স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের তালিকায় র‌্যাঙ্ক-বিভ্রাট!

এই র‌্যাঙ্ক-বিভ্রাট ঘটেছে নবম ও দশম শ্রেণির ইতিহাসের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের মে‌ধা-তালিকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৩:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

কেউ ছিলেন মেধা-তালিকার ১১০ নম্বরে। কয়েক দিন পরে হঠাৎ তিনি দেখলেন, ধাপ তিনেক পিছিয়ে দিয়ে তাঁকে ১১৩ নম্বরে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। যাঁর নাম ছিল ১০৩ নম্বরে, একই ভাবে তাঁর অবনমন ঘটেছে ১০৬-এ।

Advertisement

এই র‌্যাঙ্ক-বিভ্রাট ঘটেছে নবম ও দশম শ্রেণির ইতিহাসের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের মে‌ধা-তালিকায়। যে-সব প্রার্থীর ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে, স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র কাজকর্ম নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলছেন তাঁরা। অভিযোগ, গত ৩০ এপ্রিল চাকরিপ্রার্থীরা এসএসসি-র ওয়েবসাইটে দেখেন, মেধা-তালিকায় তাঁদের নাম যে-র‌্যাঙ্কে ছিল, সেখান থেকে তিন-চারটি ধাপ নেমে গিয়েছে। আবার জনা তিনেক প্রার্থীর নাম চলে এসেছে তালিকার উপরের দিকে। অবনমনের কোপে পড়া প্রার্থীরাই অস্বচ্ছতার অভিযোগে সরব হয়েছেন। কেননা তাঁরা বুঝেই উঠতে পারছেন না, মেধা-তালিকা প্রকাশের পরেও কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁদের নাম কেয়ক ধাপ নীচে নেমে গেল কী ভাবে!

চৈতালি বিশ্বাস নামে নদিয়ার রানাঘাটের এক প্রার্থী জানান, মেধা-তালিকায় তাঁর র‌্যাঙ্ক ছিল ১১০। তিনি ৩০ এপ্রিল এসএসসি-র ওয়েবসাইট খুলে দেখেন, তাঁর র‌্যাঙ্ক তিন ধাপ পিছিয়ে গিয়ে হয়েছে ১১৩। এ ভাবে র‌্যাঙ্ক পিছিয়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন চৈতালি। তিনি বলেন, ‘‘আমার এক বন্ধুও প্রার্থী। সে ফোন করে বলে, রাতারাতি মেধা-তালিকায় র‌্যাঙ্ক পাল্টে কয়েক জনকে উপরে তুলে আনা হয়েছে। অনেকের র‌্যাঙ্ক তিন থেকে চার ধাপ নেমে গিয়েছে।’’ একই অভিযোগ সৌমেন কর্মকার নামে এক প্রার্থীর। ‘‘মেধা-তালিকায় আমার র‌্যাঙ্ক ছিল ১০৩। সেটা নেমে গিয়েছে ১০৬-এ, বলেন সৌমেন।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ইতিহাসের ১২০ জন শিক্ষকপদ প্রার্থীর মেধা-তালিকায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে বলে অভিযোগ। ওই প্রার্থীরা জানান, ২০১৬ সালে তাঁরা পরীক্ষা দিয়েছিলেন। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পরে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে ধাপে ধাপে তাঁরা এখন চতুর্থ কাউন্সেলিং পর্যন্ত পৌঁছেছেন। চতুর্থ দফার কাউন্সেলিং হওয়ার কথা লোকসভা ভোটের পরেই। তার আগে এই ভাবে র‌্যাঙ্ক পাল্টে যাওয়ায় কমিশনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল। এর ফলে চাকরি নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে বলে প্রার্থীদের আশঙ্কা।

তালিকায় নামের ওঠানামার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে কমিশন। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, যে-ক’জন প্রার্থীর নাম মেধা-তালিকায় উপরে আনা হয়েছে, তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে তাঁদের র‌্যাঙ্ক রিভিউয়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। ‘‘রিভিউয়ে দেখা যায়, ওই প্রার্থীদের র‌্যাঙ্ক উপরের দিকে উঠে এসেছে,’’ বলেন এসএসসি চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার।

অভিযোগকারী প্রার্থীদের বক্তব্য, এসএসসি পরীক্ষার আগে প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছিল, লিখিত উত্তরপত্রের পুনর্মূল্যায়ন করা যাবে না। ‘‘গেজেটে এ কথা লেখা থাকলেও আদালত যদি প্রার্থীদের উত্তরপত্র রিভিউ করার নির্দেশ দেয় আর সেই নির্দেশ আমরা যদি না-মানি, তা হলে তো আদালত অবমাননার দায়ে পড়ে যাব। যা করা হয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনেই করা হয়েছে,’’ বলেন এসএসসি-প্রধান সৌমিত্রবাবু।

র‌্যাঙ্ক-বিভ্রাট নিয়ে সরব হয়েছে শিক্ষক সমিতিগুলিও। মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদারের বক্তব্য, আদালত নির্দেশ দিলে এসএসসি অবশ্যই রিভিউ করতে পারে। সে-ক্ষেত্রে যে-সব প্রার্থীর র‌্যাঙ্ক উপরে চলে গেল, তাঁদের জন্য বিশেষ কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত এসএসসি-র। তা হলে অন্য প্রার্থীদের কাউন্সেলিংয়ের ক্ষেত্রে তার কোনও প্রভাব পড়বে না। ‘‘সেটা না-করায় বারবার এই ধরনের র‌্যাঙ্ক-বিভ্রাটের ফলে তো প্রার্থীদের কাছে কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাচ্ছে,’’ বলেন অনিমেষবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন