কে তবসসুম, খোঁজ পড়ল নেত্রীর ঘোষণায়

প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল তাঁর স্বামীর। কিন্তু নির্দিষ্ট ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে পড়ায় দল প্রার্থী করে তাঁকে। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেও গিয়েছেন।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী ও সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৪২
Share:

স্বামীর সঙ্গে ডেপুটি মেয়র তবসসুম। ইনসেটে, চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়।

প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল তাঁর স্বামীর। কিন্তু নির্দিষ্ট ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে পড়ায় দল প্রার্থী করে তাঁকে। প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেও গিয়েছেন। কিন্তু সে জন্য যে এত বড় পদে বসিয়ে দেবে দল, কুলটির কেন্দুয়া মোড় এলাকার বাসিন্দা তবসসুম আরা বোধহয় তা নিজেও কল্পনা করেননি।
মঙ্গলবার কলকাতার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র থেকে আসানসোলে ডেপুটি মেয়র হিসেবে তবসসুমের নাম ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দলের পরিচিত মুখ না হওয়ায় তবসসুমকে নিয়ে আসানসোলে তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় কী, কেনই বা হঠাৎ তাঁকে এই পদে বসানো হল, সে সবের খোঁজ পড়ে। তবসসুমকে নিয়ে কৌতূহলের পাশাপাশি আসানসোল কর্পোরেশনের দুই এলাকায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গলায় এ দিন হতাশার সুর। রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ার কোনও কাউন্সিলরকে পদ না দেওয়ায় সেখানকার নেতারা খানিকটা ক্ষুব্ধও।
তবসসুম রাজনীতিতে আনকোরা হলেও তাঁর স্বামী মহম্মদ আসলাম টিঙ্কু কুলটির পরিচিত তৃণমূল নেতা। তাঁকে স্থানীয় বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসেবেই জানেন এলাকার মানুষজন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার টিঙ্কুরই প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে পড়ায় তাঁর স্ত্রীকে প্রার্থী করা হয়। তবসসুমকে ডেপুটি মেয়র করে তৃণমূল নেতৃত্ব এক ঢিলে তিন পাখি মেরেছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। কুলটির গত চার বারের পুরপ্রধান উজ্জ্বলবাবুকে এ বার প্রার্থী না করায় সেখানে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তা সামাল দিতে ওই এলাকার এক জনকে পদে বসানো প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া পুর কর্তৃপক্ষে মহিলা এবং সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিও রাখা প্রয়োজন ছিল। তবসসুম এক সঙ্গে তিনটি শর্তই পূরণ করায় তাঁকে দলীয় নেতৃত্ব বেছে নিয়েছেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর।
তবসসুম জানান, তিনি গত চার বছর ধরে তৃণমূলের নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এখন তিনি ধানবাদের একটি কলেজে কলা বিভাগে স্নাতক পাঠ্যক্রমে পড়াশোনা করছেন। তবসসুম বলেন, ‘‘আমি দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রতি কৃতজ্ঞ। ভাল করে কাজ করব।’’ আর কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বলবাবু শুধু বলেন, ‘‘নেত্রীর সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।’’
কুলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা খুশি হলেও রানিগঞ্জ-জামুড়িয়ায় ক্ষোভের আঁচ মিলেছে। এই দুই এলাকা থেকে নির্বাচিত কাউকে মেয়র, ডেপুটি মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়নি। এ বার জামুড়িয়ায় ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিতে জিতেছে তৃণমূল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার এক তৃণমূল নেতা এ দিন সন্ধ্যায় দাবি করেন, ‘‘আগে দলে কথা হয়েছিল, যেখান থেকে যেমন ফল হবে, সেই অনুযায়ী পদাধিকারী বাছা হবে। কিন্তু আমাদের এলাকায় এত ভাল সত্ত্বেও কাউকে পদ দেওয়া হল না। সিপিএম ভোটের আগে থেকে প্রচার করছে, পুরসভা সংযুক্তিকরণের নামে অন্য এলাকার উপরে আসানসোলের আধিপত্য বিস্তার শুরু হল। এ দিন আমাদের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের পরে তো মানুষ সে কথাই বিশ্বাস করবেন।’’

Advertisement

রানিগঞ্জে পুরসভা সংযুক্তিকরণের প্রতিবাদে আগেই অরাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এ দিন সেখানকার তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘গত বিধানসভা ভোটে রানিগঞ্জ পুর এলাকায় তৃণমূল তিন হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল। লোকসভা ভোটে বিজেপি এখানে অনেক বেশি ভোট পায়। সেখানে পুরভোটে তৃণমূল অনেক ভাল করেছে। তাই দলের কর্মীদের মনোবল বাড়াতে ও এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে কোনও পদাধিকারী দেওয়া উচিত ছিল।’’

এই পরিস্থিতিতে আসানসোলের সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘আমরা বলেছিলাম, রানিগঞ্জ বহু পুরনো পুরসভা। তার বা জামুড়িয়ার অবলুপ্তি ঘটানোর ফল ভাল হবে না। সংযুক্তিকরণের ফলে ক্ষতি হবে এই দুই এলাকার মানুষের। তবে তৃণমূল কোথা থেকে কাকে পদে বসাবে, সে নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।’’ জামুড়িয়ার সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের দাবি, ‘‘উন্নয়নের কাজ কুলটি থেকে কালিপাহাড়ি পর্যন্ত হবে, জামুড়িয়া-রানিগঞ্জ কিছু পাবে না— এ কথা আমরা আগেই বলেছি। তা যে ভিত্তিহীন নয়, এখন বোঝা যাচ্ছে।’’

Advertisement

আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য বলেন, ‘‘আরও অনেক পদ রয়েছে। রানিগঞ্জ-জামুড়িয়ার কাউন্সিলরদের সেই সব পদে ভাবা হবে। তাই এ সব নিয়ে ক্ষোভের কোনও কারণ নেই।’’ দলের জামুড়িয়ার নেতা পূর্ণশশী রায় বা রানিগঞ্জের নেতা কাঞ্চন তিওয়ারিরা বলেন, ‘‘দলনেত্রী যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ভালর জন্যই নিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন