Governor

বাংলার ২৩টি বিল রাজভবনে আটকে! তামিলনাড়ু মামলায় সুপ্রিম কোর্টের মনোভাব বুঝে বোসকে মনে করালেন বিমান

বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিল জনসাধারণের স্বার্থে বিধানসভায় আনা হয়। ওই ধরনের বিলগুলি সেই সময়েই পাশ না-করানো হলে তার ‘যৌক্তিকতা’ নষ্ট হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৩১
Share:

(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপালদের ঝুলিয়ে রাখা ‘বৈধ’ নয়। এ প্রসঙ্গে তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে সাংবিধানিক বিধিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সেই পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গেই এ রাজ্যের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে ‘কর্তব্য স্মরণ’ করালেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে মাথায় রেখে এ রাজ্যের রাজ্যপালেরও উচিত, তাঁর কাছে পড়ে থাকা বিলগুলি ফেরত পাঠানো। তিনি মনে করেন, এই ‘নিয়ম’ মেনে রাজ্যপালেরা কাজ করলে সব রাজ্যেরই অনেক সুবিধা হবে। স্পিকার আরও জানিয়েছেন, অপরাজিতা বিল, গণপিটুনি বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বিল বিধানসভায় পাশ হওয়ার পরেও তাতে এখনও সম্মতি দেননি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কেন ওই বিলগুলিতে সম্মতি দিচ্ছেন না, তা তাঁর কাছেও স্পষ্ট নয় বলে বিমান জানিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাব, বিধানসভায় বিল পাশের পরে তিন বা ছ’মাসের মধ্যে রাজ্যপালের সম্মতি না পেলে তা ‘আইন’ হিসাবে গণ্য করা হোক।

Advertisement

তামিলনাড়ুর বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিলে সে রাজ্যের রাজ্যপাল সম্মতি না-দেওয়ায় সেগুলি এখনও আইনে পরিণত হয়নি। রাজ্যপালের এই ভূমিকার বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার। মঙ্গলবার বিচারপতি জেবি পরদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবি। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অনন্তকাল ধরে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল ঝুলিয়ে রাখতে পারেন না রাজ্যপাল। সময়সীমা বেঁধে দিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজ্যপালকে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন বলেন, “এটা শুধু তামিলনাড়ু নয়, ভারতের সব রাজ্যের জয়।”

মঙ্গলবার স্পিকার বিমানের গলায়ও শোনা গিয়েছে একই সুর। তিনি বলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমাদের রাজ্যপালকে আমরা বলেছি বার বার। ২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলের মধ্যে এমন ২৩টি বিল রয়েছে, যেগুলিতে সম্মতি দেননি রাজ্যপাল। এগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিলও রয়েছে। যেমন অপরাজিতা বিল। গণপিটুনি বিল।’’ তিনি জানিয়েছেন, কেন এই বিলগুলিতে রাজ্যপাল সম্মতি দিচ্ছেন না, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, মাননীয় রাজ্যপাল সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে মাথায় রেখে ঝুলিয়ে রাখা বিলগুলি পাঠিয়ে দেবেন। ’’

Advertisement

বিল থেকে আইন হওয়ার প্রক্রিয়াও ব্যাখ্যা করেছেন বিমান। তিনি জানিয়েছেন, বিল তৈরি হয় রাজ্যের বিধানসভায়। সেই বিল নিয়ে আলোচনা হয়। তার পরে তা পাশ হয়। বিল পাশ হওয়ার পরে রাজ্যপালের কাছে তা পাঠানো হয়। রাজ্যপাল সম্মতি দিলে তবেই সেই বিল আইনে পরিণত হয়। রাজ্যপাল কখনও সম্মতি না-দিয়ে কিছু সুপারিশ করে আবার ফেরত পাঠাতে পারেন। সেই সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। তার পরে আবার বিধানসভায় বিল পাশ হয়ে গেলে তাতে সম্মতি না দেওয়ার মতো কোনও বিকল্প থাকে না রাজ্যপালের কাছে। বিমানের কথায়, ‘‘আমরা এই বিধানসভায় দেখেছি, রাজ্যপাল বিল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাচ্ছেন। কোনও যুক্তি নেই। সেই বিলে এমন কোনও সাংবিধানিক অ্যাপ্লিকেশন নেই যে, তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে। তবু পাঠানো হচ্ছে। এটা ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’’

তার পরেই বিমান সু্প্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আনন্দিত। এই নিয়ম মেনে রাজ্যপালেরা কাজ করলে রাজ্যের অনেক সুবিধা হয়।’’ তিনি আরও জানান, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিল জনসাধারণের স্বার্থে রাজ্য বিধানসভায় আনা হয়। ওই বিলগুলি ঠিক সেই সময়ে পাশ করিয়ে আইনে পরিণত না-হলে তার ‘যৌক্তিকতা’ নষ্ট হয় বলে জানান স্পিকার। এই প্রসঙ্গে তিনি বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবও মনে করিয়ে দিয়েছেন। বিমানের কথায়, ‘‘সারকারিয়া-সহ বেশ কিছু কমিশন রয়েছে, যারা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বিষয়ে বলেছে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাজ্যপালের কাছে বিলগুলি থাকা উচিত। সেই সময়ের মধ্যে তিনি সম্মতি না-দিলে ধরে নিতে হবে সম্মতি মিলে গিয়েছে।’’ বিমান জানিয়েছেন, তিনি ‘অল ইন্ডিয়া স্পিকারস ফোরাম’-এও একই কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিলে রাজ্যপালের সম্মতির জন্য তিন বা ছয় মাস সময় নির্ধারিত হোক। তার মধ্যে সম্মতি না-এলে সেটি আইন হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হোক।’’

প্রসঙ্গত, এই বিল পাশ নিয়ে রাজ্যপালকে ‘কর্তব্য’ স্মরণ করিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টও। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement