এ বার পাক চর চক্রের যোগ মিলল হাওড়াতেও।
কলকাতা থেকে ধৃত পাক চর চক্রের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির জবানবন্দির ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাক্স ফোর্স (এসটিএফ) রবিবার বিকালে হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায় বাসিন্দা মহম্মদ ইলিয়াসের বাড়িতে হানা দেয়। ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাক চরদের জাল নথিপত্র সরবরাহ করার দায়িত্বে ছিল সে। এসটিএফ সূত্রের খবর, ইলিয়াসকে ধরা না গেলেও তার ফ্ল্যাট থেকে কিছু বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও কম্পিউটর বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
কলকাতা থেকে ধৃত ইরশাদ আনসারি, তার ছেলে আসফাক ও শ্যালক মহম্মদ জাহাঙ্গিরকে গ্রেফতরের পর পাকিস্তানি গুপ্তচর চক্রের সন্ধানে নেমে এসটিএফ শেখ বাদল নামে জাল পাসপোর্টের এক কারবারিকে গ্রেফতার করেছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসটিএফ জানতে পারে, এই কারবারের অন্যতম চাঁই হাওড়ার মহম্মদ ইলিয়াস। এসটিএফের দাবি, সে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে দালালির কাজ করার পাশাপাশি আইএসআই-এর চরদের জাল নথিপত্র সরবরাহ করত। এই কাজ করে সে ইতিমধ্যে বহু টাকা আয় করেছে।
এই তথ্য হাতে আসার পর রবিবার বিকালে এসটিএফের একটি দল হাওড়ার পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিকিয়াপাড়া এলাকার মধুসূদন বিশ্বাস লেনে হানা দেয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এসটিএফের দলটি প্রথমে যে বহুতল বাড়িতে যায়, সেই বাড়ির চারতলায় একটি ফ্ল্যাটে ইলিয়াস সপরিবারে থাকত। কিন্তু সেখানে ইলিয়াসকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকজন ও এলাকার বাসিন্দারা তদন্তকারীদের জানান, ইলিয়াস স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে মাস আড়াই আগে জার্মানি চলে গিয়েছে। ফ্ল্যাটে রেখে গিয়েছেন শাশুড়িকে। পুলিশ জানায়, ওই ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু জাল নথি তৈরির কাগজপত্র ও কম্পিউটর উদ্ধার করা হয়েছে। এই সব তথ্য থেকে ইলিয়াসের পাক যোগ সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে বলে এসটিএফের দাবি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলিয়াসরা তিন ভাই। পাশের পাড়া নূর মহম্মদ মুন্সি লেনে থাকেন দুই ভাই মহম্মদ ফারুক ও মহম্মদ ইদ্রিশ। তদন্তকারী দলটি রবিবার ইলিয়াসের ফ্ল্যাট ছাড়াও তাঁর ভাই ফারুকের ফ্ল্যাটেও হানা দেয়। সেখানে তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ফারুককে সোমবার এসটিএফের দফতরে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, এর আগে ফারুকও জাল নথি তৈরি করার অভিযোগে বার কয়েক হাওড়া পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। তবে সম্প্রতি সে এ সব কাজ ছেড়ে দিয়েছে বলে ফারুকের দাবি।
এ দিন টিকিয়াপাড়ায় তস্য গলির ভিতর মহম্মদ ফারুকের ফ্ল্যাট বাড়ির নিচে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার লোকজন ভিড় জমিয়েছেন সেখানে। সকলেরই আলোচনা ফারকদের নিয়ে। এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ শামিম বলেন, ‘‘পাক চরদের সঙ্গে এদের যোগাযোগ আছে জানতাম না। তবে জাল নথিপত্র তৈরি করে টাকা আয় করত, এটা আমরা জানতাম।’’
বাড়িতে যে নানা রকম শংসাপত্র তৈরি হত তা মানছেন ইলিয়াসের শাশুড়ি শামিমা খাতুনও। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি জামাই কী সব শংসাপত্র তৈরির কাজ করত। তবে জাল পাসপোর্ট তৈরি করত বলে শুনিনি।’’ শামিমা জানান, মাস আড়াই আগে ইলিয়াস তার স্ত্রী-পুত্র নিয়ে জার্মানি চলে গিয়েছে। কবে ফিরবে তা তিনি জানেন না বলেও শামিমা দাবি করেছেন।