Kamduni Case

হাই কোর্টে মুক্তি পাওয়া কামদুনির অভিযুক্তরা এখনই ‘মুক্ত’ নন, সুপ্রিম কোর্ট বলে দিল, বিধিনিষেধ মানতে হবে

হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দেশের শীর্ষ আদালতে মামলা করেছিল রাজ্য সরকার। সেই মামলার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৩৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্টে মুক্তি দিয়েছিল ফাঁসি এবং যাবজ্জীবনের শাস্তি থেকে। সুপ্রিম কোর্ট সেই ‘মুক্তি’র নির্দেশে আরোপ করল শর্ত। বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ আদালত জানাল, কামদুনি ধর্ষণ মামলা থেকে মুক্তি পাওয়া চার জনকে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।

Advertisement

কামদুনি মামলায় নিম্ন আদালতে ফাঁসির সাজা পাওয়া এক জনের শাস্তি মকুব করেছিল হাই কোর্ট। বাকি পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনকে যাবজ্জীবনের সাজা থেকেও মুক্তি দিয়েছিল। ইতিমধ্যেই তাদের দশ বছর কারাবাস হয়ে গিয়েছে— এই যুক্তিতে মুক্তি পেয়েছিল কামদুনির নৃশংস ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের ওই তিন অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এই চার জনের উপরেই কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

কামদুনি মামলায় হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দেশের শীর্ষ আদালতে মামলা করেছিল রাজ্য সরকার। সেই মামলার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। বিচারপতি বিআর গভাই এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ শুনানির পর একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেয়। বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, মুক্তি প্রাপ্তেরা জেলের বাইরে থাকলেও তাঁদের কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে আপাতত। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলে—

Advertisement

১) কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে যাঁরা মুক্তি পেয়েছেন, তাঁদের প্রতি মাসে সোম এবং শুক্রবার থানায় হাজিরা দিতে হবে।

২) যদি এঁদের কারও কাছে পাসপোর্ট থেকে থাকে, তবে সেই পাসপোর্ট জমা দিতে হবে পুলিশের কাছে।

৩) প্রত্যেকের মোবাইল নম্বর থানায় জমা দিতে হবে। মোবাইল তথ্যও থানায় জানাতে হবে।

৪) কোনও ভাবেই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের রাজারহাট থানার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছাড়তে পারবেন না তাঁরা।

৫) অভিযুক্ত চার জন কোথাও যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে পুলিশকে জানাবেন। কোথায় যাচ্ছেন তাঁরা, সেই তথ্যও পুলিশকে দিতে হবে। আবার ফিরে এসে রিপোর্ট করতে হবে থানায়।

৬) নিজেদের বাড়ির ঠিকানা, থাকার জায়গার ঠিকানা পুলিশকে জানাতে হবে। থাকার জায়গার কোনও রকম বদল হলে, সেই বদলের কথাও জানাতে হবে পুলিশকে।

৭) কোনও ভাবেই কামদুনির নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না তাঁরা।

৮) একই ধরনের কোনও অপরাধ করবেন না। বা এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে নিজেদের জড়াবেন না।

কামদুনির ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় গত ৬ অক্টোবর রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাই কোর্ট। এই মামলায় যে তিন জনের ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত, তাদের মধ্যে এক জনকে বেকসুর খালাস করে হাই কোর্ট। বাকি দু’জনের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি আরও তিন দোষী সাব্যস্তের সাজা মকুব করে হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। যুক্তি হিসাবে রাজ্য জানায়, এই ধরনের অপরাধের অপরাধী বেকসুর খালাস পেলে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হবে। সেই মামলারই শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। তবে কামদুনি মামলায় শীর্ষ আদালত আপাতত ওই নির্দেশ দিলেও মামলাটির শুনানি এখনও চলবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ঘটেছিল কামদুনির ঘটনা। নৃশংস ওই ঘটনার বিচারে তিন দোষী সাব্যস্ত সইফুল আলি, আনসার আলি, আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেয় নিম্ন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করকে। সাইফুল এবং আনসারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে বাকিদের সাজা মকুব করে কলকাতা হাই কোর্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন