রাজ্যে অতিবর্ষণ ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের যা উদ্যোগ থাকা দরকার ছিল, তা নেই বলে অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। শনিবার আলিমুদ্দিনে তিনি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে সরকারের একটি কন্ট্রোল রুম খুলে পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করা এবং প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমকে পরিস্থিতি জানানো উচিত। যা বাম আমলে করা হত। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।’’ সূর্যবাবুর অভিযোগ, এই ক’দিনে সব মিলিয়ে রাজ্যে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে যেমন অতি বৃষ্টি, বন্যায় মৃত্যু রয়েছে, তেমনই সাপের কামড়ে মৃত্যুও রয়েছে।
বস্তুত, সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষয়-ক্ষতি ও ত্রাণ নিয়ে প্রকৃত তথ্য আড়াল করার অভিযোগ তুলেছেন সূর্যবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কোথায় কী ক্ষতি হয়েছে, কত ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে, তা সরকারের বলা উচিত। কারণ, সরকারি ত্রাণ দেওয়া হয় জনগণের করের টাকায়।’’
অন্য দিকে এ দিন হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুর হয়ে হুগলির পুড়শুড়া, চাপাডাঙা, তারকেশ্বর, নালিকুল যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হয়ে কলকাতা ফেরেন তিনি। পুড়শুড়া বিডিও অফিসে তিনি দুই জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একে তো এত ভারী বর্ষা, তার উপর ভরা কোটাল। ডিভিসি-ও জল ছাড়ছে। জল না ছেড়ে উপায় নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আর কারও হাতে নেই! তবুও ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে, জল আস্তে আস্তে ছাড়তে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর বৃষ্টিতে রাজ্যে বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আরও বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি সে দিকেই যাবে। তবে, আমাদের গরিবের সংসার। তার মধ্যে সবটুকু সাধ্য নিয়ে মানুষের পাশে, দুর্গতদের পাশে আছি। মন্ত্রীদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নজরে রাখা হয়েছে। দুর্গতদের পাশে সরকার আছে।’’
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিপন্ন মানুষের ত্রাণের ব্যবস্থা সরকারই করবে। যে ভাবে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় হাবরায় ত্রাণ নিয়ে গিয়ে হেনস্থা হয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী এই মন্তব্য করেছিলেন। এ দিন রূপার নাম না করে সূর্যবাবু কার্যত তাঁরই পাশে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘‘সরকার যখন ত্রাণ নিয়ে পৌঁছতে পারছে না, তখন অন্য কেউ যাবে না, এটাই মুখ্যমন্ত্রীর মত। কিন্তু তাঁর উচিত ছিল, ত্রাণের জন্য সবাইকে আহ্বান জানানো। মু্খ্যমন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্য নিন্দনীয়।’’ সূর্যবাবু সরকারি ত্রাণ নিয়ে ব্লক থেকে জেলাস্তর পর্যন্ত সর্বদলীয় বৈঠক ডাকারও দাবি জানিয়েছেন।
দু’দিন আগে ত্রাণ চাইতে গিয়ে শাসক দলের হাতে সিপিএমের কর্মী খুন হয়েছেন এই অভিযোগ তুলে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘সরকারের উচিত ত্রাণ-বন্টন নিয়ে সরকারি স্তরে সমন্বয় কমিটি গঠন করা। কিন্তু তা না করে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণে নিষেধ করছেন। আর ত্রাণ চাইতে গিয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’
ত্রাণ নিয়ে সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকলে, তাঁরাও যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না— তা জানিয়ে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘সরকার ছাড়া কেউ ত্রাণ দিতে পারবে না, আমরা তা মানি না। সরকার যেখানে পৌঁছতে পারছে না, সেখানে যে কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সংগঠন পৌঁছনোর চেষ্টা করলে, তার পাশে দাঁড়ানোই সরকারের কাজ। সরকার ত্রাণ দিতে না পারলে আমরা ত্রাণ নিয়ে যাব। সরকারের কাজ ত্রাণ বন্টনে সমন্বয় সাধন।’’
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর লন্ডন সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত শহরে ফিরে এসেছেন। এ কাজকে সাধুবাদ জানিয়েও সূর্যবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উচিত আকাশ থেকে বন্যা পরিস্থিতি দেখা। তা না করে তিনি যদি নিজের বাহিনী নিয়ে জেলায় জেলায় ত্রাণ-পর্যটনে যান, তাহলে ভালর বদলে মন্দ হবে।’’
সিপিএমের রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, আবহাওয়া দফতরের আগাম সতর্কতা বা জলাধার থেকে জল ছাড়ার আগাম ঘোষণা সত্ত্বেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে রাজ্যবাসীকে আগাম সতর্ক করা হচ্ছে না। বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য সমস্ত বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছে সিপিএমের রাজ্য কমিটি।