বাজার দর

হায় দেশি ডিম, তোমার দিন গিয়াছে

মাছে-ভাতে বাঙালির খাদ্য তালিকায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিমের কদর। তবে চাহিদার তুলনায় শহরাঞ্চলের বাজার গুলিতে দেশি হাঁস ডিমের আমদানি নেই বললেই চলে। ভিন্‌ রাজ্য থেকে এনে পোলট্রির ডিমের ঘাটতি মেটানো হচ্ছে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৮
Share:

দেশি হাঁসের ডিম অমিল, বিক্রি হচ্ছে চালানি হাঁসের ডিম। কৃষ্ণনগর পাত্রবাজারে সুদীপ ভট্টাচার্যের ছবি।

মাছে-ভাতে বাঙালির খাদ্য তালিকায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডিমের কদর। তবে চাহিদার তুলনায় শহরাঞ্চলের বাজার গুলিতে দেশি হাঁস ডিমের আমদানি নেই বললেই চলে। ভিন্‌ রাজ্য থেকে এনে পোলট্রির ডিমের ঘাটতি মেটানো হচ্ছে। অথচ দেশি ডিমের ঘাটতি রয়েই গিয়েছে। নরম হাঁসের ডিমের ডালনা, বেসন মিশিয়ে হাঁসের ডিমের অমলেট-কারি, কিংবা দেশি মুরগির ডিমের পোচ-কারি। ডিমের রন্ধন শৈলিতে রসনা তৃপ্তির হরেক রকম নিদান রয়েছে বটে। কিন্তু দেশি ডিমের অভাবে সেই আস্বাদ ভুলতে বসেছে শহুরে বাঙালি। প্রাণী সম্পদ দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, এ রাজ্যে প্রতিদিন পোলট্রি ডিমের চাহিদা আড়াই কোটির বেশি। রাজ্যে উত্‌পাদন হয় দেড় কোটি। বাকি এক কোটি ডিম আসে মূলত, অন্ধ্রপ্রদেশ, পঞ্জাব, ওডিশা থেকে। মাছ-মাংসের আগুন দরের জন্যই ডিমের চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বাড়ির আটপৌরে ডিম-ভাতের পাশাপাশি, পথেঘাটে ফাস্টফুডেও ডিম মাস্ট। ডিম ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বাজারে পোলট্রির ডিমের জোগানে বড় একটা ঘাটতি হয় না। তবে শহরাঞ্চলে অনেক বাজারেই এখন দেশি হাঁস ও মুরগির ডিম মহার্ঘ। অথচ অনেকেই বাজারে এসে দেশি ডিম খোঁজেন। জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্‌সক শুভেন্দু রায়ের বক্তব্য, “হাঁসের ডিমে উচ্চ প্রোটিন রয়েছে। ফলে, হাঁসের ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যকর। তবে সহজপাচ্য নয় বলে বুঝেশুনে খাওয়াই ভাল।”

Advertisement

বর্ধমানের গলসির বাসিন্দা ডিমের পাইকারি বিক্রেতা সামসের মোল্লার কথায়, “বর্ষাকালে হাঁস কম ডিম পাড়ে। সেজন্য এই সময় দেশি হাঁস ডিমের ঘাটতি দেখা দেয়। সেজন্য হাঁসের ডিমের দাম বেড়েছে।” দুর্গাপুরের চণ্ডীদাস বাজারে একজোড়া দেশি হাঁস ডিমের খুচরো দর ১৪-১৬ টাকা। প্রতি পিস ৭-৮ টাকা। এখন পাইকারি বাজারে একটি পোলট্রি ডিমের দাম ৩.৫০ টাকা। খুচরো পোলট্রি ডিমের দাম চার টাকা থেকে পাঁচ টাকার মধ্যে। রঘুনাথগঞ্জের ডিম ব্যবসায়ী কেতাবুল শেখের কথায়, “হাঁসের ডিমের কোনও বাজার নেই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়। বর্ষাকালে সংগ্রহের কাজটা কমে যায়। ফলে, দামটা বাড়ে।”

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বাজার গুলিতে দেশি হাঁস বা দেশি মুরগির ডিম মিলছে না। হলদিয়া টাউনশিপের বধূ সোমা নন্দ বলেন, “বাত-কাশির সতর্কবার্তা থাকলেও হাঁস ডিমের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা কিন্তু কমেনি। আমার পরিবারের সকলেই দেশি হাঁস বা দেশি মুরগির ডিম পছন্দ করেন। কিন্তু বাজারে দেশি ডিম একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। অগত্যা পোলট্রির ডিমই ভরসা।” পাইকরি ও খুচরো ডিমের ব্যবসায়ী বাসুদেব গুচ্ছাইত বলেন, “আগে কাঁথি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে হলদিয়ার বাজারে প্রচুর দেশি হাঁস ও মুরগির ডিম আসতো। গত দু’বছরে দেশি হাঁস ও মুরগির ডিমের আমদানি একেবারেই কমে গিয়েছে।”

Advertisement

আমদানি কমার কারণ কী? কৃষ্ণনগরের পাত্র বাজারের ডিম ব্যবসায়ী গৌতম পালের দাবি, “গ্রাম গঞ্জে দেশি হাঁস পালনের প্রবণতা কমছে। হাঁসের পরিবর্তে অনেকে এখন লাভজনক ছাগল পালনের দিকে ঝুঁকেছেন। চাহিদার অনুপাতে হাঁসের ডিমের জোগানে তাই ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।” ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অগ্রহায়ণ-চৈত্রে হাঁসেরা বেশি ডিম পাড়ে। ওই সময় কিছুটা ঘাটতি পূরণ হয়। এখন বাজারে ঘাটতি মেটাচ্ছে মাদ্রাজি হাঁসের ডিম। তবে সেই ডিমের স্বাদ মোটেই দেশির মতো নয়। কৃষ্ণনগরের পাত্র বাজারে দেশি হাঁস ডিমের খুচরো দর ১৪ টাকা জোড়া। মাদ্রাজি ডাকারি হাঁস ডিম ও দেশি মুরগি ডিমেরও এক দর। প্রতি পিস ৭টাকা। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ বাজারে খুচরো দেশি হাঁসের ডিমের দাম ৭-৮ টাকা পিস।

দেশি ডিমের দামে টেক্কা দিচ্ছে উত্তরবঙ্গ। কোচবিহারের বাজারে দেশি হাঁসের ডিমের দর প্রতি পিস ১৪ টাকা। দেশি মুরগির ডিম প্রতি পিস সাড়ে ১২ টাকা। বর্ষা-শরতে দেশি হাঁস ডিমের জোগান কম থাকে। তাই এই সময় ডিমের দামও পারদ চড়ে। দিনহাটার চওড়াহাটের ব্যবসায়ী তপন সাহা বলেন, “মনসা পুজোর জন্য ডিমের দাম বেড়েছে। কয়েকদিন ধরে দাম ওঠানামা করছিল।” এই সুযোগে আবার কোচবিহারের কোনও কোনও এলাকায় কোয়েলের ডিমকে (কোচবিহারের স্থানীয়রা বলেন ‘কয়লা’র ডিম) দেশি মুরগির ডিম বলে চালিয়ে দেওয়ারও হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন