাতায় লেখা একটি কবিতার কিছু পঙ্‌ক্তি— ‘শেষ আর হল কই/তার জন্য মায়া হয় না/... এ ভাবে আর কতদিন/যতদিন যায়/অভিশাপ দিয়েছো কখনো/ভাল থেকো বলেছিলাম তবে/মন কি বলছে জানি না।...’ খাতার পাতা উল্টে উল্টে মেয়ের লেখা সেইসব কথার উপর হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিলেন মা।

Advertisement

একটি খাতার পৃষ্ঠায় লেখা কবে কোন বিষয় কতক্ষণ পড়বে তার সূচি। কতক্ষণ মোবাইলে গান শুনবে, কখন পড়তে বসবে তাও লেখা রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেই মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠার পরে পিসির বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দিনকয়েক আগে মেয়েটি বাড়ি ফিরেছিল ‘কন্যাশ্রী’র আবেদন করতে। স্কুলে গিয়ে সেই আবেদনপত্রে স্বাক্ষরও করে এসেছিল। স্কুলের সহপাঠীদের বক্তব্য, গড়পড়তা ভালই ফল করত ছাত্রীটি। গান-কবিতা খুব ভালবাসত সে।

ছাত্রীটির খাতার একটি পৃষ্ঠা ভাঁজ করা ছিল। কিছু লেখা ছিল না। ফাঁকা সেই পৃষ্ঠায় কী কথা লিখবে ভেবেছিল ছাত্রীটি, কেউ আর জানবে না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন