পণ্য প্রবেশ কর

সুপ্রিম কোর্টের রায় গেল রাজ্যের পক্ষেই

পণ্য প্রবেশ কর ঘিরে তৈরি হওয়া দীর্ঘ দিনের আইনি জটে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট রায় দিল রাজ্যের পক্ষে। তারা জানিয়ে দিল, রাজ্যে ঢোকা পণ্যের উপর প্রবেশ কর বসানোর সাংবিধানিক অধিকার রাজ্যগুলির রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

পণ্য প্রবেশ কর ঘিরে তৈরি হওয়া দীর্ঘ দিনের আইনি জটে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট রায় দিল রাজ্যের পক্ষে। তারা জানিয়ে দিল, রাজ্যে ঢোকা পণ্যের উপর প্রবেশ কর বসানোর সাংবিধানিক অধিকার রাজ্যগুলির রয়েছে। আর তাতেই খুশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসন। এর ফলে রাজ্যের সামনে অন্তত ৩,৫০০ কোটি টাকা বকেয়া কর আদায়ের পথ খুলল বলে মনে করছে অর্থ দফতর।

Advertisement

এ দিন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘এই রায়ে আমরা খুশি। পণ্য প্রবেশ কর বসিয়ে যে কোনও ভুল করিনি তা প্রমাণিত হল। যে সব সংস্থা মামলা করে এতদিন ওই কর দেয়নি, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে তাদের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করব।’’ তাঁর দাবি, রাজ্যগুলি এখন বকেয়া সংগ্রহের পাশাপাশি যত দিন না পণ্য-পরিষেবা কর চালু হচ্ছে, তত দিন প্রবেশ করও আদায় করে যেতে পারবে।

অর্থ দফতরের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২-’১৩ সালে প্রথম পণ্য প্রবেশ কর বসাতে আইন পাশ করে। সে বছর এই খাতে আয় হয়েছিল প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা। কিন্তু কাঁচামালের উপর যুক্তমূল্য কর বসার পরে আবার এই প্রবেশ কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নিয়ে প্রতিবাদ জানায় রাজ্যের বেশ কিছু সংস্থা। কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় তারা। সেই মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চ প্রথমে রাজ্যের আইনটি বেআইনি ঘোষণা করে। তখন রাজ্য হাইকোর্টে দায়ের করে আপিল মামলা। সেখানে হাইকোর্ট বলে, রাজ্যের ওই কর আদায়ের অধিকার থাকলেও কোনও সংস্থাকে জোর করা যাবে না।

Advertisement

অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ের জেরে বহু সংস্থাই তা দেওয়া বন্ধ করে। রাজ্যও আর জোর খাটায়নি। ফলে বছরে ১,২০০ কোটি টাকার আয় কমে গড়ে ৬৫০ কোটির কাছাকাছি নামে। এখন সেই বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটিতে। দেশের অন্য রাজ্যগুলির সব মিলিয়ে এই খাতে প্রাপ্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি। বস্তুত, বকেয়া আদায়ের সূত্র ধরেই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল। এ দিন তারই রায় এসেছে।

অবশ্য একটি বাধা এখনও রয়ে গিয়েছে। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের ন’জন সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ওই কর বসানোর অধিকার রাজ্যের রয়েছে বলে জানালেও, এ ব্যাপারে প্রতিটি রাজ্যের সমস্যা আলাদা। যে কারণে রাজ্যগুলির জন্য আলাদা আলাদা ভাবে সুপ্রিম কোর্টেই ছোট ছোট তিন বা পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ তৈরির নির্দেশ দিয়েছে তারা। সেই বেঞ্চই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সম্পর্কে চূড়ান্ত রায় দেবে।

অমিতবাবু অবশ্য এর মধ্যে আশার আলোই দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নয় সদস্যের বেঞ্চ মূল সুরটি বেঁধে দিয়েছে। এ বার ছোট বেঞ্চগুলি রাজ্যের নিজস্ব পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত জানাবে। তাতে অন্তত পণ্য প্রবেশ করকে বেআইনি বলার জায়গা নেই। রাজ্যের আইন পোক্ত ভাবেই তৈরি হয়েছে। ফলে ছোট বেঞ্চেও জিতব আশা করছি।’’

অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, সেই জয় এলে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঢুকতে পারে কোষাগারে। এক কর্তার দাবি, প্রথম বছর ওই খাতে যে টাকা এসেছে, তা কার্যত অর্ধেক হয়েছে পরের বার থেকে। ২০১৫-’১৬ সালে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০০ কোটি। বকেয়া থেকে গিয়েছিল প্রায় ৮০০ কোটি। গত চার বছরের বকেয়াই এ বার আদায় করা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন