খুন করে ট্রেনের সামনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বামনগাছির প্রতিবাদী ছাত্র সৌরভ চৌধুরীকে। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে গত ৫ জুলাই রাতে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মাথায় বাড়ি মেরে, ছুরির কোপে খুন করা হয় ওই যুবককে। খুনের ৪১ দিনের মাথায়, শনিবার বারাসত আদালতে পেশ করা চার্জশিটে এমনটাই জানিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ।
১৪ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ১৩ জন ধরা পড়েছে। পুলিশের দাবি, মূল অভিযুক্ত শ্যামল কর্মকার-সহ আট জন খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। বাকিদের বিরুদ্ধে খুনের পরিকল্পনা ও অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়ার কাজে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে শ্যামলের গুরুদেব শঙ্কু ওরফে শিশির মুখোপাধ্যায়, শ্যামলের দিদি পলি মাইতি-সহ দত্তপুকুর এলাকার তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের এক ভাইও রয়েছে। পালাতে সাহায্য করায় অভিযুক্তদের মধ্যে লিটন তালুকদার নামে এক জন এখনও পলাতক।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, খুনের মতলব নিয়েই সৌরভের উপরে হামলা করেছিল দুষ্কৃতীরা। ফরেন্সিক তদন্তে সৌরভের পোশাক থেকে মেলা রক্তের নমুনার সঙ্গে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র ও অভিযুক্তদের পোশাক থেকে মেলা রক্তের নমুনার মিল পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশের দাবি, বামনগাছিতে সৌরভদের বাড়ির সামনের বাতিস্তম্ভের আলো ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে গোলমালের সূত্রপাত। শ্যামল ও তার দলবলের নামে আলো ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল। তাতে খেপে গিয়ে শ্যামলেরা ওই এলাকার এক জনকে মারধর করে। তখন এলাকার মানুষ একজোট হয়ে শ্যামল ও তার সঙ্গীদের পেটায়। তার বদলা নিতেই শ্যামলরা ৫ জুলাই রাতে বামনগাছিতে হানা দেয়। বাড়ির সামনে সৌরভকে পেয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। পরে খুন করে বনগাঁ-শিয়ালদহ ট্রেন লাইনে ফেলে রাখে।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোড়ন পড়ে যায়। বামনগাছির রেললাইনে সৌরভের খণ্ডবিখণ্ড দেহ মেলার পর থেকেই খেপে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। ক্ষুব্ধ জনতা কখনও রেল অবরোধ করে, কখনও বা রাস্তা অবরোধ করতে গিয়ে পুলিশের লাঠির বাড়ি খায়। সৌরভের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান রাজনৈতিক নেতারা।
পুলিশ অবশ্য ঘটনায় জড়িতদের পর পর গ্রেফতার করতে থাকে। জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী এ দিন বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের গ্রেফতার করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারের আবেদন জানানো হবে।” সৌরভের দাদা সন্দীপ চৌধুরী বলেন, “দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”