তলবের জবাবে শুভা ফের লোকই পাঠালেন

তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছিল তাঁর কাছে। চেয়েছিল খোদ সিবিআই। কিন্তু এ বারও তিনি নিজে এলেন না। এক প্রতিনিধি মারফত নথি পাঠিয়ে দিলেন সিবিআইয়ের দফতরে। মঙ্গলবার চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নের এ হেন অবস্থান তুলে দিল এক রাশ বিতর্ক। বারবার তলব এড়ানো সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেফতার না করায় যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমন কোনও মহলের আশঙ্কা, উনি তদন্ত-প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন না তো?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৭
Share:

তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছিল তাঁর কাছে। চেয়েছিল খোদ সিবিআই। কিন্তু এ বারও তিনি নিজে এলেন না। এক প্রতিনিধি মারফত নথি পাঠিয়ে দিলেন সিবিআইয়ের দফতরে।

Advertisement

মঙ্গলবার চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নের এ হেন অবস্থান তুলে দিল এক রাশ বিতর্ক। বারবার তলব এড়ানো সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেফতার না করায় যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমন কোনও মহলের আশঙ্কা, উনি তদন্ত-প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন না তো?

গত বছর ১৬ এপ্রিল ইডি-র হাতে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালি ও ছেলে শুভজিত্‌ গ্রেফতার হওয়া ইস্তক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ শুভাপ্রসন্নের নামও তদন্তে বহু বার উঠে এসেছে। সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তকারী সিবিআই এবং ইডি ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে শুভাকে নির্দিষ্ট নথি নিয়ে দেখা করতে বলেছিল। অধিকাংশ সময়ে তিনি নিজে না-এসে পাঠিয়ে দিয়েছেন কোনও না কোনও সহকারীকে। সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে এ পর্যন্ত তাঁকে দেখা গিয়েছে সাকুল্যে তিন বার দু’বার ইডি’তে। এক বার সিবিআইয়ে।

Advertisement

এ দিকে সিবিআই এবং ইডি দুই কেন্দ্রীয় সংস্থারই অভিযোগ, শুভাপ্রসন্ন সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না। শুরু না-হওয়া চ্যানেল সুদীপ্তকে বিক্রি, কিংবা নিজের সংস্থা দেবকৃপা ব্যাপার লিমিটেডের টাকার যে হিসেব তাঁর কাছে চাওয়া হয়েছিল, তা ঠিকঠাক পাওয়া যায়নি বলে তদন্তকারীদের দাবি। প্রসঙ্গত, সারদার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সন্তোষজনক হিসেব দিতে না পারায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।

তাই এখন প্রশ্ন উঠছে, একই কারণে শুভাপ্রসন্নও কেন গ্রেফতার হবেন না? বিশেষত যেখানে তিনি বারবার তলব এড়াচ্ছেন? অনেকের প্রশ্ন, এত সবের পরেও কি সারদা-শুভা যোগাযোগ সম্পর্কে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হতে পারেননি? নাকি তাঁকে ইচ্ছে করে ছেড়ে রাখা হয়েছে?

সিবিআই বা ইডি-র তরফে এর ‘সরকারি’ ব্যাখ্যা মেলেনি। এ দিন শুভাপ্রসন্নের তরফে সিবিআই অফিসে হাজির হয়েছিলেন রাজেশ গোয়েঙ্কা নামে এক যুবক। জানা গিয়েছে, তিনি শিল্পীর বাড়িতেই থাকেন, হিসেব-পত্র দেখভাল করেন। শুভাপ্রসন্ন আগেও তাঁকে একাধিক বার সিবিআই-ইডি’তে পাঠিয়েছেন প্রতিনিধি করে।

শুভাপ্রসন্নকে না-পেয়ে এ দিন রাজেশকেই এক দফা জেরা করেছেন সিবিআই অফিসারেরা। কিন্তু শুভাপ্রসন্ন কেন সিবিআই অফিসে গেলেন না?

তা নিয়েও ধোঁয়াশা। শিল্পীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও জবাব দেননি।

এ দিকে ইডি সূত্রের খবর, সম্প্রতি সংশোধনাগারে সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে শুভাপ্রসন্নের বিরুদ্ধে কিছু নতুন তথ্য মিলেছে। অভিযোগ, চ্যানেল বিক্রির চুক্তিতে উল্লিখিত টাকার বাইরেও তিনি সুদীপ্তের কাছ থেকে নগদে প্রায় দশ কোটি টাকা নিয়েছিলেন। ইডি এ প্রসঙ্গে শিল্পীর বক্তব্য জানতে চেয়েছে। “যদিও আমরা নিশ্চিত, এ বারও শুভাপ্রসন্ন নিজে দেখা দেবেন না,” বলছেন এক ইডি-অফিসার।

কিন্তু এত বড় ঘটনার তদন্তে এ ভাবে বারবার প্রতিনিধি পাঠিয়ে কেউ কি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন? বিশেষত তিনি যখন শহরেই রয়েছেন! আইন কী বলে?

আইনজ্ঞদের মতে, এতে আইনগত বাধা না-থাকলেও তদন্ত ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিলক্ষণ। বম্বে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “তদন্তকারীরা যদি মনে করেন, শুভাপ্রসন্নকে সমন পাঠাবেন। না-এলে ‘মেমো অফ অ্যারেস্ট’ পাঠিয়ে গ্রেফতার করতে পারেন।” কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের পর্যবেক্ষণ, “বারবার জেরা এড়ানোর চেষ্টা তদন্ত প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। ইডি, সিবিআই-ও দায় এড়াতে পারে না। শুভাপ্রসন্নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়ায় মানুষের মনে সন্দেহ বাড়ছে।” আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “তদন্ত চলাকালীন তদন্তকারী সংস্থার ক্ষমতাই সর্বোচ্চ। এটা সুপ্রিম কোর্টই বলে দিয়েছে। ফলে ডাকার পরেও না-গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তদন্তকারীর রয়েছে।” কী রকম?

মিলনবাবাবুর ব্যাখ্যা, “প্রথমেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যেতে পারে। তার পরে প্রয়োজনে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত। শেষে পলাতক হিসেবে নোটিস জারি হতে পারে।”

ইডি’র এক কর্তা অবশ্য ‘কৌশলগত’ কারণের কথা বলছেন। তাঁর মন্তব্য, “কিছু সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। তবে শিল্পীকে সময় দেওয়া হচ্ছে।” ওঁদের মতে, কেউ মিথ্যে বলে থাকলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মিথ্যের জালে আরও জড়াবেন, যাতে আখেরে তদন্তেই সুবিধা হবে। “ধৈর্য ধরুন। দেখুন না, কী হয়,” বলছেন তিনি।

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের গলাতেও এক সুর। “আমার মনে হয়, শুভাপ্রসন্নকে ইচ্ছে করেই ছেড়ে রাখছেন তদন্তকারীরা। সময় দিচ্ছেন,” বলছেন বিকাশবাবু। তাঁর মতে, “সমাজের এই ধরনের মানুষকে গ্রেফতার করার আগে দশ বার তো ভাবতেই হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন