Sister Nivedita

‘ভগিনী নিবেদিতা তৃপ্ত ছিলেন নিবেদন করেই’ 

১৮৬৭-র ২৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন মার্গারেট। ছোট থেকেই ধর্মজীবন ও মানুষের পাশে থাকার প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০৫
Share:

ফাইল চিত্র।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বলতেন, ‘লোকমাতা’। ঋষি অরবিন্দ নাম দিয়েছিলেন, ‘শিখাময়ী’।মিস মার্গারেট এলিজ়াবেথ নোবেল তথা স্বামী বিবেকানন্দের মানসকন্যা ভগিনী নিবেদিতা আয়ারল্যান্ড থেকে ভারতে এসেছিলেন নিজেকে লোকসেবায় নিবেদনের জন্য। প্রব্রাজিকা দিব্যানন্দাপ্রাণার কথায়, ‘‘নিবেদিতা এসেছিলেন ভারতের মেয়ে হয়ে। তিনি মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।’’ মার্গারেট যখন মাতৃগর্ভে, তখনই তাঁর মা ইজ়াবেল প্রার্থনা করেছিলেন যে, তাঁর সন্তান নিরাপদে ভূমিষ্ঠ হলে ঈশ্বরের কাজেই তাকে উৎসর্গ করবেন।

Advertisement

১৮৬৭-র ২৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন মার্গারেট। ছোট থেকেই ধর্মজীবন ও মানুষের পাশে থাকার প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতেন। তাঁর এই সুপ্ত শক্তিকেই জাগিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। বুধবার ভগিনী নিবেদিতার ১৫৪তম জন্মদিবসে, প্রব্রাজিকা বেদান্তপ্রাণা বলেন, ‘‘নিবেদিতার মহিমা এই শতকের মানুষকেও অবাক করে। তিনি নিতে আসেননি, দিতে এসেছিলেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি শুধু নিবেদন করেই তৃপ্ত থেকেছেন।’’ জন্মদিনে নিবেদিতাকে স্মরণ করতে ওয়েবিনার আয়োজন করে রামকৃষ্ণ সারদা মিশন নিবেদিতা সংগ্রহশালা ও জ্ঞানপীঠ।

প্রথমে ইউটিউবে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে নিবেদিতার মার্গারেট নোবেল থেকে লোকমাতা হয়ে ওঠার বিষয়ে বলেন প্রব্রাজিকা বেদান্তপ্রাণা ও প্রব্রাজিকা দিব্যানন্দাপ্রাণা। পাশাপাশি ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনের সংগ্রহশালাটি ভার্চুয়ালি দেখানো হয়। এই সংগ্রহশালার পাশেই রয়েছে ১৭ নম্বর বোসপাড়া লেনের বাড়ি। দীর্ঘ বছর সেই বাড়িতে থাকার সময়েই নিজের কর্মের পরিধি অনেক বাড়িয়েছিলেন নিবেদিতা। শ্রীমা সারদা থেকে স্বামী বিবেকানন্দ, সারা বুল, অরবিন্দ ঘোষ, নন্দলাল বসু-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ এসেছেন ওই বাড়িতে। সেখানেই ১৯০৩ সালের ২৮ জুন নিবেদিতা লিখেছিলেন, ‘এই বাড়িটিকে বাস্তবের বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাই’। তাঁর সেই স্বপ্নের কথা স্মরণ করেই ওই বাড়িতে নিবেদিতা ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ (নিহার)-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করেছেন রামকৃষ্ণ সারদা মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষ। যেখানে এক জন তরুণীর মূল্যবোধ বিকাশের পাশাপাশি তাঁকে স্বাবলম্বী করে তোলারও প্রশিক্ষণ মিলবে। এ দিন ‘নিহার’-এর আদর্শ ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন প্রব্রাজিকা অশেষপ্রাণা-সহ অন্যান্যরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: এক ডজন জেলায় ঊর্ধ্বমুখী মৃত-আক্রান্তের পরিসংখ্যান

ওই ১৭ নম্বর বাড়িতেই শেষ আড়াই বছর কাটিয়ে ছিলেন গোপালের মা (শ্রীমতী অঘোরমণি)। তাঁকে নিজের কাছে রেখে জীবনের শেষ সময়ের নিঃসঙ্গতা বুঝতে দেননি নিবেদিতা। সেই সূত্র ধরেই নিঃসঙ্গ কোনও বৃদ্ধাকে যাতে একাকিত্বে ভুগতে না হয়, তার জন্য ‘নিহার’-এ তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিনব পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে এক বৃদ্ধা এবং এক তরুণীর পারস্পরিক আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়। তাতে তরুণীটি যেমন স্বাবলম্বী হতে পারবেন, ওই বৃদ্ধাও নিঃসঙ্গতা ভোলার পাশাপাশি নিজেকে বিকশিত করতে পারবেন।

আরও পড়ুন: মৃত্যুতে লাগাম দিতে বাড়িতে ফোন রাজ্যের​​

পরে ভার্চুয়াল প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশ-বিদেশের অনেকেই অংশগ্রহণ করেন। নিবেদিতার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃতি সম্পর্কে এক জন জানতে চাইলে প্রব্রাজিকা অশেষপ্রাণা বলেন, ‘‘আমরা নিবেদিতার দূরদৃষ্টিকে অনুসরণ করি। কারণ, আমরা তাঁর যন্ত্র। তবে এটা নিশ্চিত যে সকলের সহযোগিতায় ‘নিহার’ থেকেই এক দিন ভগিনীর সমস্ত স্বপ্ন পূরণ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন