অগস্টে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে দেড় দিন ঘেরাও করে রেখেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ। এ বারের ধর্না সময়ের দিক থেকে সেটাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।
এ বারেও ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের বিষয় অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়ার সরকারি সিদ্ধান্ত। এই দফার আন্দোলনে সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত যাদবপুরে অচলাবস্থা অব্যাহত।
কর্তৃপক্ষের তরফে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, ছাত্র, শিক্ষক-সহ সব পক্ষকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে যে-সিদ্ধান্ত হবে, সেটাই পাঠানো হবে রাজ্য সরকারের কাছে। মঙ্গলবার পড়ুয়ারা দাবি তোলেন, কমিটিতে তাঁদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কমিটি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সাত দিনের মধ্যে সরকারকে জানাবে। কোন কোন বিষয়ে তাঁদের আপত্তি, কর্মসমিতিতে সেগুলো পাশ করিয়ে নিতে হবে।
মঙ্গলবার বেশি রাত পর্যন্ত কর্মসমিতি এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাই পড়ুয়ারা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। ভিতরে আটকে থাকেন উপাচার্য এবং কর্মসমিতির অন্য সদস্যেরা। সোমবার বিকেলে কর্মসমিতির বৈঠকের বাইরে অবস্থান শুরু হয়েছিল।
‘‘এটি (অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়া) রাজ্য সরকারের বিষয়। কিন্তু পড়ুয়ারা তা শুনতে নারাজ। আমরা প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। কিন্তু ফল হয়নি,’’ বলেন সুরঞ্জনবাবু। আজ, বুধবার রাজ্যের শিল্প সম্মেলনে বিদেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মউ স্বাক্ষর করার কথা। সুরঞ্জনবাবু জানান, মউ বা সমঝোতাপত্রে সই করতে হয় উপাচার্যকেই। কিন্তু এ ভাবে অবস্থান চললে তিনি হয়তো যেতে পারবেন না। এবং মউ স্বাক্ষরও করা যাবে না।
অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিলের বিরোধিতায় পড়ুয়ারা সোমবার অবস্থান শুরু করায় তখন থেকেই ভিতরে আটকে আছেন উপাচার্য ও কর্মসমিতির অন্য সদস্যেরা। মঙ্গলবার সারা দিনেও কোনও সুরাহা হয়নি। এর মধ্যেই শিক্ষক সংগঠন জুটা ও আবুটা দাবি তোলে, কর্তৃপক্ষ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। সেই আলোচনার সিদ্ধান্ত রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হোক। শিক্ষক সংগঠনগুলি এ দিন জানিয়েছে, পড়ুয়াদের দাবির সঙ্গে তারা একমত। তবে জুটা-র বক্তব্য, পড়ুয়াদের দাবি সমর্থনযোগ্য হলেও অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে এমন অবস্থান সমর্থন করা যায় না। পড়ুয়ারা যথারীতি এটাকে ঘেরাও বলতে নারাজ। কিন্তু উপাচার্য এবং অন্যদের আটকেই থাকতে হচ্ছে।
পড়ুয়াদের এই ভূমিকায় নিন্দায় সরব হয়েছে শিক্ষা মহলের একাংশ। কারণ রাজনৈতিক ছাত্র সংসদের বদলে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়ার ব্যাপারে বিধানসভায় আইন পাশ করিয়ে নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেন্ট জেভিয়ার্সের মডেলে চলতি শিক্ষাবর্ষেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গঠনের জন্য ওই আইন পাশ করা হয়েছে। তার বিরোধিতায় অগস্টেও যাদবপুরের পড়ুয়ারা উপাচার্যকে প্রায় দেড় দিন ঘেরাও করে রেখেছিলেন। তার পরে পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠকও করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রায় কিছুই করার নেই বলে জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গঠনের বিরোধিতায় উপাচার্যকে আটকে রেখে বা অবস্থানে বসে কর্তৃপক্ষকে চাপে ফেলে কোনও লাভ নেই। কারণ ওই সিদ্ধান্ত অমান্য করে রাজনৈতিক ছাত্র সংসদ বহাল রাখার দাবি কর্তৃপক্ষ কোনও দিনও পূরণ করতে পারবেন না। তাই আদৌ এই আন্দোলন কতটা সমীচীন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকা।
পড়ুয়াদের লাগাতার অবস্থানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, এই ধরনের আন্দোলনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা যায় বলে মনে করেন না তিনি। ‘‘ওঁরা (আন্দোলনকারীরা) আমার কাছে এসেছিলেন। আবার আসতে পারেন। সিদ্ধান্তের কোন জায়গাটা তাঁদের খারাপ মনে হয়েছে, সেটা বলতে পারেন। কিন্তু এই ভাবে (অবস্থান) করে ‘হয় করো, নয় মরো’র মনোভাব থেকে সরে আসা উচিত। আমি গোটা পরিস্থিতির উপরেই নজর রাখছি,’’ বলেন পার্থবাবু। উপাচার্য-সহ কর্তাদের আটকে রাখার বিরোধিতা করেছেন তিনি।
‘‘ছাত্র সংসদ আর ছাত্র সমিতির মধ্যে এত ফারাক করা হচ্ছে কেন? কে বলেছে নির্বাচন হবে না,’’ প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রীই।