নিরাপত্তার দাবিতে ধর্মঘট পেট্রাপোলে

সংগঠনগুলির দাবি, ৬ নভেম্বর এ দেশ থেকে চালকদের জন্য নির্দিষ্ট ‘কার পাস’ নিয়ে বেনাপোল ট্রাক নিয়ে গিয়েছিলেন চালক ইসমালিক মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩১
Share:

বিক্ষোভ: সারি দিয়ে দাঁড়ানো ট্রাক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

কখনও এ দেশ থেকে বেনাপোলে যাওয়া ট্রাকে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। কখনও ট্রাক থেকে মালপত্র-তেল চুরি যাচ্ছে। হোটেলে খেতে ঢুকলে পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া মারামারি বাধাচ্ছে কিছু লোক। টাকা-মোবাইল ছিনতাই করা হচ্ছে।

Advertisement

পণ্য পরিবহণের কাজে বাংলাদেশের বেনাপোলে গিয়ে নানা সময়ে এ দেশের ট্রাক চালক-খালাসিদের এমন হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে অনেক দিন ধরেই। যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পেট্রাপোল বন্দরে একদিনের প্রতীকী ধর্মঘট পালন করলেন এ দেশে পণ্য বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত আটটি সংগঠনের সদস্যেরা। যার জেরে এ দিন বাণিজ্য বন্ধ থাকল পেট্রাপোলে।

সংগঠনগুলির দাবি, ৬ নভেম্বর এ দেশ থেকে চালকদের জন্য নির্দিষ্ট ‘কার পাস’ নিয়ে বেনাপোল ট্রাক নিয়ে গিয়েছিলেন চালক ইসমালিক মণ্ডল। ট্রাকটি ছিল বেনাপোল ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির এলাকায়। ওই দিন মাল খালি না হওয়ায় তিনি সন্ধ্যায় ট্রাক রেখে দেশে ফেরেন। তারপর থেকে এ ভাবেই যাতায়াত করছিলেন তিনি। ৮ তারিখ বাংলাদেশ পুলিশের আনসার বাহিনী ওই ট্রাক থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি পায় বলে অভিযোগ করে। ট্রাকটি আটক করা হয়। ও দেশের ক্লিয়ারিং এজেন্টকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে। এ পারের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি আন্দোলন শুরু করে একদিন ধর্মঘট পালন করে। তারপরে ওই ক্লিয়ারিং এজেন্ট জামিন পান। কিন্তু এ দেশের ট্রাক ছাড়া হচ্ছে না। ভারতীয় প্রতিনিধিরা ও দেশের পুলিশ, শুল্ক দফতরের কর্তারাদের সঙ্গে আলোচনা করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সরকারি বন্দর এলাকায় কোনও নিরাপত্তা নেই। ট্রাকে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা থেকেই তা স্পষ্ট। আগ্নেয়াস্ত্রটি ছিল ট্রাকের পিছন দিকে, ডালার পাশে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, ওটি কেউ রেখে দিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাঁসাচ্ছে। ওই ট্রাক থেকেই তেল ও একটি জগ চুরি গিয়েছে।’’

Advertisement

বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নিয়মে, এ দেশ থেকে কোনও ট্রাক চালককে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে যেতে হলে ‘কার পাস’ নিতে হয়। মাল খালাস করে ট্রাক নিয়ে ফিরে আসার কথা। কিন্তু এ দেশের ট্রাক চালকেরা নিরাপত্তার কারণে সন্ধ্যার পরে ও দেশে ট্রাক রেখে এ দেশে ফিরে আসেন।

পেট্রাপোল এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সরকারি নিয়মে বলা হয়েছে, কার পাস নিয়ে কোনও চালক ও দেশে পণ্য নিয়ে গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাল খালি করে আসতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাল খালি করতে ১০- ১২ দিন সময় নিয়ে নেন। আমাদের দাবি, দিনের দিন পণ্য খালি করতে হবে। তা হলে কোনও চালক ও দেশে ট্রাক রেখে সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন না।’’

আইএনটিইউসি অনুমোদিত বনগাঁ মহকুমা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের কর্তা প্রভাস পাল বলেন, ‘‘বেনাপোল বন্দরে এ দেশের ট্রাক চালকদের কোনও নিরাপত্তা নেই। চালকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটকে রাখা ট্রাকটি ছেড়ে না দিলে আমরা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধর্মঘটের পথে যেতে বাধ্য হব।’’

দিনের শেষে অবশ্য খানিকটা আশার বাণী শুনিয়েছেন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘বাংলাদেশ শুল্ক দফতর আমাদের শুল্ক দফতরকে জানিয়েছে, তিনটি কাজের দিনের মধ্যে তারা আটক করা ট্রাকটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন