প্রচার শুরু, মানসের তালুকে সূর্য-বরণ

তিনি নিজে প্রার্থী। ভোট-যুদ্ধে দলের সেনাপতিও। তবু জেলায় পা রেখে নিজের নির্বাচনী এলাকা নয়, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র প্রচার শুরু করলেন কংগ্রেসের খাসতালুক থেকে। যে সবংয়ের বিদায়ী বিধায়ক মানস ভুঁইয়া সে দিনও কংগ্রেসের এক চলার পক্ষে সওয়াল করছিলেন, সেই সবংয়ের মাটিতেই জোরদার হল জোট-বার্তা।

Advertisement

বরুণ দে

সবং শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০৪:১০
Share:

হাতে হাত। সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে ভোট প্রচারে কংগ্রেসের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া। সোমবার সবংয়ে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

তিনি নিজে প্রার্থী। ভোট-যুদ্ধে দলের সেনাপতিও। তবু জেলায় পা রেখে নিজের নির্বাচনী এলাকা নয়, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র প্রচার শুরু করলেন কংগ্রেসের খাসতালুক থেকে। যে সবংয়ের বিদায়ী বিধায়ক মানস ভুঁইয়া সে দিনও কংগ্রেসের এক চলার পক্ষে সওয়াল করছিলেন, সেই সবংয়ের মাটিতেই জোরদার হল জোট-বার্তা।

Advertisement

সোমবার সকাল সওয়া দশটা। সবংয়ের দশগ্রামে এসে থামল সূর্যবাবুর গাড়ি। এগিয়ে এসে করমর্দন করলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া। কংগ্রেস কর্মীরা উত্তরীয় পরিয়ে, ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নিলেন সূর্যবাবুকে। তারপর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক আর জেলা কংগ্রেস সভাপতি একসঙ্গে এগিয়ে মিশে গেলেন দু’দলের যৌথ মিছিলে। স্লোগান উঠল, ‘সারদার সরকার, আর নেই দরকার’।

গত কয়েক দিনে জোট-আবহে কংগ্রেস-তৃণমূলকে পাশাপাশি দেখা গিয়ে গিয়েছে রাজ্যের নানা জায়গায়। মেদিনীপুর শহরেও দু’দলের ছাত্র-যুব সংগঠনের যৌথ মিছিল হয়েছে। তবে সিপিএমের শীর্ষ নেতাকে কংগ্রেসের গড়ে এ ভাবে সংবর্ধনা দেওয়ার দৃশ্য রাজ্যবাসী দেখেনি।

Advertisement

সংবর্ধনায় অভিভূত সূর্যবাবু নিজেও। বলছিলেন, “এমন দিন যে আসতে পারে কখনও ভাবিনি। ওঁদের (কংগ্রেসের) সঙ্গে আমাদের পুরনো শত্রুতা আজ নেই তো মানুষের জন্যই। গত ছ’মাসে মানুষ বুঝেছেন বাংলায় যদি সবাই একসঙ্গে লড়াই করে তা হলে এই সরকারকে হটানো যাবে। আজ কোনও নেতার বলার সাহস নেই যে আমি একাই চলব।’’

শাসকদল এই বিরোধী জোটকে প্রথম থেকেই কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। এ দিনই সূর্যবাবু যখন কংগ্রেসের ‘গড়ে’ জোটের পক্ষে সওয়াল করছেন, তখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সরিষা হাইস্কুল মাঠে এক প্রচার সভায় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যারা কাস্তে-হাতুড়ির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ,তারা আদর্শ বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের বুদ্ধি নেই, বিবেক নেই, সত্তা নেই। শুধু গদির লোভে করছে।’’

কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার নির্বাচনী কেন্দ্র সবং। এ বার এখনও তাঁর নাম ঘোষণা হয়নি। তবে কংগ্রেসের অন্দরের খবর, খাসতালুকে ফের মানসবাবুই প্রার্থী হবেন। এবং লড়বেন জোটের হয়ে। এ দিন মানসের গলাতেও জোটের সুর, “আজ থেকে এক নতুন বিবর্তনের রাজনীতির সূচনা হল। সব বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটল। এখন সময় হাতে হাত ধরে শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াই করার।” সূর্যবাবুকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি এই প্রদেশ কংগ্রেস নেতা। মানসবাবুর কথায়, ‘‘রবিবার ওঁর সঙ্গে (সূর্যকান্ত) কথা হয়। তখন বলি, দশগ্রামে আমাদের ছেলেরা ওঁকে সংবর্ধনা দেবে।’’ এ দিন সবংয়ে মিছিল করার পরে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র নারায়ণগড়ের চকমুকুন্দ, কুনারপুর-সহ কয়েকটি এলাকায় কর্মিসভা করেন সূর্যবাবু। আজ, মঙ্গলবারও নারায়ণগড়ে একাধিক কর্মিসভা করবেন তিনি। এ দিনের কর্মিসভাগুলিতে বারবারই জোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর ব্যাখ্যা, “এই পাঁচ বছরে আমাদের অভিজ্ঞতা অনেক বেড়েছে। পরিস্থিতি বুঝে আমাদের নতুন রাস্তা খুঁজতে হয়েছে। এমন বড় বিপদ আমাদের সামনে এর আগে কখনও আসেনি। তাই ঐক্যবদ্ধ লড়াই দরকার।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জোটকে ‘রামধনু জোট’ বলে কটাক্ষ করেন। সেই প্রসঙ্গ তুলেও বিঁধতে ছাড়েননি। সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘সব রং ওঁকে ছেড়ে গিয়েছে। যাঁরা পাঁচ বছর আগে ওঁর সঙ্গে ছিলেন, তাঁরা সকলে এখন অন্য দিকের লড়াইয়ে জোট বেঁধেছেন।’’

সূর্যবাবুর বক্তব্যে এ দিন উঠে এসেছে সবং কলেজে ছাত্র পরিষদ কর্মী খুনের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, “সবং কলেজে কী হয়েছে সকলে দেখেছেন। ও (কৃষ্ণপ্রসাদ জানা) তো লালঝান্ডার ছেলে ছিল না। কংগ্রেস বলে কি ছাড় পেয়েছে?”

এ দিন আগাগোড়া সূর্যবাবুর সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের বেলদা জোনাল কমিটির সম্পাদক মদন বসু। দিনের শেষে তিনি তৃপ্ত গলায় বললেন, “আজ শুরুটা চমত্‌কার হল। এটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে বাংলার ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে।” জোটের এই আবহে সূর্যবাবুর প্রথম দিনের প্রচারে খুশি জেলা কংগ্রেস নেতারাও। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশবাবুর মন্তব্য, ‘‘মানুষের জোট তৈরি হচ্ছে। তৃণমূলকে এর কাছে হার মানতেই হবে।’’ সূর্যবাবুও মনে করিয়ে দিলেন, ইতিহাসের ভাঙা-গড়া কিন্তু মানুষেরই হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন