সৌম্যজিতের বিরুদ্ধে শুরু পুলিশি তদন্ত

তাঁর অভিযোগ, কলকাতার বাড়িতে সৌম্যজিৎ তাঁর কিছু পরিচিত লোক দিয়ে জোর করে গর্ভপাত করায়। সেখানে ছিলেন না কোনও চিকিৎসক। গুরুতর এই সমস্ত অভিযোগেরই তদন্ত শুরু করেছে উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৪
Share:

সৌম্যজিৎ ঘোষ।

বাংলার টেবল টেনিস তারকা সৌম্যজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে বারাসতের তরুণীর গুরুতর অভিযোগ নিয়ে চাঞ্চল্য বাড়ছে। নাবালিকা ওই তরুণীর অভিযোগ, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের পর দিন সৌম্যজিৎ শুধু তাঁকে ধর্ষণই করেননি, তার গর্ভে সন্তান আসার পরে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে বাড়িতেই গর্ভপাত করিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, কলকাতার বাড়িতে সৌম্যজিৎ তাঁর কিছু পরিচিত লোক দিয়ে জোর করে গর্ভপাত করায়। সেখানে ছিলেন না কোনও চিকিৎসক। গুরুতর এই সমস্ত অভিযোগেরই তদন্ত শুরু করেছে উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ।

Advertisement

বুধবারই বারাসত থানায় সৌম্যজিতের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস, ধর্ষণ, প্রতারণার অভিযোগ আনেন ওই তরুণী। কমনওয়েলথ গেমসে খেলার জন্য সৌম্যজিৎ এখন জার্মানিতে। তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মিথ্যা বলেও জানিয়েছেন সৌম্যজিৎ। তাতেই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই তরুণী। বৃহস্পতিবার সকালে বারাসতের বাড়িতে বসে সৌম্যজিতের সঙ্গে নানারকম ঘনিষ্ঠতার ছবি এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে ও এসএমএস-এ দু’জনের ঘনিষ্ঠ কথোপকথন তুলে ধরেন। তরুণীর দাবি, তাঁকে হুমকিও দিয়েছেন সৌম্যজিৎ। যা নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগেও জানিয়েছেন তিনি।

ঘটনার তদন্তে নেমে সৌম্যজিতের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রতারণা ছাড়াও নাবালিকা নিগ্রহ আইন, পকসোতে মামলা করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে নাবালিকা নিগ্রহ আইনে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।’’

Advertisement

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, যে-হেতু ওই তরুণীর দাবি মতো ধর্ষণের ঘটনাটি বেশ কিছু দিন আগের, তাই ডাক্তারি পরীক্ষা হলেও প্রমাণ মেলা শক্ত। তবে অভিযোগটি পকসো ধারার মধ্যে ফেলা হয়েছে বলে ওই নাবালিকার অভিযোগই এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এ দিন ওই নাবালিকার গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়। নাবালিকা বলেছেন, ‘‘তাঁর যে ক্ষতি হয়েছে তার বিচার চান তিনি।’’ সৌম্যজিৎ স্বীকার করে নিয়েছেন, অভিযোগ করা তরুণীকে তিনি চেনেন। কমনওয়েলথ গেমসের জন্য প্রস্তুতি নিতে সৌম্যজিৎ এখন জার্মানিতে ট্রেনিং করছেন। সেখান থেকেই ফোনে বলেন, ‘‘আমার নামে যা অভিযোগ করা হয়েছে, সব মিথ্যা। ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে কোনও যোগাযোগই নেই। আমাকে বিদেশে খেলতে যেতে দিতে চাইত না। সম্পর্ক আর থাকেনি। এখন ব্ল্যাকমেল করছে।’’ যা শুনে অভিযোগ করা নাবালিকা বলেছেন, ‘‘তাহলে যে কোনও টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধেই তো আমি অভিযোগ আনতে পারতাম। সৌম্যজিৎ কেন?’’

বারাসতের তরুণীর দাবি, রাষ্টপতিভবনে অর্জুন পুরস্কার নেওয়ার সময়ও সৌম্যজিতের সঙ্গেও ছিলেন তিনি। সেই ছবি ছাড়াও নানা জায়গায় ঘনিষ্ঠ ছবি, মোবাইলে নানা কথোপকথন দেখিয়ে তাঁর আরও দাবি, ‘‘প্রথমে বিয়ের কথা বলে ও আমার সঙ্গে দিনের পর দিন শারীরিক সম্পর্ক করেছে। দুই বাড়ির তরফে বিয়ের কথাবার্তাও হয়। পরে আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। জানাজানি হলে ওর ক্ষমতা আছে বলে ভয় দেখাতেও থাকে।’’

সৌম্যজিতের এক আত্মীয় শারীরিক ভাবে বলপূর্বক তাঁর গর্ভপাত ঘটিয়েছিল বলে মারাত্মক অভিযোগও করেছেন তিনি। এই মামলার তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, এই ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁদের জেরা করা হবে।

শিলিগুড়িতে থাকতেন সৌম্যজিৎ। বারাসতে থেকে কী ভাবে আলাপ হল প্রশ্ন করলে ওই তরুণী জানান, টেবল টেনিস খেলা এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট সূত্রেই বছর তিনেক আগে প্রথম আলাপ দু’জনের। তার পরে ঘনিষ্ঠতা। বিভিন্ন সময়ে কলকাতার বিভিন্ন হোটেল ও বাড়িতে দু’জনে একান্তে দেখা করতেন বলেও জানিয়েছেন ওই তরুণী। কলকাতার কিছু নামী টেবল টেনিস খেলোয়াড় গাড়িতে করে তাঁকে সৌম্যজিতের কাছে পৌঁছে দিতেন বলেও দাবি করেন। তাঁদেরও জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সর্বভারতীয় টেবল টেনিস সংস্থা সৌম্যজিৎ-কে ভারতের কমনওয়েলথ গেমসের দল থেকে সরিয়ে দিতে পারে। সর্বভারতীয় সংস্থার সচিব এম পি সিংহ বলেছেন, ‘‘সৌম্যজিতের বিরুদ্ধে সাংঘাতিক সব অভিযোগ রয়েছে। আমি কালই (শুক্রবার) এগজিকিউটিভ কমিটির বৈঠক ডেকেছি। যতক্ষণ না তদন্ত সম্পূর্ণ হচ্ছে, ওকে নির্বাসিত করা ছাড়া কোনও উপায় নেই বলেই আমার মনে হচ্ছে।’’ বাংলার টেবল টেনিস বেশ কয়েক বছর ধরেই বিতর্কিত এক মঞ্চ। বিবদমান তিনটি সংস্থা রয়েছে এই খেলায়। কাদের কথা শোনা হবে, কেউ জানে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন