Swami Vivekananda

স্বামী বিবেকানন্দের বাংলা গদ্যের কথা ভুলেই গেল বাঙালি?

সরাসরি প্রকাশের উন্মুখতা থেকে জেগে ওঠা এই সৎ গদ্য বাংলায় এখন বিরল। স্বামী বিবেকানন্দের ১৫৬তম জন্মদিবসে লিখছেন আশিস পাঠকবাংলা গদ্যের শিরদাঁড়া এই বিপুল মুক্ত ক্ষেত্রেও বুক বেঁধে দাঁড়াতে পারল না। দু’-একটি ব্যতিক্রম ছেড়ে দিলে বাঙালির গদ্য এখনও অস্পষ্ট, দুমুখো।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ২০:৫১
Share:

স্বামী বিবেকানন্দের প্রথম মৌলিক বই কিন্তু প্রকাশিত হয়েছিল সাধু রীতির গদ্যে, ‘বর্তমান ভারত’।

সোজা কথা সোজা করে বলতে বাঙালি এখন প্রায় ভুলেই গিয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দের সময়ের তুলনায় আমাদের এই চলতি সময়ে কথা লেখার ক্ষেত্র আর স্বাধীনতা দুটোই অনেক অনেক বেশি। কিন্তু বাংলা গদ্যের শিরদাঁড়া এই বিপুল মুক্ত ক্ষেত্রেও বুক বেঁধে দাঁড়াতে পারল না। দু’-একটি ব্যতিক্রম ছেড়ে দিলে বাঙালির গদ্য এখনও অস্পষ্ট, দুমুখো।

Advertisement

তার কারণ কি এটাই যে ভাবনার যুক্তিক্রম, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘স্ট্রাকচার্ড থিংকিং’ সে বিষয়ে বাংলা প্রবন্ধ-নিবন্ধের অধিকাংশ গদ্যলেখক এখনও শিক্ষানবিশ? হতে পারে, কিন্তু তার চেয়ে বড় কারণ বোধহয় বাঙালি চিন্তায় সততা ও স্বচ্ছতা ক্রমেই কমে আসছে, বাড়ছে পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার প্রবণতা। অথচ সময়টা একদিন এ রকম ছিল না। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনের আগে তাঁর বাংলা লেখাগুলি আর এক বার পড়তে গিয়ে মনে হল তাঁর আরও অনেক দিকের মতোই এ দিকটাও পূজার ছলে ভুলেই থেকেছে বাঙালি।

বাগবাজারের বলরাম বসুকে ইলাহাবাদ থেকে ৫ জানুয়ারি, ১৮৯০ নরেন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘...ইতিপূর্বে আপনাকে এক পত্র লিখি– তাহা কি আপনি পাইয়াছেন, না bearing (বিনা মাশুলে প্রেরিত) দেখিয়া...take it করিয়াছেন? আমি বলি change (বায়ু পরিবর্তন) করিতে হয় তো শুভস্য শীঘ্রম। রাগ করিবেন না- আপনার একটি স্বভাব এই যে, ক্রমাগত ‘বামুনের গরু’ খুঁজিতে থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ জগতে সকল সময় তাহা পাওয়া যায় না।’

Advertisement

আরও পড়ুন:

স্বামীজির জন্মদিনে জাতীয় ছুটির দাবি

বিবেক-জয়ন্তীতে ফের গেরুয়া টক্কর

কিংবা সংস্কৃত সাহিত্যের 'গীতগোবিন্দ' প্রসঙ্গে শিষ্য শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীকে বলেছিলেন, ‘‘জয়দেবই সংস্কৃত ভাষার শেষ কবি। তবে জয়দেব ভাবাপেক্ষা অনেকস্থলে jingling of words (শ্রুতিমধুর বাক্যবিন্যাস)-এর দিকে বেশী নজর রেখেছেন। দ্যাখ দেখি গীতগোবিন্দের ‘পতিত পতত্রে’ ইত্যাদি শ্লোকে অনুরাগ ব্যাকুলতার কি culmination (পরাকাষ্ঠা) দেখিয়েছেন? আত্মদর্শনের জন্য ঐ রূপ অনুরাগ চাই, প্রাণের ভিতরটা ছটফট করা চাই।’’

সরাসরি প্রকাশের উন্মুখতা থেকে জেগে ওঠা এই সৎ গদ্য বাংলায় এখন বিরল। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে বিবেকানন্দের প্রায় সব মন্তব্য আছে তাঁর শিষ্য শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীর ‘স্বামী শিষ্য সংবাদ’-এ। আর তার সঙ্গে পত্রাবলী ও গদ্যগ্রন্থগুলিতে (প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, বর্তমান ভারত ইত্যাদি) গদ্যকার বিবেকানন্দকে চেনা যায়।

আরও পড়ুন: মন দিয়ে তাঁকে পড়া দরকার

স্বামী বিবেকানন্দের প্রথম মৌলিক বই কিন্তু প্রকাশিত হয়েছিল সাধু রীতির গদ্যে, ‘বর্তমান ভারত’। এর পরেই প্রকাশিত হল ‘পরিব্রাজক’, চলিত গদ্যে। ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ গদ্যমালা প্রকাশিত হয়েছিল উদ্বোধন পত্রিকায়। তাঁর সময়ে মুখের ভাষাকে এমন সরাসরি, এত জোরের সঙ্গে কলমে আনতে পারেননি কেউ।

‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’-এ লিখছেন, ‘তুমি ইওরোপী, কোন দেশকে কবে ভাল করেছ? অপেক্ষাকৃত অবনত জাতিকে তোলবার তোমার শক্তি কোথায়? যেখানে দুর্বল জাতী পেয়েছ, তাদের সমূলে উৎসাদন করেছ, তাদের জমিতে তোমরা বাস করেছ, তারা একেবারে বিনষ্ট হয়ে গেছে। তোমাদের আমেরিকার ইতিহাস কি? তোমাদের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ– তোমাদের আফ্রিকা?’

টাকও হয় টিকিও হয় গোছের লেখা পড়তে পড়তে ক্লান্ত বাঙালি বিবেকানন্দের এই দিকটাকে নতুন করে ভাবার চেষ্টা করবে কি?

করলে, জাগরণ মঞ্চের চেয়ে কম জেগে ওঠা হবে না সেটা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন