ইউনেস্কোর সম্মান পাচ্ছে শ্রীরামপুরের গির্জা

নিখুঁত সংস্কারের হাত ধরে সেজে উঠল ইতিহাস। একদা ‘বিপজ্জনক’ ঘোষিত হওয়া শ্রীরামপুরের সেন্ট ওলাভ গির্জা আবার সেজে উঠেছে নতুন ভাবে। পুরনো আদল বজায় রেখেই হয়েছে আমূল সংস্কার। সেই সংস্কারের জন্যই ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পাচ্ছে প্রাচীন‌ এই গির্জা।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share:

সেজেছে গির্জার অন্দর। —নিজস্ব চিত্র।

নিখুঁত সংস্কারের হাত ধরে সেজে উঠল ইতিহাস।

Advertisement

একদা ‘বিপজ্জনক’ ঘোষিত হওয়া শ্রীরামপুরের সেন্ট ওলাভ গির্জা আবার সেজে উঠেছে নতুন ভাবে। পুরনো আদল বজায় রেখেই হয়েছে আমূল সংস্কার। সেই সংস্কারের জন্যই ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার পাচ্ছে প্রাচীন‌ এই গির্জা।

ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক স্থাপত্য সংরক্ষণের জন্য এই বছর ‘ইউনেস্কো এশিয়া-প্যাসিফিক পুরস্কার’ পাচ্ছে বিভিন্ন দেশের মোট ১৩টি স্থাপত্য। ভারতের ৪টি স্থাপত্য এই সম্মান পাচ্ছে। তার মধ্যেই রয়েছে শ্রীরামপুরের সেন্ট ওলাভ গির্জা। ইউনেস্কোর লক্ষ্য, এই পুরস্কারের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় অনাদরে পড়ে থাকা জীর্ণ স্থাপত্যকে সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তিকে উৎসাহিত করা। পুরস্কারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্থাপত্যের মাধ্যমে সেখানকার ইতিহাস, প্রযুক্তিগত কার্যকারিতার বিষয়গুলি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

Advertisement

ইউনাইটেড নেশনস ইনফরমেশন সেন্টারের তরফে ভারতের জাতীয় তথ্য আধিকারিক রাজীব চন্দ্রন ব‌লেন, ‘‘এই সম্মান অত্যন্ত শ্লাঘার বিষয়।’’ সেন্ট ওলাভ গির্জা দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে শ্রীরামপুর কলেজের উপর। এই কলেজের অধ্যক্ষ ভ্যানস্যাংগ্ল্যুরা বলেন, ‘‘সেন্ট ওলাভ গির্জার সংস্কার কাজ এমন সম্মান পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এটি শ্রীরামপুর শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য।’’

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আঠারো শতকের বেশিরভাগ সময়ে শ্রীরামপুরে ছিল ডেনমার্কের উপনিবেশ। গভর্নর ওলি বি’র সময়ে প্রোটেস্ট্যান্ট নাগরিকদের জন্য ১৮০০ সাল নাগাদ এই গির্জার কাজ শুরু হয়। কয়েক বছর পরে শেষ হয় কাজ। তবে তত দিনে ওলি বি’ মারা গিয়েছেন। এই গির্জার ভিতরে রয়েছে একটি সভাঘর, বেদি। পরবর্তী কালে শ্রীরামপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ গির্জাটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পান‌। ২০১০ সাল পর্যন্ত শ্রীরামপুর কলেজের ধর্মসভা, সাপ্তাহিক উপাসনার স্থান ছিল এই গির্জা। বড়দিনে এখানে হত বিশেষ প্রার্থনা। এছাড়াও কলকাতার ইমানুয়েল মিনিস্ট্রির পক্ষ থেকে সভাঘরটিকে শহরের অবহেলিত নাগরিকদের পড়াশোনা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হত। কিন্তু আস্তে আস্তে গির্জাটি জীর্ণ হতে শুরু করে। নষ্ট হয়ে যায় ছাদের কড়িকাঠ, জানলা-দরজা, আসবাব। খসে পড়তে শুরু করে দেওয়ালের পলেস্তারা। ২০১১ সালে গির্জাটিকে ‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা করে শ্রীরামপুর কলেজ। তার পর সেটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সেন্ট ওলাভ গির্জা সংস্কারের আগে ও পরে।

ইতিমধ্যে ডেনমার্কের জাতীয় মিউজিয়ামের সঙ্গে এ রাজ্যের হেরিটেজ কমিশন এবং রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে মৌ স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে শ্রীরামপুরে ডেনিস আমলের জীর্ণ স্থাপত্যগুলিকে আমূল সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে এই গির্জা সংস্কারের কাজ শুরু হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্কারে ২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। পুরো টাকা দেয় ডেনমার্কের জাতীয় মিউজিয়াম।

সংস্কার কাজের স্থপতি মণীশ চক্রবর্তী জানান, গির্জাটি ১৪ হাজার বর্গফুট জমিতে অবস্থিত। পুরনো ভবনটি চুন-সুরকির ছিল। সংস্কার কাজের ওই উপকরণই ব্যবহৃত হয়েছে। কয়েকটি আসবাবেরও মেরামত করা হয়েছে। প্রাচীন স্থাপত্যকে নতুন রূপে ফিরে পেয়ে খুশি শ্রীরামপুরবাসী। শহরের বাসিন্দা, মনোবিদ মোহিত রণদীপ বলেন, ‘‘এ বার শহরের সেন্ট ওলাভ গির্জা-সহ বিভিন্ন স্থাপত্যের রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেল।’’ ডেনিস আমলের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন শ্রীরামপুর কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘শ্রীরামপুরের ইতিহাসে এটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন