Municipal Service Commission

পুরসভার স্থায়ী পদে নিয়োগে কড়া পদক্ষেপ রাজ্যের! বাধ্যতামূলক হল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন

২০১৮-১৯ সালের পশ্চিমবঙ্গ মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন আইন অনুযায়ী কমিশন গঠন করা হয়, যার কাজ হল স্বচ্ছতার সঙ্গে পুরসভা ও পুরনিগমের জন্য কর্মীনিয়োগ। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী স্থায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৬:৫৯
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

পুরসভা এবং পুরনিগমগুলিতে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার রাজ্য সরকার এ বার কড়া পদক্ষেপ করল। পুরসভাগুলিতে স্থায়ী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুপারিশ এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রাজ্য সরকারের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিশেষ করে সাম্প্রতিক অতীতে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই এবং ইডির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির সক্রিয়তা এবং একাধিক অনিয়ম প্রকাশ্যে আসার পর সরকারপক্ষ কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। এ বার থেকে সমস্ত পুরসভা, পুরনিগম, উন্নয়ন পর্ষদ এবং শিল্প উন্নয়ন পর্ষদে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ বাধ্যতামূলক ভাবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন’-এর মাধ্যমে করা হবে বলে জানিয়ে দিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি নবান্নের এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাবে নির্দেশ দেন, স্থানীয় ভাবে আর কোনও নিয়োগ করা যাবে না। সমস্ত স্থায়ী পদে নিয়োগ করতে হবে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। এর পর পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর দ্রুত একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, পুরসভা, পুরনিগম, উন্নয়ন পর্ষদ, শিল্প উন্নয়ন পর্ষদ এবং নগরোন্নয়ন সংস্থাগুলিতে নিয়োগ হবে মিউনিসিপ্যাল কমিশনের মাধ্যমে।

Advertisement

গত কয়েক বছর ধরে পুরসভাগুলির নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষ করে অয়ন শীলের এজেন্সির মাধ্যমে পরীক্ষার আয়োজন করা, তাঁর বাড়ি থেকে ওএমআর শিট উদ্ধার হওয়া এবং ব্যারাকপুর, কামারহাটি, টিটাগড়, ভাটপাড়া-সহ বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয় যে, অনেক ক্ষেত্রে পুরসভার চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা রাজ্যের শাসকদলের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালে রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকে। চলতি বছর মার্চ মাসে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর বিভিন্ন পুরসভা এবং উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, স্থায়ী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও পুরসভা বা উন্নয়ন পর্ষদ নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষা ও মেধাতালিকা প্রকাশের পরই নিয়োগ সম্পন্ন হবে।

২০১৮-১৯ সালের পশ্চিমবঙ্গ মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন আইন অনুযায়ী কমিশন গঠন করা হয়, যার কাজ হল স্বচ্ছতার সঙ্গে পুরসভা ও পুরনিগমের জন্য কর্মী নিয়োগ করা। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী স্থায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ, বি ও সি ক্যাটাগরির পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সম্পন্ন হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এবং অর্থ দফতরের অনুমোদন লাগবে। পুরসভা বা উন্নয়ন পর্ষদ চাইলে কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারবে, তবে সরাসরি নিয়োগ করতে পারবে না।

Advertisement

সরকারের এই সিদ্ধান্তের আগে কলকাতা হাই কোর্টও কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের পক্ষে রায় দিয়েছে। বাম আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড সংক্রান্ত সুবিধা নিয়ে একটি মামলায় আদালত জানিয়ে দেয়, কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ বাধ্যতামূলক। ফলে সরকারের নতুন নির্দেশিকাটি আইনি বৈধতাও পেয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞপ্তি নিয়ে জটিলতার আর কোনও কারণ নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

সরকারের এই কড়া সিদ্ধান্তের ফলে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে না বলেই মনে করছেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরা। যে হেতু কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেই রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী, তাই এ বিষয়ে তিনিও কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়ে পক্ষপাতী ছিলেন। তাই নতুন বিজ্ঞপ্তি জারির পর স্বস্তিতে দফতরের শীর্ষ আধিকারিকেরা। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নতুন এই বিজ্ঞপ্তির ফলে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ অনেকটাই কমানো যাবে। সঙ্গে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন নিশ্চিত হবে। তা ছাড়া পুরসভা ও উন্নয়ন পর্ষদে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ নিয়োগ বন্ধ করা সম্ভব হবে। সঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগ কমলে প্রশাসনের উপর মানুষের আস্থাও বাড়বে।

এক আধিকারিক বলছেন, “সরকার চায়, নিয়োগ পদ্ধতিতে কোনও রকম দুর্নীতি যেন না থাকে। স্থানীয় ভাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বচ্ছতা থাকে না, তাই বাধ্যতামূলক ভাবে কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, ‘‘পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিতর্ক ও রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকায় সরকার এই কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ বাধ্যতামূলক হওয়ায়, পুরসভার কর্মসংস্থানে স্বচ্ছতা আসবে এবং অযোগ্য প্রার্থীরা আর রাজনৈতিক সুপারিশের মাধ্যমে চাকরি পাবেন না।’’ প্রশাসনিক মহলের একাংশ মনে করছে, এই উদ্যোগের ফলে শহরের উন্নয়ন সংস্থাগুলির কর্মসংস্থানে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement