সার ঢক্কানিনাদ, সীমান্তে হামলা বিদেশি দুষ্কৃতীর

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পরে সীমান্তের এ পারে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ-প্রশাসনের উচ্চ মহল থেকে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সেই দাবি যে কত ঠুনকো, সোমবার সকালে পেট্রাপোল সীমান্তে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হামলা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৭
Share:

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পরে সীমান্তের এ পারে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ-প্রশাসনের উচ্চ মহল থেকে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সেই দাবি যে কত ঠুনকো, সোমবার সকালে পেট্রাপোল সীমান্তে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হামলা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

Advertisement

এ দিন সকালে বন্দর এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা লুঠের চেষ্টা করে সশস্ত্র দুই বাংলাদেশি দুষ্কৃতী। গুলিও চালায়। আশপাশের লোকজনই তাড়া করে তাদের ধরে ফেলেন।

গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত ব্যবসায়ী মহল। পেট্রাপোল এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ছোটখাটো দুষ্কৃতীরাই যদি সীমান্ত পেরিয়ে এসে এমন তাণ্ডব চালায়, তা হলে জঙ্গিদের ঢুকে পড়াটা তো কোনও ব্যাপারই নয়!’’ ব্যবসায়ীদের আরও বক্তব্য, যেখানে ঘটনা ঘটেছে, তা কোনও প্রত্যন্ত এলাকা নয়। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্ব। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোঁকর আরও বেআব্রু হয়েছে।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের কাছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের উৎপাত অবশ্য নতুন কিছু নয়। পেট্রাপোল, গাইঘাটা, আংরাইল, কুলিয়া, রণঘাট স্বরূপনগর, পানিতর সীমান্তে আগেও বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে। খুন-জখমের ঘটনা ঘটেছে। সীমান্তের কাঁটাতারহীন বহু এলাকায় রাত নামলেই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়ে বলে স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা।

জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশে পেট্রাপোলে নতুন থানা তৈরির প্রস্তাব আছে। শীঘ্রই তা চালু করা হবে। অন্য দিকে বিএসএফ সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা আরও কড়া করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএসএফের আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) সন্দীপ সালঙ্কে।

কী হয়েছিল এ দিন?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সকালে তখন প্রায় পৌনে ৭টা। বন্দরের দিকে আসছিলেন স্বদেশ সরকার। পেট্রাপোল বন্দরেই তাঁর বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসা। সঙ্গে ছিল কয়েক লক্ষ টাকা।

বন্দরের কাছেই বাড়ি স্বদেশবাবুর। তাঁর অভিযোগ, পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে বেরোতেই এক দুষ্কৃতী তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ চায়। স্বদেশবাবু দমে না গিয়ে ধাক্কা মেরে ওই দুষ্কৃতীর হাত থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে দেন। পাশে দাঁড়ানো আর একজন বড় হাঁসুয়া নিয়ে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে স্বদেশবাবু ধস্তাধস্তি বাধে। একটা সময়ে আর যুঝতে পারেননি স্বদেশবাবু। তাঁকে কাবু করে টাকার ব্যাগ নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।

এ দিকে, ওই ব্যবসায়ীর চিৎকারে ততক্ষণে ছুটে এসেছেন পড়শিরা। শ’খানেক মানুষের তাড়া খেয়ে দুষ্কতীরা আশ্রয় নেয় কিছুটা দূরের পাটখেতে। সেখান থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

কিন্তু ক্ষিপ্ত জনতার সামনে বেশিক্ষণ জারিজুরি খাটেনি। লোকজন তাদের ধরে ফেলে মারধর দেয়। খবর পেয়ে এলাকায় কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানেরা গিয়ে দু’জনকে পাকড়াও করে ক্যাম্পে আনে। পরে বনগাঁ থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম সুজান মিয়া ও মহম্মদ তুষার হুসেন। বাড়ি বাংলাদেশের বেনাপোল পোর্ট থানার ভবারবীর এলাকায়। তাদের কাছ থেকে বিএসএফ একটি ৭.৬২ এমএম দেশি পিস্তল ও হাঁসুয়া উদ্ধার করেছে। পুলিশের দাবি, জেরায় দুই যুবক জানিয়েছে, চোরাপথে এ দিনই ভোরে এ দেশে ঢুকেছিল দু’জন। আশ্রয় নিয়েছিল এক পরিচিতের বাড়িতে। পেট্রোপোলের এক যুবক তাদের ছিনতাইয়ের বরাত দিয়েছিল। পুলিশ ওই যুবকের খোঁজ করছে। তবে উদ্ধার হয়েছে খোয়া যাওয়া টাকা।

স্বদেশবাবু বলেন, ‘‘অনেক নগদ টাকা নিয়ে কারবার করতে হয়। কিন্তু এখন তো দেখছি, প্রাণ হাতে করে চলতে হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement