জেলে সরস্বতী পুজো করালেন সুভাষ বসু

এক সময়ে মুর্শিদাবাদে সুভাষচন্দ্র বসু এসেছেন বেশ কয়েক বার। সভা করতে এসেছেন, জেল খাটতেও। ১৯২৩ সালে সুভাষকে বন্দি করে ব্রিটিশ পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৪
Share:

রঘুনাথগঞ্জের দফরপুরে এক জনসভায় সুভাষচন্দ্র বসু ও মৃণালিনী দেবী। ছবিটি জিয়াগঞ্জের স্বর্গীয় সুহাস অধিকারীর সৌজন্যে প্রাপ্ত।

এ রকমটা বারবার হয় না। সরস্বতী পুজো হতে হতে সাধারণত ফেব্রুয়ারি এসে যায়। ২৩ জানুয়ারি, নেতাজির জন্মদিনের গা ঘেঁষে বসন্ত বন্দনা তো আর সহজে হয় না!

Advertisement

এক সময়ে মুর্শিদাবাদে সুভাষচন্দ্র বসু এসেছেন বেশ কয়েক বার। সভা করতে এসেছেন, জেল খাটতেও। ১৯২৩ সালে সুভাষকে বন্দি করে ব্রিটিশ পুলিশ। পরের বছর তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বহরমপুর জেলের সাত নম্বর ঘরে। এখন সেটি হয়েছে মানসিক হাসপাতাল।

জেলের ভিতরে সরস্বতী পুজো করার জন্য সুভাষ জেদ ধরেন, জেল কর্তৃপক্ষ অবশেষে তা মেনে পুজোর ব্যবস্থা করেন। শোনা যায়, পুজো দেখতে যাওয়ার অছিলায় অনেকেই জেলের ভিতরে সুভাষের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ সুদে-আসলে মিটিয়েছিলেন। পুজো দেখার জন্য জেদ ধরে সে সময়ে বহরমপুরের নামী চিকিৎসক সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বছর বারোর মেয়ে ঊষাও। ডাক্তারবাবু আর কী করেন, মেয়েকে নিয়ে যান জেলখানায়। এই ঊষাই পরবর্তী কালে হন আইনজীবী তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম, পরে সাংসদ শশাঙ্কশেখর সান্যালের স্ত্রী। শশাঙ্কশেখর ও উষাদেবীর লেখা অনুসারে অবশ্য সেটি সরস্বতী পুজো ছিল না, ছিল দুর্গাপুজো। শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘সমকালীন ভারতে সুভাষচন্দ্র’ গ্রন্থ এবং বহরমপুর জেল থেকে দাদা শরৎচন্দ্র বসুকে লেখা সুভাষের চিঠি কিন্তু অন্য কথা বলে। লোকসংস্কৃতি গবেষক পুলকেন্দু সিংহ ‘মুর্শিদাবাদে সুভাষচন্দ্র’ গ্রন্থে লেখেন, ‘‘বহরমপুর জেল থেকে সুভাষচন্দ্র ৮।১২।১৯২৪ তারিখে শরৎচন্দ্র বসুকে লিখেছেন, ‘গত বুধবার আমি এখানে এসে পৌঁছেছি।’ অর্থাৎ তিনি বহরমপুরে এসেছিলেন ৩।১২।১৯২৪ তারিখে। এখান থেকে তিনি যান ২৫।১।১৯২৫ তারিখে। তখন দুর্গাপুজোর সময় নয়। সময়টি ছিল সরস্বতী পুজোর।’’

Advertisement

সুভাষচন্দ্র বহরমপুরে এলে হয় শশাঙ্কশেখর বা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ব্রজভূষণ গুপ্তের বাড়িতে উঠতেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের তহবিল সংগ্রহের জন্য বহরমরপুরে কৃষ্ণনাথ কলেজে এসে বক্তৃতাও করেছেন তিনি। তবে তাঁর এই জেলায় প্রথম আসা সম্ভবত ১৬-১৭ বয়সে, ছাত্রজীবনে, ১৯১৩-১৪ সাল নাগাদ। সুভাষের বাল্যবন্ধু, কৃষ্ণনগরের হেমন্ত সরকার লিখেছেন, ‘‘কৃষ্ণনগর থকে ট্রেনে আমরা পলাশি গেলাম।...যুদ্ধক্ষেত্রে ভ্রমণ করতে করতে আমি কবি নবীন সেনের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ আবৃত্তি করলাম। সেই আবৃত্তি শুনে সূভাষচন্দ্র চোখের জল ফেললেন।’’ পলাশি ভ্রমণের পরে সুভাষকে নিয়ে কয়েক বন্ধু যান বহরমপুরে হেমন্তকুমারের আত্মীয়ের বাড়ি়। পরদিন লালবাগ গিয়ে নবাব সিরাজের সমাধিক্ষেত্র দেখতে যান সুভাষ। ভাগীরথী সান্নিধ্যে আবৃত্তি করেন, ‘‘এই গঙ্গায় ডুবিয়াছি হায় ভারতের দিবাকর হে/ উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার হে।’’

বহরমপুর ছাড়াও বেশ কয়েক বার নানা কর্মসূচিতে জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, জিয়াগঞ্জ লালবাগ, বেলডাঙা, কান্দি, লালগোলা, গোকর্ণ, জেমো, পাঁচথুপি গিয়েছেন সুভাষ। রঘুনাথগঞ্জের সভা সেরে তিনি কলকাতায় জরুরি মিটিং-এ যাবেন। কিন্তু সুভাষ জঙ্গিপুর স্টেশনে পৌঁছতেই ট্রেন ছেড়ে দেয়। চলন্ত ট্রেনে উঠে চেন টেনে গাড়ি থামিয়ে সুভাষকে গাড়িতে তোলেন এক ছোকরা। সেই ছোকরাই পরে আরএসপি নেতা ত্রিদিব চৌধুরী।

বাঙালির ইতিহাস ভোলার বদনাম আছে। তবে বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপার টুপদেম রাটচি ভুটিয়া বলেন, “এখানে ইতিহাস কিন্তু আজও বেঁচে আছে। এ বারও যথাবিহিত সরস্বতী পুজো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন