—প্রতীকী চিত্র।
সাত বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন দু’জনে। তখন নাবালিকা ছিলেন তরুণী। সেই কারণে পকসো মামলায় জেলও হয়েছিল স্বামীর। মাসখানেক জেলে ছিলেন তিনি। সাত বছর পর সেই মামলায় অভিযুক্ত যুবককে বেকসুর খালাস করল আদালত।
কারণ, ভরা আদালতে দাঁড়িয়ে তরুণী বলেছেন, তিনি ওই যুবককে সত্যিই ভালবাসেন। কিন্তু পরিবার তাঁদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি বলেই বাধ্য হয়ে তিনি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন। তরুণীর এই বয়ানের ভিত্তিতেই গত বুধবার ওই রায় দিয়েছে কলকাতার কোর্ট।
ঘটনাচক্রে, আগের দিনই অর্থাৎ, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট পকসো আইন সংক্রান্ত একটি মামলার পর্যবেক্ষণে বলেছে, কিশোর-কিশোরীরা প্রেমে পড়লে পকসো আইনে তাদের অপরাধী হিসাবে দাগিয়ে দিয়ে জেলে পাঠানো উচিত নয়। শীর্ষ আদালতের মত, কিশোর-কিশোরীরা প্রেমে পড়লে তা কখনওই অপরাধ হতে পারে না। অপরাধী হিসাবে দাগিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে তাদের সম্পর্ককে সুরক্ষা দেওয়া জরুরি।
পকসো-র অধীনে যৌন সম্পর্কে সম্মতির বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করার বিরুদ্ধে আগেই সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছিল কেন্দ্র। তাদের বক্তব্য ছিল, সে ক্ষেত্রে নাবালক-নাবালিকাদের উপর যৌন হেনস্থা, নির্যাতন, এমনকি পাচারের ঘটনাও বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, নাবালক-নাবালিকার উপর যৌন হেনস্থার সঙ্গে এমন ঘটনা মিলিয়ে দেখা উচিত নয়, যেখানে প্রকৃত প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক রয়েছে। দু’তরফেই সম্মতি রয়েছে।
শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘‘এ রকম নানা ঘটনা ঘটে, যেখানে কিশোর-কিশোরী পরস্পরের প্রেমে পড়ে। অনেক সময়ে তারা বাড়ি থেকে পালিয়েও যায়। এটা বাস্তব। পকসো মামলা দেওয়া উচিত নয় এই ধরনের ঘটনায়। এ ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীরা অপরাধী নয়।’’
কলকাতার আদালতের বিচারক পাপিয়া দাসের ২৭ পাতার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের উল্লেখ অবশ্য নেই। তবে মিল রয়েছে ঘটনায়। ২০১৮ সালে ওই তরুণী (সেই সময়ে নাবালিকা) যুবকের সঙ্গে বারাণসী পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানেই বিয়ে করেছিলেন দু’জনে। পরে মেয়েটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পকসো আইনে মামলা রুজু করে যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তরুণীকেও হোমে পাঠানো হয়েছিল। চার্জশিটে পুলিশ দাবি করেছিল, যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতেই মেয়েটিকে অপহরণ করেছিলেন ওই যুবক। তাঁর হাত থেকে ‘নির্যাতিতা’কে উদ্ধার করা হয়েছে।
কিন্তু আদালতে তরুণী জানান, তিনি স্বেচ্ছায় পালিয়েছিলেন। বরং, তিনিই ওই যুবককে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য জোর করেছিলেন। পালিয়ে না গেলে আত্মহত্যা করবেন বলেও হুমকি দিয়েছিলেন। তরুণী এ-ও জানান, পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করেনি। তিনি এবং তাঁর স্বামীই থানায় গিয়েছিলেন। সেই সময়েই স্বামীকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁকে হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তরুণীর বয়ান শুনে বিচারক বলেন, ‘‘সন্দেহ যতই তীব্র হোক না কেন, প্রমাণ করতে না পারলে তা আদালতে ধোপে টেকে না। এ ক্ষেত্রেও যুবকের বিরুদ্ধে যে তথ্যপ্রমাণ পেশ করা হয়েছে, তাতে কিছুই প্রমাণিত হয় না।’’ অর্থাৎ, প্রকারান্তরে পুলিশি তদন্ত নিয়েই আদালত প্রশ্ন তুলেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি তামিলনাড়ু সরকারি একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিল, বিয়ে বা প্রেম-ভালবাসা সংক্রান্ত ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করার আগে পুলিশ সুপারের অনুমতি নিতে হবে। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল ‘শৈশব বাঁচাও আন্দোলন’ নামে একটি মঞ্চ। তারাও মঙ্গলবার সওয়াল করেছিল। ওই মঞ্চের দাবি ছিল, তামিলনাড়ু সরকারের এই নির্দেশিকার কারণে ভবিষ্যতে যুবক-যুবতীরা নাবালক-নাবালিকাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েও ছাড় পেয়ে যাবেন।
মঙ্গলবারের শুনানিতে শীর্ষ আদালতের বক্তব্য ছিল, এ ক্ষেত্রে পুলিশকে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। কোন ক্ষেত্রে কোন মামলা খাটে, তা পুলিশকেই ঠিক করতে হবে। দুই বিচারপতির বেঞ্চের বক্তব্য, ‘‘এখন ছেলেমেয়েরা স্কুলে একসঙ্গেই পড়াশোনা করে। তারা প্রেমে পড়তেই পারে। প্রেমে পড়া কি অপরাধ? তার জন্য ধর্ষণের মামলা দেওয়া যায়? এ ক্ষেত্রে মেয়েদেরও খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়। তারা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। প্রেমিকের থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং পরে তার জেলে কখনওই ভাল অভিজ্ঞতা হতে পারে না।’’