চিট ফান্ড-কাণ্ডে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দলের সাংসদদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরের সামনে ধর্নায় বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। দুর্দিনে দল যে তাঁর পাশে রয়েছে, সে ব্যাপারে এই প্রবীণ নেতাকে আশ্বস্ত করতে সময়ান্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সুব্রত বক্সীর মতো নেতাদেরও তিনি পাঠিয়েছিলেন সুদীপবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। লোকসভায় তৃণমূলের এই দলনেতা এখন জেল হেফাজতে ভুবনেশ্বরের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। দু’দিন আগে শরীরে একটি সংক্রমণও হয়েছে। অসুস্থ সুদীপবাবুকে দেখতে এ বার নিজেই ভুবনেশ্বরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা বলেন, ‘‘সুদীপদা খুব অসুস্থ। তাই এক বার দেখতে যাব।’’ দলীয় সূত্রে বলা হয়, শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে পুরী যাবেন। জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দেবেন। পুরীতে তৃণমূলের পদযাত্রায় নেতৃত্বও দিতে পারেন মমতা।
রোজ ভ্যালি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে গত ৩ জানুয়ারি সুদীপবাবুকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। তাঁকে ভুবনেশ্বরে জেল হেফাজতে রাখা হয়। গত বছরখানেক ধরে এমনিতেই সুদীপবাবুর শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। জেলে থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। ফলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ হেন সুদীপবাবুকে দেখতে গত মাসে এক বার ভুবনেশ্বরের ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন সুব্রতবাবু ও পার্থবাবু। সুদীপবাবু যে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছেন না, তা তাঁরা ফিরে এসে মমতাকে জানান। ক’দিন পরে আবার মুকুল রায় সুদীপবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি সুদীপবাবুর একটি ছবি তুলে এনে দেখান মমতাকে। ভুবনেশ্বরে যাওয়ার কথা তখনই এক প্রকার ঠিক করে ফেলেন মমতা। সূত্রের মতে, সুদীপবাবুর সঙ্গে মমতার দেখা করার বিষয়ে সিবিআই আদালতের থেকেও অনুমতি নিয়েছে তৃণমূল। একই সঙ্গে তাপস পালের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন মমতা।
১ মে সুদীপবাবুর বন্দিদশার ১২০ দিন পূর্ণ হচ্ছে। ওই দিনই তাঁর জামিনের আর্জির শুনানি। তাঁর জামিনের ব্যাপারে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানো হবে বলেই দল সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: বিমার জোরে স্বাস্থ্য ফিরছে রাজ্যের
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা এ দিন বলেন, এমনিতেই অনেক দিন ধরে পুরী যাওয়া বকেয়া ছিল মমতার। গত বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের আগে পুরী যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন তিনি। তখন তা হয়ে ওঠেনি। এখন শুধু পুজো দেওয়া নয়, মমতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। প্রতিবেশী রাজ্যে সংগঠন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। লোকসভা ভোটে ওড়িশার কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথাও ভেবেছেন।
তবে সুদীপবাবুর সঙ্গে মমতার দেখা করতে যাওয়াই রাজনৈতিক ভাবে সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহের কথায়, ‘‘সুদীপদার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসল উদ্বেগ অন্য। উনি হয়তো আশঙ্কা করছেন, সারদা, নারদ কাণ্ডে অভিযুক্তরা তদন্তের চাপে মুখ খুলতে পারেন। তাতে ওঁর দুর্নীতি ফাঁস হয়ে যাবে। অভিযুক্তদের মুখ বন্ধ রাখতেই উনি তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।’’