সন্ত্রাসে যোগ নেই ধর্মের, বার্তা মহরম কমিটির

সন্ত্রাসবাদের দেশ হয় না, ধর্ম হয় না—নিজেদের কসরতের মাধ্যমে এই বার্তা দেওয়ারই চেষ্টা করেছে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার একটি মহরম কমিটি।বুধবার বিকেলে মহরম উপলক্ষে লাঠি খেলা, তরোয়াল নিয়ে কসরতের প্রদর্শন হয়েছে রঘুনাথপুরের হদলা গ্রামে। কিন্তু, সেই কসরতের মধ্যেও ছিল থিম।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০০
Share:

সন্ত্রাসবাদের দেশ হয় না, ধর্ম হয় না—নিজেদের কসরতের মাধ্যমে এই বার্তা দেওয়ারই চেষ্টা করেছে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার একটি মহরম কমিটি।

Advertisement

বুধবার বিকেলে মহরম উপলক্ষে লাঠি খেলা, তরোয়াল নিয়ে কসরতের প্রদর্শন হয়েছে রঘুনাথপুরের হদলা গ্রামে। কিন্তু, সেই কসরতের মধ্যেও ছিল থিম। এক মন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা তুলছেন। ঠিক সেই সময় জঙ্গিরা হামলা চালায়। নিরাপত্তারক্ষীদের মেরে

মন্ত্রীকে অপহরণ করে তারা। মুক্তিপণও দাবি করে জঙ্গিরা। কিন্তু মুক্তিপণ দিতে যাওয়া ব্যক্তিকেও মেরে ফেলা হয়। শেষে ভারতীয় সেনা জঙ্গিদের নিকেশ করে ওই

Advertisement

মন্ত্রীকে উদ্ধার করে। সম্প্রতি জলপাইগুড়ি শহরে মহরম কমিটির উদ্যোক্তারা সম্প্রীতির নজির রেখেছিলেন দুর্গাপুজোর ভাসান ও মহরমের মহড়া একই সঙ্গে হওয়ার আর্জি জানিয়ে। এ বার রঘুনাথপুরের কমিটি দিল সন্ত্রাস-বিরোধী বার্তা।

সেনার গুলিতে হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই তেতে রয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা।

এর পরেই উরির সেনাঘাঁটিতে সাম্প্রতিক জঙ্গি হানা এবং তৎপরবর্তী ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে এখন গোটা দেশ সরগরম। বিষয়টি নিয়ে দিল্লির রাজনীতিতে তরজাও চলছে জোর। এমন এক আবহে রঘুনাথপুরের ওই মহরম কমিটির উদ্যোগ ব্যতিক্রমী বলে মনে করছে প্রশাসনও। পুরুলিয়ার এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, ‘‘জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে সন্ত্রাসবাদকে বিশেষ ধর্ম বা সম্প্রদায়ের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু, সেটা যে ভ্রান্ত ধারণা, তা ছোট পরিসরে হলেও সাধারণ মানুষের মন থেকে দূর করতে সাহায্য করবে হদলা গ্রামের মহরম কমিটির এই উদ্যোগ।’’

হদলা মহরম কমিটির তরফে শহর আলি, সঈদ আনসারিরাও জানাচ্ছেন, মহরমের মাধ্যমে তাঁরা বিশ্ব জুড়ে বেড়ে চলা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে চেয়েছেন। ওই গ্রামের মহরমে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক উমাপদ বাউরি। তাঁর কথায়, ‘‘সন্ত্রাসবাদ রুখতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। উদ্যোক্তারা ওই বার্তাই দিতে চেয়েছেন। বর্তমান সময়ে যা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।” উদ্যোক্তাদের তরফে আলিমুদ্দিন আনসারি জানান, সাজ পোশাকে বিস্তর খরচ করা সম্ভব ছিল না। তাই ফুটবলের জার্সি পরে এলাকার যুবকেরাই সেজেছিলেন ভারতীয় সেনা জওয়ান। সংলাপ এবং মাইকে দেশাত্মবোধক হিন্দি গানের মাধ্যমে জঙ্গি দমনের থিম তুলে ধরেন কসরতের কুশীলবেরা। শেষ হয় জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে।

শহর, সঈদরা বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে সন্ত্রাসের একটা আবহ হয়ে রয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদীদের ধর্ম হয় না বা দেশ হয় না। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগই নেই। আমরা সেই বার্তাটাই দিতে চেয়েছি। এলাকার যুবকেরা বেশ কিছুদিন ধরেই এই পরিকল্পনা করছিল। মহরমের সময় খেলা দেখতে আশপাশের গ্রাম থেকেও অনেকে আসেন। তাই এই সময়টাই আমরা বেছে নিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন