Calcutta High Court

TET and SSC recruitment case: পিন ধরতে পারল না তো কিং পিন! সিবিআইকে খোঁচা সংস্থারই প্রাক্তন যুগ্ম অধিকর্তা উপেন বিশ্বাসের

উপেনের সুপারিশের পরেই আদালতের নির্দেশ, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের দুই মামলার তদন্তের জন্য একটি সিট গঠন করতে হবে সিবিআইকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২২ ১৭:১৪
Share:

সিবিআই তদন্ত নিয়ে উপেনের পরামর্শ মানল আদালত নিজস্ব চিত্র।

স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে কার্যত ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার তদন্তে ‘ঢিলেমি’ নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে খোঁচা দিতে ছাড়লেন না প্রাক্তন সিবিআই অধিকর্তা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন্দ্রনাথ (উপেন) বিশ্বাস। দুর্নীতির কারিগরদের নাম প্রকাশ্যে আসা সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করায় সিবিআইকে খোঁচা দিয়ে উপেন বলেন, ‘‘সিবিআই এখনও পর্যন্ত ‘পিন’কেই হেফাজতে নিতে পারল না। আর ‘কিং পিন’!’’ এর পরেই দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই সিট গঠনের সুপারিশ করেন উপেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই সিবিআইয়ের ওই বিশেষ দলটি শুধু প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দু’টি মামলার তদন্ত করবে। প্রাক্তন সিবিআই অধিকর্তা উপেনের এই সুপারিশ গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে সিট গঠনের নির্দেশ দিল আদালত।’’

Advertisement

মঙ্গলবার সিবিআই তদন্ত নিয়ে বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করার পর বুধবার আদালতে সিবিআই জানায়, শুধু মাত্র স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত করতেই দিল্লি থেকে যুগ্ম অধিকর্তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। এর পরেও সিবিআই তদন্তে মূল অপরাধীরা ধরা পড়বেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিচারপতি। এর পরেই এই মামলায় আর এক পক্ষ উপেনের উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনি খুবই সম্মাননীয় ব্যক্তি এই দেশে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না, ‘রঞ্জন’কে আপনি পুলিশের হাতে তুলে দিলেন না কেন? আপনি তাঁকে ‘সৎ’ বলছেন! সে তো এখন বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে পারে।’’

উত্তরে উপেন বলেন, ‘‘সব কিছুর পিছনে একটা কারণ থাকে। সে সময় আমি অসহায় ছিলাম। সিবিআইয়ের প্রাক্তন পদে থাকলেও, আমার কথা থানার কনস্টেবলও শুনত না। দলে থাকার সময় জেলায় সবার দায়িত্ব ভাগ করা থাকত। সেখানে আমি কী করতে পারি? ‘রঞ্জন’ আমার একটা ফ্যান্টাসি ছিল। সবাই জানে, রঞ্জন কে।’’

Advertisement

বছরখানেক আগে ‘সৎ রঞ্জন’ নামে একটি ভিডিয়ো ইউটিউবে প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন। ওই ভিডিয়োয় তিনি দাবি করেছিলেন, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার জনৈক রঞ্জন টাকা নিয়ে বহু লোককে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। গোপনীয়তার স্বার্থে ওই সময় রঞ্জনের আসল নাম প্রকাশ্যে আনেননি উপেন। ওই রঞ্জনের আসল নাম যে ‘চন্দন মণ্ডল’, তা সম্প্রতি আদালতে শুনানি চলাকালীন জানা গিয়েছে। যদিও তাঁর ‘রঞ্জন’ই চন্দন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে উপেন বলেছেন, ‘‘বলব না। আমার নায়ক বা খলনায়ক রঞ্জনই। ওঁর পেটে অনেক তথ্য রয়েছে।’’ যদিও বুধবার আদালতে দাঁড়িয়ে উপেন স্বীকার করে নেন রঞ্জনই আসলে চন্দন মণ্ডল।

দুর্নীতির মামলার শুনানিতে উপেনের এই ভিডিয়োর প্রসঙ্গ ওঠার পরেই তাঁকে এই মামলার পক্ষ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই উপেনই বুধবার সিবিআই তদন্তের গতি বাড়াতে কিছু পরামর্শ দেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের জয়েন্ট অফিসার (কলকাতা শাখা)-সহ অন্য আধিকারিকদের নিয়ে শুধু মাত্র এই মামলার জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হোক। এই সিটের সব সদস্য শুধু এই মামলারই তদন্ত করবেন। তাঁরা অন্য কোনও মামলায় ব্যস্ত হতে পারবেন না। আদালতের নজরদারিতে তদন্ত করা প্রয়োজন। তা হলে প্রধানমন্ত্রীও প্রভাব খাটাতে পারবেন না। এই দুর্নীতির তদন্তে আমি সিবিআইয়ের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করব।’’

উপেনের এই সুপারিশের পরেই আদালতের নির্দেশ, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের দুই মামলার তদন্তের জন্য একটি সিট গঠন করতে হবে সিবিআইকে। সিটের সদস্যদের নাম আদালতের কাছে জানাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই তদন্ত চলাকালীন সিটের সদস্যরা অন্য কোনও মামলার তদন্ত করতে পারবেন না। এমনকি তাঁরা আদালতের অনুমতি ছাড়া এই মামলা ছেড়ে যেতেও পারবেন না। পুরো মামলার তদন্ত হবে আদালতের নজরদারিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন