দক্ষিণের কড়চা

দর্শকাসনের প্রথম সারিতে বসে সঙ্গীতের বিভিন্ন শাখার গুরুস্থানীয় কয়েক জন। তাঁদের প্রণাম করে আসর মাতালেন শিষ্যস্থানীয় কয়েক জন তরুণ। সেই পরিবেশন যদি ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত হয়, তা হলে সে বাড়তি পাওনা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০০:২৬
Share:

ব্যান্ডে রাগরূপের মূর্ছনা

Advertisement

দর্শকাসনের প্রথম সারিতে বসে সঙ্গীতের বিভিন্ন শাখার গুরুস্থানীয় কয়েক জন। তাঁদের প্রণাম করে আসর মাতালেন শিষ্যস্থানীয় কয়েক জন তরুণ। সেই পরিবেশন যদি ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত হয়, তা হলে সে বাড়তি পাওনা। মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের বাঁশি ও পৃথ্বীজিৎ ঘোষালের কণ্ঠের যুগলবন্দি ঠিক ফিউশন নয়, কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই অন্য রকম। আর সেটা বোঝাতেই নাম রাখা হয়েছে ‘ইস্টার্ন সোনাটা’। সঙ্গে তবলা, পাখোয়াজের মতো চিরায়ত বাদ্যযন্ত্র যেমন রয়েছে, রয়েছে পাশ্চাত্যের অক্টোপ্যাড, সিন্থেসাইজার। এই হল ‘রাগ হার্মোনি’-র ক্ল্যাসিক্যাল ব্যান্ড। সদস্যদের অনেকের বাড়ি হাওড়া এবং হুগলি জেলায়। সম্প্রতি কলকাতার আইসিসিআর অডিটোরিয়ামের এই অনুষ্ঠানে রাগ ইমন, ভূপালী, যোগ, হংসধ্বনি ও ভৈরবীর বন্দিশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলাপ-বিস্তার-তানের মূর্ছনায় মুগ্ধতার আবেশ। সঙ্গে অমিত চট্টোপাধ্যায়ের তবলা আর অপূর্বলাল মান্নার পাখোয়াজের রেওয়াজি সওয়াল-জবাব। সুদীপ্ত বসু ও সুমন দাস ছিলেন সিন্থেসাইজার ও অক্টোপ্যাডে। মেলোডিকার কুশলী প্রয়োগে সৃষ্টি হয়। সম্মাননা জানানো হল পণ্ডিত আনন্দ গুপ্ত, তবলাগুরু পণ্ডিত শঙ্খ চট্টোপাধ্যায়, কত্থকশিল্পী সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যন্ত্রশিল্পী প্রতাপ রায় এবং গণসঙ্গীত শিল্পী হিরণ্ময় ঘোষালকে।

Advertisement

ক্রুদ্ধ তিমির

এক-একটা সময় আসে যখন শিল্পিত আখর সরিয়ে রেখে কবি কথা বলতে চান সরাসরি। চোখ রাখতে চান চোখে। সংবাদের, বা বলা ভাল দুঃসংবাদের, পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলে পঙ্‌ক্তিরা। যা হতে পারত প্রসাদগুণে মগ্ন, নির্জনতা ঝেড়ে ফেলে তা-ই হয়ে ওঠে স্লোগান, রণধ্বনি। হুগলির শ্রীরামপুরের পরিচিত স্বাস্থ্য ও সমাজকর্মী গৌতম সরকার তাই যেন ইচ্ছে করেই চেনা স্তিমিত চলন থেকে বেরিয়ে খানিক উচ্চকিত তাঁর সাম্প্রতিক ‘তিমিরখণ্ড থেকে’ (অনুষ্টুপ) কাব্যগ্রন্থে। পাতায়-পাতায় প্রকাশিত সংবাদের ধরতাই দিয়ে অনুষঙ্গে আসে কবিতা। সে সবই দুঃসংবাদ— ধর্মের নামে, পৌরুষের নামে। হয়তো তাই ছত্রে-ছত্রে সুষমার তোয়াক্কা না করে বরং তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে ক্রোধ। তারই মধ্যে, স্বভাবগুণেই হয়তো বা, চলে আসে— ‘হা হা শব্দে হেসে উঠল হাওয়া/ পালক পোড়ানোর গন্ধ/ উড়ে গেল নক্ষত্রের দিকে’— এমন আশ্চর্য পঙ্‌ক্তিও। এটি গৌতমের ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। ছিলেন আয়োজক সংগঠনের সদস্যরা।

বাউলের কর্মশালা

মনের ময়লা কী ভাবে দূর করা যায়? গানে গানে শেখাচ্ছিলেন বাউল গানের শিক্ষক। উঠে আসছিল সহজিয়া তত্ত্ব, প্রেম তত্ত্বের কথা। দেওয়ালে লাগানো বাংলার বিভিন্ন ব্রতকথার সার সংক্ষেপ। স্থান: হাওড়ার মাকড়দহ ১ পঞ্চায়েতের সভাগৃহ। সম্প্রতি এখানেই হয়ে গেল বাউল গানের কর্মশালা। কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের সহযোগিতায় এই কর্মশালাটির আয়োজন করেছিল মাকড়দহ গীতিমাল্য নামে একটি সংস্থা। কর্মশালার শেষ দিনে স্থানীয় চৌধুরীপাড়ার মাঠে হয় সমাপ্তি অনুষ্ঠান। গান করেন কৃষ্ণদাস বৈরাগ্য, ভজনদাস বৈরাগ্যে-সহ কয়েকজন বাউল শিল্পী। আয়োজকদের পক্ষে দোলন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাওড়া, হুগলি, মালদহ থেকে ১০০ জন বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন এক জন।’’ এই অনুষ্ঠান করতে গিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সহযোগিতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন দোলনদেবী। কর্মশালার আগে এলাকায় ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করেঠিলেন উদ্যোক্তারা। আয়ো‌জকদের দাবি, হাওড়া জেলায় এই ধরণের কর্মশালা আগে হয়নি।

কলমের জোর

প্রায় ৩০ বছর ধরে বের করেছেন একটি পাক্ষিক সংবাদপত্র। রয়েছে ছড়া, গল্পের বই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের এই লেখক-সাংবাদিক ৬৮ বছরের অক্ষয়নগরের প্রমোদ পুরকাইত এখন পুরোপুরি শয্যাশায়ী। পাক্ষিক পত্রিকার প্রকাশনাও আপাতত বন্ধ। তবে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষকের কলমের গতি থামেনি। সম্প্রতি নিজের বাড়িতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হল তাঁর দু’টি গল্পের বই ‘৫০টি অল্প কথার গল্প’ এবং ‘বাঘমামারা ভালো থেকো’। উপস্থিত ছিলেন তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা।

শিক্ষাব্রতী

একেই বোধ হয় বলে সৃষ্টিসুখের উল্লাস। প্রাথমিক স্কুল, হাইস্কুল, কলেজ, বিএড কলেজ থেকে ফুটবল প্রশিক্ষণকেন্দ্র। নিজের উদ্যোগে তৈরি করেছেন সব। নিজেই জমি কিনেছেন। কখনও গ্রামবাসীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। ৮০ বছর বয়সে এসে তাঁর ইচ্ছে, সংস্কৃত পঠনপাঠনের শিক্ষাকেন্দ্র এবং আইন কলেজ তৈরি। তিনি হাওড়ার পাঁচলার গঙ্গাধরপুরের সন্তোষ দাস। সম্প্রতি প্রবীণ এই শিক্ষাবিদকে শিক্ষাজগতে অবদানের জন্য সম্মানিত করেছে দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা। সন্তোষবাবু জানান, তাঁর প্রথম কাজ ১৯৬৪ সালে গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দির তৈরি। তার পর তৈরি করেন গঙ্গাধরপুর বালিকা বিদ্যামন্দির, প্রাথমিক স্কুল, গঙ্গাধরপুর মহাবিদ্যামন্দির। এর পর তাঁর ভাবনায় আসে বিএড কলেজের কথা। তৈরি হয় গঙ্গাধরপুর শিক্ষণ মন্দির। জওহর নবোদয় স্কুলের জন্য ১১ একর জমি দান করেছেন তিনি। শিক্ষার সঙ্গেই খেলাধূলোতেও তাঁর সমান আগ্রহ। গ্রাম থেকে ফুটবলার খুঁজে বের করতে বছর দেড়েক আগে তৈরি করেন জ্ঞানানন্দ ফুটবল অ্যাকাডেমি। পাঁচলার সামন্তী গ্রামে সন্তোষবাবুর পৈত্রিক বাড়ি। মাত্র তিন মাস বয়সে বাবা কেশব দাসকে হারান । মা উমাদেবী তাঁকে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দেন গঙ্গাধরপুরের মামার বাড়িতে। আমতার বড়মোহরা যতীন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রাজনীতিও করেছেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত পাঁচলার বিধায়ক ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের শিক্ষিকা। সারা জীবনের সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলি তৈরি করেছেন সন্তোষবাবু। এখন গঙ্গাধরপুরে রাজ্য সরকার প্রস্তাবিত সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এবং আইন কলেজ তৈরির ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। ৮০ বছরেও এমন ইচ্ছেশক্তির রহস্য কী? কয়েক মুর্হূত চুপ করে বলেন, ‘‘মায়ের ইচ্ছে ও আশীর্বাদ। তিনি মারা গিয়েছেন ১৯৯৬ সালে। তার মধ্যেই আমার কিছু কাজ দেখে গিয়েছেন। এটাই আমার পরম প্রাপ্তি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন