অনুদান নেই, আলিয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক-পড়ুয়া

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ সংখ্যালঘু দফতরের হাতে। ২০১৬-র ৫ অক্টোবর অর্থ দফতর ডিসিআরবি স্কিম মঞ্জুর করলেও সংখ্যালঘু দফতরের তরফে এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৮
Share:

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজ্যের সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের শিক্ষার মানোন্নয়নে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হয়েছে ১১ বছর আগে। অথচ ওই প্রতিষ্ঠান এখনও নানা দিক থেকে অবহেলিত। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র ১২বি ধারায় অনুমোদন না-থাকায় অনুদান নেই। চালু হয়নি শিক্ষক-কর্মীদের মৃত্যু-পরবর্তী ও অবসরকালীন সুযোগসুবিধা বা ‘ডিসিআরবি স্কিম’। সব মিলিয়ে ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক, বিপাকে পড়েছেন সকলেই। দক্ষ শিক্ষকেরা আলিয়ায় আসতে চাইছেন না বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

Advertisement

ইউজিসি-র আইন (১৯৫৬) অনুযায়ী ১২বি ধারায় অনমোদন পেলে তবেই মেলে অনুদান। সেই অনুমোদন পেতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথমত, প্রতিটি বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকা চাই। সব বিভাগে তিন জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, দু’জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং এক জন প্রফেসর থাকতেই হবে। দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে জার্নালে। তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নত হওয়া চাই। এর মধ্যে কোনও একটি শর্ত পূরণে অপারগ হলে ১২বি-র অনুমোদন পাওয়া যায় না বলে জানাচ্ছেন শিক্ষা শিবিরের কর্তারা। শর্ত পূরণ করতে পারেনি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তাই বিশেষ আর্থিক সুবিধা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় বঞ্চিত হচ্ছে। এতে শিক্ষক ও পড়ুয়া দু’পক্ষই ক্ষুব্ধ।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ সংখ্যালঘু দফতরের হাতে। ২০১৬-র ৫ অক্টোবর অর্থ দফতর ডিসিআরবি স্কিম মঞ্জুর করলেও সংখ্যালঘু দফতরের তরফে এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। সংখ্যালঘু দফতরের সচিব পি বি সেলিম বলেন, ‘‘আলিয়ার ডিসিআরবি-র বিজ্ঞপ্তি ছাপানো হয়ে গিয়েছে।’’ যদিও আলিয়ার উপাচার্য মহম্মদ আলি বলেন, ‘‘ওই বিজ্ঞপ্তি এখনও হাতে পাইনি।’’

Advertisement

ইউজিসি-র ১২বি ধারায় অনুমোদন না-থাকায় ইউজিসি থেকে কোনও আর্থিক অনুদান পাচ্ছে না আলিয়া। এই অনুমোদন মিললে শিক্ষক ও পডুয়ারা ইউজিসি-র টাকায় গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে যেতে পারেন। কিন্তু আলিয়ার ক্ষেত্রে এই অনুমোদন না-মেলায় গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষক, গবেষকেরা অনুদান পাচ্ছেন না। আলিয়ার পূর্বতন রেজিস্ট্রার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘ডিসিআরবি চালু না-হওয়ায় এবং ইউজিসি-র ১২বি ধারায় অনুমোদন না-থাকায় অনেক কৃতী ছাত্র, শিক্ষক আলিয়ায় আসতে চাইছেন না।’’

অভিযোগ, আলিয়ার তুলনায় বয়সে নবীন উত্তরবঙ্গের গৌড়বঙ্গ, রায়গঞ্জ, দক্ষিণবঙ্গের কাজী নজরুল ইসলাম এবং সিধো-কানু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সব সুযোগসুবিধা আগেই চালু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘সরকারের টাকায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুধু ঝাঁ-চকচকে বহুতল বা়ড়ি তৈরিই হয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য পরিকাঠামো তৈরির কোনও কাজই হয়নি।’’ আলিয়ার কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে এমটেকের ছাত্র কাজী মিনহাজুল ইসলামের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন চালু হলেও এখনও এআইসিটিই (অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব টেকনিক্যাল এডুকেশন)-র অনুমোদন নেই। আর তা না-থাকায় কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা চাকরির জন্য ক্যাম্পাসিংয়ের সুবিধা পাচ্ছেন না। ‘‘অবিলম্বে আলিয়ার সমস্যার সমাধানে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই,’’ দাবি মিনহাজুলের। ইউজিসি-র ১২বি ধারা এবং এআইসিটিই-র অনুমোদন শীঘ্রই মিলবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আলিয়ার উপাচার্য মহম্মদ আলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন