পরিদর্শন: ইসলামপুরে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার থেকেই ইসলামপুরে প্রচার হয়েছিল, বুধবার বন্ধের দিন শহরে সভা করবেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তাঁকে আটকাতে তাই এ দিন মরিয়া ছিল বিজেপি। অভিযোগ, মন্ত্রীকে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে আনতে যে পাইলট ভ্যানটি যাওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাদ যায়নি বিজেপি সমর্থকদের আক্রমণের হাত থেকে। সরকারি বাস ভাঙচুর, রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভও শুরু হয়ে গিয়েছিল সকাল থেকে। তার পরেও ইসলামপুরে আসেন শুভেন্দু। বাস স্ট্যান্ডের সভায় কয়েক হাজার মানুষের সামনে বলেন, ‘‘আমি নন্দীগ্রাম ফাঁকা করেছি। জঙ্গলমহল ফাঁকা করেছি। যখন তখন আসব।’’ পরে তিনি জানান, ‘‘সামনের সপ্তাহেই আসছি। চ্যালেঞ্জ করছি, রুখে দেখাক।’’
গোলমালের সূত্রপাত সকাল থেকেই। অভিযোগ, শুভেন্দুর পাইলট ভ্যানকে শহরের কলেজ মোড় এবং শ্রীকৃষ্ণপুরে আটকানো হয়। গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে চাউর হয়ে যায়, শুভেন্দু এ দিন ইসলামপুরে না-ও আসতে পারেন। প্রমাদ গোনেন তৃণমূলের কর্মীরা। পরে তাঁদের কেউ কেউ বলেন, মন্ত্রী না এলে সেটা দলের পক্ষে বড় ধাক্কা হত।
কিছু ক্ষণ বিমানবন্দরে অপেক্ষা করে দুপুর দুটো নাগাদ বাগডোগরা থেকে রওনা দেন শুভেন্দু। তত ক্ষণে তাঁর কাছে অভিযোগ এসেছে, একাধিক বাসে আগুন লাগিয়েছেন বন্ধ সমর্থকরা। পাথর ফেলে রাস্তা বন্ধেরও চেষ্টা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি, চোপড়া, সোনাপুর থেকে দলীয় কর্মীরা শুভেন্দুর যাত্রাপথ ‘পাহারার’ দায়িত্ব নেন।
শেষ পর্যন্ত বিকেলে ইসলামপুরে সভা করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘দু-চারটে বাস পুড়িয়ে আমাকে আটকানো যাবে না।’’ এর মধ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ৭ জন বিহারের বাসিন্দা।
সভা থেকে শুভেন্দু নিহত রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মণের পরিবারকেও বার্তা দেন। তাঁর কথায়, ‘‘তাঁরা যে ধরনের ক্ষতিপূরণ বা সাহায্য চাইবেন, তাই নিয়েই তাঁদের পাশে দাঁড়াব। দাড়িভিটের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। হত্যাকারীদের শাস্তি হোক।’’ একই সঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যেই রাজেশ ও তাপসের বাড়িতে যাব। তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে মুখমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি করার অভিযোগ নিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘কেউ কেউ বলছে, পুলিশ সাইলেন্সার লাগিয়ে গুলি করেছে। এটা কখনও শুনিনি।’’
মন্ত্রীর সভার পরে এখনও অবশ্য রাজেশ বা তাপসের পরিবার থেকে কোনও রকম সাহায্য চাওয়া হয়নি, জানান এলাকার বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবাল। রাজেশের বাবা দুলাল সরকার বলেন, ‘‘আমরা শুধুমাত্র ন্যায্য বিচার চাই।’’ একই কথা বলেছেন তাপসের মা মঞ্জু বর্মণ।
শুভেন্দুর কনভয় বাগডোগরার দিকে চলে যাওয়ার পরে ইসলামপুরের জীবন মোড় এলাকায় নতুন করে গোলমাল বাধে। এ দিনের সব গোলমালের জন্য শুভেন্দু সফরকেই দায়ী করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ইসলামপুরে তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। তাই সেখানে কর্মীদের সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। এখন প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিবারগুলিকে কিনতে চাইছেন।’’