Narendra Modi at Durgapur

মোদী সফরের সকালে দুর্গাপুরে দরজায়-দরজায় সুকান্ত, আমন্ত্রণ সভায় যাওয়ার! ‘লোক হবে না, তাই এ সব’, কটাক্ষ তৃণমূলের

সুকান্ত দুর্গাপুর পৌঁছোচ্ছেন বৃহস্পতিবার রাতে। তাঁর সরকারি সফরসূচিতে লেখা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বেনাচিতি এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫ ১৬:১১
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা। তার কয়েক ঘণ্টা আগে দরজায়-দরজায় ঘুরছেন মোদী সরকারের এক মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে মন্ত্রী সশরীরে পৌঁছোচ্ছেন দুর্গাপুরবাসীর কাছে। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও উত্তরপূর্ব উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের যে সফরসূচি সরকারি ভাবে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের প্রশাসন, পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তা এবং রাজ্যপালের কাছে, তা শেষ মুহূর্তে বদলে না-গেলে শুক্রবার সকালে এমনই অভিনব ছবি তৈরি হতে চলেছে দুর্গাপুরে। যে কর্মসূচিকে তৃণমূল বলছে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রতিফলক। তবে বিজেপি বলছে, দলমতনির্বিশেষে সকলকে আমন্ত্রণই এই কর্মসূচির লক্ষ্য।

Advertisement

রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার বেলা ২টো নাগাদ পৌঁছেছেন দুর্গাপুর। সভার প্রস্তুতিপর্বের তত্ত্বাবধানে জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ, সৌমেন্দু অধিকারী, জ্যোতির্ময় মাহাতোরা সপ্তাহখানেক আগে থেকেই দুর্গাপুর যাতায়াত শুরু করেছিলেন। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসলও গত এক সপ্তাহে দুর্গাপুরে একাধিক বৈঠক সেরেছেন। মোদীর সভার দিন তিনেক আগে থেকে দুর্গাপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন প্রচার কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অগ্নিমিত্রা পাল।

সুকান্ত দুর্গাপুর পৌঁছোচ্ছেন বৃহস্পতিবার রাতে। তাঁর সরকারি সফরসূচিতে লেখা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বেনাচিতি এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার জন্য সুকান্ত আমন্ত্রণ জানাবেন। অর্থাৎ ওই এলাকার ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দাদের কাছে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরোধ করবেন, সকলে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে নেহরু স্টেডিয়ামের সভাস্থলে আসুন।

Advertisement

মে মাসের শেষ সপ্তাহে আলিপুরদুয়ারে সভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে সভার কয়েক ঘণ্টা আগে বিজেপির তরফে এমন কোনও ‘প্রচার কর্মসূচি’ নজরে পড়েনি। এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী অনেক বার বঙ্গের নানা প্রান্তে সভা করে গিয়েছেন। কিন্তু সভার কয়েক ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাজ্য বিজেপির একেবারে সামনের সারির কোনও নেতাকে এমন দরজায় দরজায় ‘আমন্ত্রণ’ নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়নি। দুর্গাপুরের সভার আগে এই ‘তৎপরতা’ কেন?

আশ্চর্য নয় যে, রাজ্যের শাসকদল কটাক্ষ করছে বিজেপির এই কর্মসূচিকে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘এই কর্মসূচির নেপথ্যে দুটো কারণ। প্রথমত, বিজেপি ভয় পাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর সভায় লোক হবে না। তাই সভার আগে সকালেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোক ডাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, এটা সুকান্ত মজুমদারের নিজের তরফে একটা ভেসে থাকার চেষ্টা। শমীক ভট্টাচার্য সভাপতি হয়ে গিয়েছেন। এখন তাঁকে ঘিরেই সব খবর হচ্ছে। তাই সুকান্ত এই কর্মসূচি করছেন। ছবি তুলে সমাজমাধ্যমে দেবেন।’’

বিজেপি অবশ্য এই কর্মসূচিকে ‘অভিনব’ বলে মানতেই রাজি নয়। প্রধানমন্ত্রীর সভার আগে সাধারণ জনতার মাঝে বরাবরই নানা ভাবে প্রচার চালানো হয় বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেটের কথায়, ‘‘আমি নিজেও তো মঙ্গলবার থেকে দুর্গাপুরে এসে প্রচার শুরু করেছি। পাড়ায় পাড়ায় যাচ্ছি। সাধারণ মানুষকে সভায় যেতে বলছি। তাঁদের হাতে কার্ড দিয়ে আসছি। আজ সন্ধ্যায় শমীকদাও বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার করবেন। শুক্রবার সকালে সুকান্তদাও তেমনই কর্মসূচি করবেন।’’ কিন্তু এ ভাবে লোক ডাকার প্রয়োজন পড়ছে কেন? ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’র কারণে? লকেট বলছেন, ‘‘একেবারেই না! দুর্গাপুর তথা গোটা পশ্চিম বর্ধমানে আমাদের সংগঠন খুব শক্তিশালী। দুর্গাপুরের বিধায়কও বিজেপিরই। আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকরা তো এমনিতেই জনসভায় আসবেন। কিন্তু আমরা চাইছি, অন্যরাও আসুন। বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস— সকলের বাড়িতেই আমরা পৌঁছোচ্ছি। দলমতনির্বিশেষে সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর সভায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। তাই দরজায় দরজায় যাওয়া।’’

শুক্রবার বেলা ২টো নাগাদ অণ্ডাল বিমানবন্দরে নামবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে সড়কপথে পৌঁছোবেন দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়াম। ওই যাত্রাপথের শেষ তিন কিলোমিটার ধরে রাস্তার দু’পাশে বিজেপি কর্মীদের জমায়েত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কনভয় ঘিরে পুষ্পবৃষ্টি হবে বলেও বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ, সভাস্থলে পৌঁছোনোর পথেই প্রায় রোড শোয়ের ধাঁচে একদফা জনসংযোগ সেরে নেবেন মোদী।

বেলা আড়াইটে নাগাদ তিনি প্রশাসনিক সভার মঞ্চে পৌঁছোবেন। তেল ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, সড়ক এবং রেল সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করবেন। তার মধ্যে রয়েছে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার ‘নগর গ্যাস সরবরাহ’ প্রকল্পের শিলান্যাস, যাতে খরচ হবে ১,৯৫০ কোটি টাকারও বেশি। দুর্গাপুর-হলদিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের দুর্গাপুর থেকে কলকাতা পর্যন্ত ১৩২ কিমি দীর্ঘ অংশটিও শুক্রবার জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন প্রধানমন্ত্রী। ১,১৯০ কোটি টাকা খরচে এই প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে দুর্গাপুর ইস্পাত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ‘ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজ়েশন’ ব্যবস্থারও উদ্বোধন করবেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের দাবি, এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১,৪৫৭ কোটি টাকা। ৩৯০ কোটি টাকা খরচে পুরুলিয়া-কোটশিলা ৩৬ কিমি রেলপথ ‘ডাবল লাইন’ করার কাজ শেষ। সেটিরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা থেকে। ‘সেতু ভারতম’ প্রকল্পের অধীনে পশ্চিম বর্ধমানের তোপসি ও পাণ্ডবেশ্বরে নির্মিত দুটি রোড ওভারব্রিজের উদ্বোধনও প্রধানমন্ত্রী করবেন, যার মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা।

বেলা ৩টেয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক জনসভা শুরু। রাজ্য বিজেপির গোটা নেতৃত্বই প্রধানমন্ত্রীর সভামঞ্চে হাজির থাকবেন। তবে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মোদীর এই জনসভায় শেষ পর্যন্ত যাচ্ছেন না। গত সোমবার দিলীপ আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছিলেন যে, নেতৃত্বের তরফ থেকে তাঁকে কেউ আমন্ত্রণ জানাননি। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমানের বিজেপি কর্মীরা তাঁকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যেতে অনুরোধ করছেন। তাই তিনি যাবেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনে চলে আসবেন। কিন্তু দিলীপের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, তিনি দুর্গাপুরে যাচ্ছেন না। কেন সিদ্ধান্ত বদল করলেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। দিলীপ ফোন ধরেননি।

অন্য দিকে, মোদীর সভার আগের দিনই পাল্টা জনসংযোগ এবং ভাষ্য তৈরিতে সক্রিয় হয়েছে তৃণমূল। দলের যুব সংগঠনের সভানেত্রী তথা যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ বৃহস্পতিবার পানাগড়ের দার্জিলিং মোড় থেকে গুরুদ্বার পর্যন্ত মিছিল করছেন। মোদীর সফরের আগের দিন বিবৃতি প্রকাশ করে বিজেপিকে বিঁধেছেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদও। দুর্গাপুরে বাম জমানায় বন্ধ হয়ে যাওয়া এমএএমসি, বিওজিএল, এইচএফসি-র মতো কারখানা আবার খোলার দাবি তুলেছেন কীর্তি। দুর্গাপুরের ইস্পাত কারখানাগুলির আধুনিকীকরণের দাবিও তুলেছেন। বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘ভাষণ দিতে বা বিভ্রান্ত করতে বাংলায় আসবেন না। আমাদের প্রাপ্য তহবিল সঙ্গে নিয়ে আসুন।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement