জামিন অযোগ্য ধারাতেও কেন অধরা তাজামুল, ক্ষোভ

মালদহের সামসি কলেজে দুই শিক্ষিকাকে রেপ করিয়ে দেওয়ার হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত তাজামুল হক এখনও অধরা। শুক্রবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ওই নেতাকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দল থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ জানানোর তিন দিন বাদেও বহিষ্কৃত ওই নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়ায় সর্বস্তরেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে। পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না বলে দাবি করলেও তাকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী শুক্রবার তাকে বাইকে চেপে সামসি বাজারে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৫ ০৩:১০
Share:

মালদহের সামসি কলেজে দুই শিক্ষিকাকে রেপ করিয়ে দেওয়ার হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত তাজামুল হক এখনও অধরা। শুক্রবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ওই নেতাকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দল থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ জানানোর তিন দিন বাদেও বহিষ্কৃত ওই নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়ায় সর্বস্তরেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে। পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না বলে দাবি করলেও তাকে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী শুক্রবার তাকে বাইকে চেপে সামসি বাজারে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত তাজামুল গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কলেজের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ, শিক্ষক-শিক্ষিকা তো বটেই, তাজামুল গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে টিএমসিপির একাংশেও।

Advertisement

জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ার পরেও তাজামুলকে যে এলাকায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে তা অজানা নয় পুলিশেরও। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওকে এলাকায় দেখা গিয়েছে বলে পুলিশের কাছেও খবর ছিল। কিন্তু পুলিশ হানা দেওয়ার আগেই সে গা ঢাকা দেয়। পুলিশ ওকে ধরছে না তা ঠিক নয়। তাজামুলকে ধরতে নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আশা করছি খুব শীঘ্রই ওকে ধরা সম্ভব হবে।’’

গত বুধবার দুপুরে পরীক্ষার হলে গিয়ে দাদাগিরি করার সময় তাকে বেরিয়ে যেতে বলায় কলেজের দুই শিক্ষিকাকে তাজামুল রেপ করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি তাদের কলেজের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। পর দিন দুপুরে কলেজ কতৃপক্ষের তরফে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়। তার বিরুদ্ধে মহিলাকে কটূক্তি, অশ্লীল ভাষায় গালি ও সরকারি কাজে বাধাদানের (৫০৬, ৫০৪, ৩৫৩) মতো তিনটি ধারায় মামলা করা হয়। প্রথম দু’টি ধারা জামিনযোগ্য হলেও তৃতীয় ধারাটি জামিন অযোগ্য।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর শুক্রবার বিকেলে পরিচালন সমিতি বৈঠকে বসে তাকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। সংগঠনও তাকে বহিষ্কার করে। কিন্তু তার পরেও পুলিশ তাকে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় নানা মহলে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

সামসি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোজ ভোজ বলেন, ‘‘আমাদের তরফে যা করণীয় সব করা হয়েছে। বাকি কাজ তো পুলিশের করার কথা।’’

কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘তাজামুল কী করেছে সেটার গুরুত্ব বুঝলে পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থাকত না।’’

ছাত্র পরিষেদের জেলা সভাপতি বাবুল শেখ বলেন, ‘‘ছাত্র হয়ে শিক্ষিকার সঙ্গে ওর আচরণ শিক্ষাজগৎকেই কলঙ্কিত করেছে। তিন দিন পরেও এমন এক জনকে গ্রেফতার করতে না পারলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।’’ একই কথা বলেছেন এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি অমিত ঝাঁ-ও।

টিএমসিপির জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘সংগঠন ওই রকম ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয় না বলেই তাজামুলকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরাও ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরাও চাই পুলিশ ওকে দ্রুত ধরার ব্যবস্থা করুক।’’

তবে মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, ‘‘শুধু সামসি নয়, সর্বত্রই আইনশৃঙ্খলার হাল একই রকম। আমরা আর কয়েক দিন দেখব। তার পরেও ধরা না পড়লে আন্দোলনে নামব।’’

তাজামুলের বাবা লুত্ফুর রহমান এ দিনও বলেন, ‘‘আমার ছেলে এ কাজ করেছে বলে মনে করি না। ও বুধবার থেকেই বাড়িতে নেই। কোথায় আছে তাও জানি না।’’ তবে পরিবার সূত্রেই জানা যায়, মদ খাওয়া প্রায় অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল তাজামুলের। সে জন্য তাকে একাধিকবার বকাবকিও করা হয়েছিল। তারপর সে আর মদ খাবে না বলে দাবিও করেছিল। কিন্তু মদ খেয়ে দাদাগিরি করার সেই স্বভাব যে তার পাল্টায়নি তা তাজামুলের ঘনিষ্ঠদেরদের সূত্রেই জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন