খারিজ পঞ্চায়েত মামলা, মুখে হাসি ফুটল মমতার

‘কোথাও সুষ্ঠু বা অবাধ ভোট হয়নি বলে কারও ক্ষোভ থাকলে, তিনি আলাদা মামলা (ইলেকশন পিটিশন) করতে পারবেন।’

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পঞ্চায়েত মামলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেই হাসি ফুটল। ভোট বাতিল করার যে দাবি বিরোধীরা জানিয়েছিলেন, তা আজ খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

তবে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চের রায়, ‘কোথাও সুষ্ঠু বা অবাধ ভোট হয়নি বলে কারও ক্ষোভ থাকলে, তিনি আলাদা মামলা (ইলেকশন পিটিশন) করতে পারবেন।’ কারণ, ‘বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমায় ব্যাপক হারে বাধা দেওয়া হয়েছিল কি না, সেই গুরুতর প্রশ্নেরও ফয়সালা হওয়া প্রয়োজন। বিশেষত যেখানে রাজ্য নির্বাচন কমিশনই ভয়ানক পরিস্থিতি দেখে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়েছিল।’

ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৫৮,৬৬৯২টি আসনের মধ্যে ২০,১৫৯টিতেই এ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। শাসক দলের সন্ত্রাসের জেরে মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বিরোধী দলগুলি। সুপ্রিম কোর্টের মত, এই অভিযোগ ‘যথেষ্ট গুরুতর’। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের বৈধতা রয়েছে কি না, তার বিচার পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনের ৭৯(১) ধারা অনুযায়ী ইলেকশন পিটিশনের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। বেঞ্চের তরফে রায় লিখতে গিয়ে বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড়ের যুক্তি, ‘২০ হাজারের বেশি আসনে নির্বাচন খারিজ করে দিতে হলে, কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, এর প্রতিটি আসনেই মনোনয়ন জমায় বাধা দিয়ে নির্বাচন বিষিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন সার্বিক ধারণা তৈরি করে ফেলা যায় না।’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘জয় গণতন্ত্রে’র, স্বস্তি মমতার

এত দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনগুলি নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারির উপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ দিনের রায়ের পরে তা উঠে গেল। সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারির ৩০ দিনের মধ্যে ইলেকশন পিটিশন দায়ের করা যাবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। আইন অনুযায়ী, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে আবেদন করতে হবে দেওয়ানি আদালতে। জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে জেলা আদালতে। প্রতিটি আসনের জন্য আলাদা মামলা করে প্রমাণ করতে হবে যে, নির্বাচন অবাধ হয়নি।

কেন মামলা খারিজ করা হচ্ছে তার যুক্তি দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, প্রথমত, বিরোধীরা গোড়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হননি। শুধু ই-মনোনয়নের আর্জি জানানো হয়েছিল। (হাইকোর্ট সেই অনুমতি দিলেও সুপ্রিম কোর্ট আজ তা খারিজ করে দিয়েছে।) দ্বিতীয়ত, শুনানির সময় তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যে সব প্রার্থী জিতেছেন, তাঁদের বক্তব্য শোনা হচ্ছে না। অথচ, নির্বাচন স্থগিতের রায় হলে তাঁরাই সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শীর্ষ আদালত সেই যুক্তি মেনে নিয়েছে।

আরও পড়ুন: বৈধতা পেলেই কি ন্যায্য, বলছে বিরোধীরা​

তৃতীয়ত, নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে তাতে বাধা না দেওয়াই সাধারণ প্রথা। তখন নির্বাচনী বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে গেলে ইলেকশন পিটিশন দায়ের করতে হয়। নির্বাচন কমিশন কোর্টে জানায়, অভিযোগ জমা পড়েছে মাত্র ১,৭০০টি। আর ইলেকশন পিটিশন হয়েছে ১৬৮টি।

প্রশ্ন হল, ইলেকশন পিটিশনই যদি বিবাদ নিষ্পত্তির পথ হয়, তা হলে সুপ্রিম কোর্টে তিন মাস ধরে মামলা চলল কেন? সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রবীণ আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবের ব্যাখ্যা, ‘‘বিরোধীদের কথা শুনে প্রাথমিক ভাবে আদালতের মনে হয়ে থাকতে পারে, রাজ্যে সার্বিক ভাবে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। পঞ্চায়েত ভোট করার মতো পরিস্থিতিই নেই। ফলে গোটা নির্বাচনটাই অবৈধ। তাই আদালত পুরোদস্তুর শুনানি করেছে। এবং শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে যে, পরিস্থিতি তেমন নয়।’’ আইনজীবীদের একাংশ এ-ও মনে করাচ্ছেন যে, হাইকোর্ট ই-মনোনয়নের অনুমতি দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে রাজ্য নির্বাচন কমিশনই প্রথম সুপ্রিম কোর্টে আসে।

ইলেকশন পিটিশনের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির কথা সুপ্রিম কোর্ট বললেও বাস্তবে এত মামলা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই ধারণা আইনজীবীদের। রাজনীতিকরাও বলছেন, ২০ হাজারের বেশি মামলা ঠোকার লোক কোথায়? তা ছাড়া, প্রথমে নিম্ন আদালত ও তার পর হাইকোর্টে মামলার নিষ্পত্তি হতেও বহু সময় গড়িয়ে যাবে। সুতরাং বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল কি না, তার ফয়সালা আদৌ কখনও হবে কি? প্রশ্ন সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন