College

Jalpaiguri: ‘শর্ত’ ছিল বিয়ের পরেও কলেজে পড়তে দিতে হবে, সিঁথিতে সিঁদুর নিয়েই ক্লাসে ফিরলেন সুজাতা

বাবা-মা প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি ডিঙোননি। যাঁর সঙ্গে বিয়ে হতে যাচ্ছে, সেই পিন্টু সরকার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। তবে কলেজমুখো হননি আর।

Advertisement

অর্জুন ভট্টাচার্য  

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৫:০৪
Share:

মঙ্গলবার কলেজের সামনে সুজাতা বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।

বাবা-মা প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি ডিঙোননি। যাঁর সঙ্গে বিয়ে হতে যাচ্ছে, সেই পিন্টু সরকার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। তবে কলেজমুখো হননি আর। কিন্তু পাত্রী তো কলেজে পড়েন। করোনা আবহে কলেজের দরজা বন্ধ হতে পারে, তাতে তো পড়া থামেনি। তাই সাত পাকে বাঁধা পড়ার আগে সুজাতা বিশ্বাস ‘শর্ত’ রেখেছিলেন শ্বশুরবাড়ির কাছে, বিয়ের পরেও কলেজে পড়তে দিতে হবে। মঙ্গলবার দরজা খুলল জলপাইগুড়ি প্রসন্নদেব মহিলা কলেজের। এবং সিঁথিতে সিঁদুর নিয়েই সেখানে থার্ড সিমেস্টারের ক্লাসে ফিরলেন সুজাতা।

Advertisement

বাবা জগদীশ পেশায় রং মিস্ত্রি। মা সবিতা পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের তিন মেয়েই পড়াশোনায় উৎসাহী। বড় সুজাতা কলেজে পড়ছেন। মেজ পূজা এখন কদমতলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট চায়না অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। করোনা শুরুর প্রথম দিকে কাজ হারান জগদীশ-সবিতা দু’জনই। শেষে কিছু একটা রোজগারের ব্যবস্থা হলেও আয় কমে যায়। মেয়েদের পড়াশোনা চালানো নিয়েও চিন্তা বাড়ছিল তাঁদের। জগদীশ বলেন, ‘‘আমরা তো প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডিই পার হতে পারিনি। মেয়েদের আগ্রহ দেখে ঠিক করি, যত অসুবিধেই হোক না কেন, ওদের লেখাপড়া বন্ধ করব না।’’

করোনা কালেই জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া নেতাজি সুভাষ উন্নয়নপল্লির বাসিন্দা, পেশায় নির্মাণ শ্রমিক সুশীল সরকারের ছেলে পিন্টুর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় সুজাতার। কিন্তু মেয়ের শর্ত, ‘‘বিয়ের পর কলেজে পড়তে দিতে হবে।’’ সেই শর্ত মেনে নেন শ্বশুরবাড়ির সকলে। ৮ মে সুজাতার বিয়ে হয়ে যায় বিদ্যুৎ মিস্ত্রি পিন্টুর সঙ্গে।

Advertisement

ছ’মাস পরে খুলল কলেজের দরজা এবং সেখানে ক্লাস করতে এলেন সুজাতা। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘স্বামী কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। কিন্তু আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি খুবই উৎসাহী। তাই যত কষ্টই হোক, সংসারের কাজ করেই পড়াশোনা চালিয়ে যাব।’’ পিন্টুও বলেন, ‘‘আর্থিক সঙ্গতি ছিল না বলে নিজে কলেজে পড়তে পারিনি। তাই সুজাতাকে কলেজে পড়ানোর মধ্যে দিয়েই আমার ইচ্ছে পূরণ করব।’’

সুজাতার ইচ্ছে, ‘‘পাশ করে স্কুল শিক্ষিকা হতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন