Suvendu Adhikari

বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযান: বাঙালি-হেনস্থা নিয়ে মমতার আক্রমণের জবাবে শুভেন্দুর অস্ত্র বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ

ধর্মতলার সমাবেশে মমতা বলেন, “আমাদের দর্শন, বিজেপির বিসর্জন। বাকিটা নির্বাচনের সময় বুঝিয়ে বলব।” শিলিগুড়ি থেকে শুভেন্দুর জবাব, “চ্যালেঞ্জ করছি, ২০২৬-এ (মমতাকে) প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব।”

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ১৮:০৮
Share:

(বাঁ দিকে) তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা নিয়ে বার বার সরব হচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাই তৃণমূলের বার্ষিক সভা থেকেও এ নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। এবং আবার ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ তত্ত্বেই মমতার দিকে পাল্টা আক্রমণ শানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের ভোটার তালিকা যে সব পক্ষেরই নজরে, তা মমতা-শুভেন্দু দুই যুযুধানই আর এক বার স্পষ্ট করে দিলেন সোমবার। রাজ্যের দুই প্রান্ত থেকে।

Advertisement

তৃণমূলের বার্ষিক সভার দিনেই শিলিগুড়িতে ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এর ডাক দেয় রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চা। সেখানেই বক্তৃতার সময় অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী বিতর্কে মন্তব্য করেন শুভেন্দু। নিশানায় বাংলাদেশি মুসলিম এবং রোহিঙ্গারা। বিরোধী দলনেতা বলেন, “ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা এসেছেন, তাঁরা মোদীজির চোখে শরণার্থী। অনুপ্রবেশকারী নন। এখানে ভারতীয় মুসলিমেরা আছেন। আপনাদের কোনও চিন্তা নেই। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। কিন্তু বাংলাদেশি মুসলিম এবং রোহিঙ্গাদের একজনকেও ভোটার তালিকায় থাকতে দেব না।” বিহারে বিধানসভা ভোটের আগে বিশেষ সমীক্ষা শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশন আগেই জানিয়েছে, আগামী দিনে অন্য রাজ্যগুলিতেও এই প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় তারা। শুভেন্দু নিজেও এই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন। সোমবার ফের তিনি দাবি করেন, বিহারের মতো ভোটার সমীক্ষা এ রাজ্যেও চাই।

বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর নিপীড়নের অভিযোগে সোমবার ধর্মতলার সভা থেকে বিজেপির দিকে আবার আঙুল তোলেন মমতা। বলেন, “বাংলা ভাষায় নাকি কথা বলা যাবে না! কে মাছ খাবে, কে মাংস খাবে, কে ডিম খাবে ওরা ঠিক করে দেবে! বিজেপির এক জন নেতা বলছেন এখানে নাকি ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। মোট কত রোহিঙ্গা? আপনি এত জনকে বাংলাতেই বা পেলেন কোথায়?” মমতা হুঁশিয়ারি দেন, “বাংলার মানুষকে যদি বাংলা বলার জন্য বাইরে গ্রেফতার করা হয় এই লড়াই কিন্তু দিল্লিতে হবে।” এ প্রসঙ্গে মন্তব্যের সময় তিনি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। আবার ‘ভাষা আন্দোলন’ শুরু হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

Advertisement

মমতাকে পাল্টা শুভেন্দুর

আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য মমতা নতুন স্লোগান বেঁধে দিয়েছেন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে। বিজেপিকে নিশানা করে তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, “আমাদের দর্শন, বিজেপির বিসর্জন। বাকিটা নির্বাচনের সময় বুঝিয়ে বলব।” শিলিগুড়ির সভা থেকে মমতার উদ্দেশে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন শুভেন্দুও। আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে পরাস্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, “চ্যালেঞ্জ করছি ২০২৬-এ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব। আমি চ্যালেঞ্জ করছি আপনাকে।”

ধর্মতলার সভা থেকে রাজ্যে বেকারত্ব দূর করার প্রসঙ্গ নিয়েও মন্তব্য করেছেন মমতা। তৃণমূলনেত্রী জানান, তাঁর সরকার রাজ্যে বেকারত্ব ৪০ শতাংশ কমিয়েছে। ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এর মঞ্চ থেকে তা নিয়েও মমতাকে পাল্টা দেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতার দাবি, এই “বড় বড় কথা। এই রাজ্যে নাকি তিনি সকলকে কাজ দিয়েছেন। ৬০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক কেন? ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকার কেন? শিল্প তুলে দিয়েছেন কেন? কোনওটার উত্তর নেই ওনার কাছে?”

উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনার তত্ত্ব

উত্তরবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে আগেও বহু বার সরব হয়েছে বিজেপি। সোমবার ফের তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারকে বিঁধলেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা বলেন, “উত্তরবঙ্গে প্রকৃতি যা যা দিয়েছে, সব লুট করেছে। বালি, পাথর, গাছ কিছুই নেই। পাহাড়ের উপর বঞ্চনা হয়েছে।” চা-বাগানের শ্রমিকেরা ঠিকঠাক মজুরি পান না বলেও অভিযোগ শুভেন্দুর। তাঁর দাবি, উত্তরবঙ্গের হাসপাতালগুলিতে নিউরোলজিস্ট নেই। কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে এমস তৈরি করতে চাইলেও রাজ্য সরকার জায়গা দেয় না বলে অভিযোগ তাঁর। বিরোধী দলনেতা জানান, আগামী ৪ অগস্ট দলের ৬৫ জন বিধায়ককে নিয়ে কোচবিহারে যাবেন। তখন দলের সব বিধায়ক মিলে উত্তরকন্যাতেও যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, “সচিবের সঙ্গে দেখা করব। এর আগে দেখা করতে দেয়নি। এ বার দেখব কে আটকায়।”

উঠল নিশীথের হারের কথাও

গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের পরাজয় নিয়েও সোমবার মন্তব্য করেন শুভেন্দু। এ বিষয়ে সরাসরি কোচবিহারের জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে নিশানা করেন তিনি। শুভেন্দুর অভিযোগ, গণনাকেন্দ্রে প্রবেশ করে নিশীথকে হারানো হয়েছে। তিনি বলেন, “চার ঘণ্টা সিসিটিভি বন্ধ রেখে ছাপ্পা মেরেছে। আমি প্রমাণ করে দেব।” বস্তুত, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টে গত বছরই একটি মামলা করেন নিশীথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement