অন্ডালে কেন লগ্নি, জল্পনা

সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের মতে, এই বিমানবন্দর এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক না হওয়ার ফলে চাঙ্গির বিনিয়োগ ধরে রাখা যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। আপাতত নিজেদের মালিকানা বাড়িয়ে চাঙ্গির স্বস্তি ও আস্থা জোগাড় করতেই রাজ্য এই পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করছে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১১
Share:

যৌথ উদ্যোগে রাজ্য আর শরিক হবে না— মন্ত্রিসভায় নেওয়া এই সিদ্ধান্তের উল্টো পথে হেঁটে অন্ডাল বিমানবন্দর প্রকল্পে নতুন করে ৩০০ কোটি টাকা পুঁজি ঢালছে মমতা বন্দ্যো‌পাধ্যায়ের সরকার। রাজ্যের এই ছকভাঙা পদক্ষেপের কারণ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে শিল্পমহলে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, শুধু মাত্র এই ৩০০ কোটি টাকা নয়। অন্ডাল প্রকল্প বাঁচাতে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। যেমন ব্যাঙ্কের কাছে ৩০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। সেই ঋণ ফেরৎ দেওয়ার সময়সীমা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ বছর। রাজ্য সরকারের আশ্বাস পাওয়ার পরেই ব্যাঙ্ক এই সময়সীমা বাড়িয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এ ছাড়াও, বেঙ্গল এরোট্রোপলিস প্রজেক্ট লিমিটেড (বিএপিএল)-এর থেকে ৮০ একর জমি ফিরিয়ে নিচ্ছে রাজ্য। খনি এলাকার ৮০০০ মানুষের পুনর্বাসনের জন্য ওই জমি ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য। জমির বিনিময়ে ৫০ কোটি টাকা পাবে সংস্থা।

ক্ষমতায় আসার পরেই বিবিধ যৌথ প্রকল্পে লাভ-ক্ষতির হিসেব কষতে শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। বিভিন্ন বেসরকারি নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে আবাসন প্রকল্পের শরিক রাজ্য। এ সব প্রকল্পে রাজ্যের উপস্থিতি কতটা যৌক্তিক, তা খতিয়ে দেখতে পরামর্শদাতাও নিয়োগ করেছিল রাজ্য। এর পরে একে একে বিভিন্ন যৌথ উদ্যোগ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই তালিকায় রয়েছে মেট্রো ডেয়ারির মতো লাভজনক প্রকল্পও। এ বারে তাই সরকারের অন্দরমহলেই প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি নীতির বিরুদ্ধে হেঁটে অন্ডাল প্রকল্পে মালিকানা আরও জোরদার করা হল কেন?

Advertisement

তিনটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। সেগুলি হল হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল, সাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর ও অন্ডাল প্রকল্প। এর মধ্যে আইনি কারণেই হলদিয়া প্রকল্প থেকে রাজ্যকে আগামি দিনে বেরিয়ে যেতে হবে। সাগরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে শরিক হিসেবে থাকবে রাজ্য। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু মাত্র অন্ডাল বিমাননগরীর জন্য এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত কেন?

শুক্রবার রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, সরকার আরও বেশি করে জড়াচ্ছে দেখলে প্রকল্পের প্রধান অংশীদার চাঙ্গি আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হবে। তিনি বলেন, ‘‘সিঙ্গাপুরে সব ক্ষেত্রেই সরকারের অংশগ্রহণ বেশি। তাই ওরা সরকারের অংশগ্রহণকে সরকারের দায়বদ্ধতা হিসেবে দেখে।’’ মূল অংশীদার হিসেবে চাঙ্গির হাতে থাকছে ৩১ শতাংশ শেয়ার।

বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অন্ডাল বিমানবন্দরের অচলাবস্থা কাটাতে অংশীদারিত্ব বাড়াবে সরকার। ১১ শতাংশ অংশীদারি বেড়ে হবে ২৬ শতাংশ। নবান্নের খবর, এই বেসরকারি বিমানবন্দর তৈরি করতে বাজারে ধার হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। সেই ধার মেটাতে ৩০০ কোটি টাকা লগ্নি করবে রাজ্য সরকার। সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের মতে, এই বিমানবন্দর এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক না হওয়ার ফলে চাঙ্গির বিনিয়োগ ধরে রাখা যাবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। আপাতত নিজেদের মালিকানা বাড়িয়ে চাঙ্গির স্বস্তি ও আস্থা জোগাড় করতেই রাজ্য এই পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন