বিতর্ককে সঙ্গী করেই মেয়াদ বৃদ্ধি সুরজিতের

কাগজে-কলমে আজ, রবিবারই তাঁর অবসরের দিন। কিন্তু তার পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় স্বপদে বহাল থাকছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।তবে আইপিএস অফিসারদের নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। সেই কারণে কোনও অফিসারকে অবসরের পরেও বহাল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন জরুরি বলে মত প্রশাসনের একাংশের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০১
Share:

কাগজে-কলমে আজ, রবিবারই তাঁর অবসরের দিন। কিন্তু তার পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় স্বপদে বহাল থাকছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।

Advertisement

তবে আইপিএস অফিসারদের নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। সেই কারণে কোনও অফিসারকে অবসরের পরেও বহাল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন জরুরি বলে মত প্রশাসনের একাংশের। কিন্তু সেই অনুমোদন শনিবার সন্ধে পর্যন্ত নবান্নে পৌঁছয়নি। তা সত্ত্বেও ডিজি পদে সুরজিৎবাবুকেই রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

১৯৮৫ ব্যাচের আইপিএস সুরজিৎবাবু রাজ্য পুলিশের প্রধান পদে বসেছেন এ বছরের জুন মাসে। চাকরিতে দু’বছর মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে আরও ১৭ মাস তাঁর ডিজি পদে থাকার কথা। নবান্ন সূত্র জানাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতেই সুরজিৎবাবুর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, পুলিশ প্রধানের মেয়াদ অন্তত দু’বছর হতে হবে। সেই আদেশ মেনেই ফাইলে সই করেছে মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

বিতর্কের শুরু সেখানেই। প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছেন, আইপিএস-রা সর্বভারতীয় ক্যাডারের অফিসার হওয়ায় তাঁদের চাকরির সব শর্ত নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের অধীন কেন্দ্রীয় পার্সোনেল এবং ট্রেনিং বিভাগ (ডিওপিটি)। কিন্তু নবান্ন সুরজিৎবাবুর চাকরি বাড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্রের অনুমোদন নেয়নি। প্রশাসনের ওই অংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়া ডিজি-র চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায় না। ফলে ডিজি পদে সুরজিৎবাবুর থেকে যাওয়া বেআইনি।

নবান্নের কর্তারা অবশ্য এতে অনিয়ম দেখছেন না। এক কর্তার কথায়, ‘‘চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর আগে অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার যে তাঁকে চাকরিতে বহাল রাখছে, সেই নির্দেশের প্রতিলিপিও দিল্লিতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দিল্লি কিছুই জানায়নি। সুতরাং ধরে নিতে হবে এতে তাদের আপত্তি নেই।’’ এর পরে কোনও দিন তারা আপত্তি জানালে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা যাবে— বলছেন নবান্নের ওই কর্তা।

কেন্দ্রীয় পার্সোনেল মন্ত্রকের এক কর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘কেবল মেয়াদ বৃদ্ধির নির্দেশের প্রতিলিপি দেখে ডিওপিটি কেন সিদ্ধান্ত নেবে? রাজ্য আমাদের কাছে কোনও প্রস্তাব পাঠায়নি। অনুমোদনও চায়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে পুরোপুরি অন্ধকারে।’’ তাঁর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে শনিবার সুরজিৎবাবুর সঙ্গে একাধিক বার যোগাযেগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।

পার্সোনেল মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ক্যাডারের অফিসারদের অবসর ও মৃত্যুজনিত বিধিতে ডিজি-র পদে মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ নেই। নিতান্ত প্রয়োজনে মুখ্যসচিব ও রাজ্যের অর্থসচিবের চাকরির মেয়াদ ছ’মাস বাড়ানো পারে রাজ্য। অতীতে এ রাজ্যেও তেমন ঘটনা ঘটেছে। প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কালে মমতাই তৎকালীন মুখ্যসচিব সমর ঘোষের চাকরির মেয়াদ ছ’মাস বাড়িয়েছিলেন। নিয়ম মেনেই। কিন্তু ডিজি-র ক্ষেত্রে এমনটা করার আইনি সুযোগ নেই। ফলে ডিজি-কে একপ্রকার জোর করেই স্বপদে রেখে দেওয়া হল বলে মনে করছেন রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন